A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজঃ মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না…ও বন্ধু। হ্যাঁ সমাজের কিছু মানুষ এখনো রয়েছে যারা বিপদে নিজের সবটুকু দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ায়, সাহায্য-সহানুভূতির মাঝে অসহায়, দুঃস্থ মানুষের পাশে সমাজের অনেকেই দাঁড়ায়। বিশেষ করে ভয়াবহ কোভিড-১৯ (করোনা ভাইরাস) সংক্রমণের সংকট কালীন সময়ে নীরবে পাশে দাড়িয়েছেন অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। সহায়তা করছেন অসহায়, দুঃস্থ, প্রতিবন্ধী, কর্মহীন, ঘরবন্দি মানুষদের।

এমনই একজন মানবতার সেবক হলেন সিদ্ধিরগঞ্জের বাতানপাড়া ক্যানেলপাড় এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ রাসেল। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীদল বিএনপির সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শাখার সহ-সভাপতি রওশন আলীর ছেলে। এছাড়া এই প্রতিবাদী যুবক জুলাই অভূত্থানের এক বীর সেনানী হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে সৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে তাকে নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল সতের জুলাই বাতানপাড়া ক্যানেল পাড় সংলগ্ন রহিমা ভিলা তার নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তারপরও তিনি দমে যান নি। জেলে বসেই সরকার পতনের মাস্টারমাইন্ডের কাজটি করেছেন।

নির্দেশ দিয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাংরোড এলাকার হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। তার নির্দেশে এক নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক আরিফ হোসেন ও নূর মোহাম্মদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় অবস্থান নেন। এসময় সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও তার ছেলে অয়ন ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনী ও আওয়ামী সরকারের পেটুয়াবাহিনীর সদস্য পুলিশ নির্বিচারে তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় বিএনপি নেতা আরিফ হোসেন ও নূর মোহাম্মদ মারাত্মকভাবে আহত হন। আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে নারায়নগঞ্জ দুশো সজ্জা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মিজমিজি বাতানপাড়া এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাগেছে, সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে বহুমুখী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৬ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সমন্বয়ে আবুল কালাম আজাদ রাসেল প্রতিষ্ঠা করেন অ-রাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন অরবিট সমাজ কল্যাণ সংস্থা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটি সেই সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জসহ আশপাশ এলাকার অধিকাংশ মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছিলো। প্রায় একশো সদস্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজই ছিলো সমাজের অসহায়, নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষের সহযোগীতায় পাশে দাঁড়ানো। অল্প দিনেই এলাকার মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছে অরবিট সমাজ কল্যাণ সংস্থা এবং এর প্রতিষ্ঠাতা সাদা মনের মানুষ আবুল কালাম আজাদ রাসেল।

অরবিট সমাজ কল্যাণ সংস্থার সেচ্ছাসেবকরা সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি প্রামে অসহায় ও মুমূর্ষু ব্যক্তির জন্য তাৎক্ষণিক সেবা প্রদান করে থাকে। তারা দিন-রাত ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও সর্বদা প্রস্তুত থাকে। তাদের একটি হট লাইন নম্বর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। যে নম্বরটিতে জরুরী প্রয়োজনে ফোন আসলেই ছুটে যান স্বেচ্ছাসেবকরা। বিশেষ করে রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচানোর কাজটি করে থাকেন তারা।

মিজমিজ বাতান পাড়া এলাকার আবু সাইদ, শামছুর রহমান, হৈমন্তী সরকার, মনির হাসান ভূঁইয়া, ফেরদৌসী আক্তার, ফারহানা যুথীসহ অনেকেই অরবিট সমাজ কল্যাণ সংস্থার সেবা প্রাপ্তির কথা বলতে গিয়ে আবেগে আপ্রুত হয়ে পড়েন। তারা বলেন, এই সংগঠনটির মূল কর্ণধার আবুল কালাম আজাদ রাসেলসহ স্বেচ্ছাসেবকরা সমস্যা শোনামাত্রই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। তবে ২০২১ সালে সংগঠনির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এলাকার অসহায় নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষেরা বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন এত সুন্দর একটি সামাজিক সংগঠন যারা বন্ধ করে দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের হাজার হাজার মানুষের পেটে লাথি মেরেছে তাদের বিচার দাবি করেছেন তারা।

