
নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় মাদক সম্রাজ্ঞী একাধিক মামলার আসামী আলমগীর হোসেনের স্ত্রী শাহিনূর আক্তার ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। মাদক ব্যবসার পাশাপাশি মানুষকে ব্ল্যাকমেইলিং করে মোটা অংকের টাকা আদায়, মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকেন মাদক সমাজ্ঞী। এলাকার অনেকেই এই চক্রের চক্রান্তে নি:স্ব হয়ে গেছেন। আলমগীর ও তার স্ত্রীর হাত থেকে রক্ষা পেতে র্যাব ও পুলিশের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এই চক্রটি প্রশাসন গ্রেফতার করতে পারলে তাদের কাছ থেকে অনেকে অজানা অপরাধের তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন এলাকাবাসীরা।
এলাকাবাসীরা জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকার মৃত নেওয়াজ আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন বর্তমানে ওই এলাকার বায়তুন নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পিছনের গলির মৃত সাত্তার কাজীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তিনি বিএনপি ও জামায়াতের সক্রিয় কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
সে তার স্ত্রী মাদক সম্রাজ্ঞী শাহিনূর আক্তারকে দিয়ে ডেমরা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসা করে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে ডেমরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানাসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মাদকের মামলা রয়েছে। কেউ তাদের মাদক ব্যবসা বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও ব্ল্যাকমেইলিং করে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেন আলমগীর ও তার স্ত্রী শাহিনূর আক্তার। তাদের চক্রান্তের শিকার হন একই এলাকার সামসুদ্দিন সামসু নামে এক ব্যক্তি।
তাকে কৌশলে নিজের ঘরে আটকে রেখে মোটা অংকের টাকা দাবি কারেন মাদক সম্রাজ্ঞী শাহিনূর আক্তার। সনমানের ভয়ে ভূক্তভোগী সামসুদ্দিন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তার হাত থেকে মুক্তি পায়। তিনি এখন নি:স্ব প্রায়।
এ বিষয়ে সামসুদ্দিন সামসু জানান, আমাকে বিপদে ফেলে নি:স্ব করে দিয়েছেন ওই মহিলা। আলমগীর ও তার স্ত্রীর ব্ল্যাকমেইলিং এর শিকার হয়েছেন অনেকেই। যাকে তারা ধরেছেন তাকেই পথের ফকির বানিয়েছেন। আমার অনেক ক্ষতি সাধন হয়েছি। অবিলম্বে এই মক্ষীরানী ও তার শেল্টারদাতা আলমগীরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
আর যাতে করো জীবন নষ্ট না করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই ভুক্তভোগী সামসুদ্দিন সামসু।
ভুক্তভোগী সেলিনা আক্তার জানান, আমার স্বামীকে ব্ল্যাকমেইলিং করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় মক্ষীরানী শাহিনূর আক্তার। তার ও তার স্বামী আলমগীর হোসেনের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিচার শালিশী করেও তাদের হাত থেকে রক্ষা পাই নি ।
আলী মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, আমার ছেলের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে মাদক সম্রাজ্ঞী শাহিনূর আক্তার। আমি এর ন্যায় বিচায় চাই।
কামাল উদ্দিন নামে এক ভুক্তভোগী জানান, এই মাদক সম্রাজ্ঞী ও আলমগীরের ফাঁদে পা দিয়