অরবিট সমাজ কল্যান সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শুক্কুর আলী জানান, আমরা অরবিট সমাজ কল্যাণ সংস্থা সুন্দরভাবে কাজ করে সমাজের মানুষের সেবায় এগিয়ে যেতে ছিলাম। সমাজের সকল শ্রেনী প্রেশার মানুষের মাঝে অরবিট সমাজ কল্যাণ সংস্থার সেবামূলক কার্যক্রম পৌছে গিয়েছিলো। তৎকালীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়া ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সেচ্ছাসেবকলীগের নেতা আমিনুল ইসলাম রাজু এবং আওয়ামী যুবলীগ নেতা মুন্না মিয়া ঈর্ষান্নিত হয়ে আমাদের সংগঠনির কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। একের পর এক বাধার কারণে আমরা আর সংগঠনটির কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারিনি। ইনশাল্লাহ দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে দেশ। এবার আমরা আবারো নতুন করে আমাদের অরবিট সমাজ কল্যাণ সংস্থার কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এক নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি ওলিউল্লাহ হাওলাদার জানান, আবুল কালাম আজাদের বাবা রওশন আলী চেয়ারম্যান তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি ও এক নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আওয়ামীলীগ সরকারের রোষানলে পড়ে তার বিরোদ্ধে আঠাশটি রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন দীর্ঘ সময়। তিনি বলেন, রওশন আলীর পুরো পরিবারটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। গেল সতের বছরে জেল জুলুম হামলা মামলায় এই পরিবারের ত্যাগ ভুলে যাওয়ার মত নয়।

অন্যদিকে এক নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি মফিজুল ইসলাম জানান, অরবিট সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ রাসেলের পিতা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের আস্থাভাজন ও বিশ^স্ত হাতিয়ার, সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি রওশন আলী ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। তিনি বিএনপির একজন পরীক্ষিত নেতা হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত।

অরবিট সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম আজাদ রাসেল জানান, ‘সৃষ্টির সেবার মাঝে ¯্রষ্টাকে খুঁজি’ এই স্লোগানকে সামনে নিয়ে নিজের বিবেক তাড়িত হয়ে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত করি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অরবিট সমাজ কল্যাণ সংস্থা। সংগঠনের আওতায় প্রায় একশো স্বেচ্ছাসেবক এ মহতী কাজ করে চলেছেন। ইতিমধ্যে প্রায় কয়েক হাজার অসহায় মানুষকে বিভিন্ন ধরণের সেবা প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ করে ভয়াবহ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সংকট কালীন সময়ের শুরু থেকে অসহায়, দুঃস্থ, কর্মহীন, শিশু, প্রতিবন্ধী এবং ঘরবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়ানো, কখনো নিজের উদ্যোগে পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, নগদ টাকা, শিশু খাদ্য, রান্না করা খাবার, চাল, আটা, আলু’র মতো খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরণের সহায়তায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ফ্রি অক্সিজেন ও এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান কার্যক্রমে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে সংগঠনটি। এই সেবা দ্বারা মহৎ মানুষের আত্মার শুদ্ধি, তৃপ্তি লাভ, ইহকাল ও পরকালের বিজয় হওয়ার প্রত্যয় নিয়ে দিন-রাত ছুটে চলেছেন অরবিট সমাজ কল্যাণ সংস্থার কর্মীরা।

 

তিনি আরও বলেন, অরবিট সমাজ কল্যাণ সংস্থার সরকারি অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়া চলছে। অনুমোদন পেলে সেবাগুলো আরও গতিশীল হবে। এ সময় তিনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে উজাড় করে দেয়ার পাশাপাশি সাধ্য অনুযায়ী তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে আমার ছোট বোন জামাই এক নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি অলিউল্লাহ হাওলাদার ছোট চাচা ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহীম ও আমাকেসহ তিনজনকে জুলাইয়ের সতের তারিখ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে দেশ নতুন করে স্বাধীন হওয়ার পর ছয় আগষ্ট অন্তবর্তীকালীন সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করলে আমরা জেল থেকে ছাড়া পাই। দেশ স্বাধীন না হলে হয়তো আজও জেলে পচেই আমাদের মরতে হতো। বিএনপির নামধারী নেতাকর্মী আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। যাতে আমার ও আমার পরিবারের সুনাম ক্ষুন্ন হয়। এসকল অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য আহবান জানান তিনি।

 

আগের সংবাদ দেখুনসোনারগাঁওয়ে যুবদলের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত
পরের সংবাদ দেখুনশামীম ওসমানসহ ৮৯ জনের নামে মামলা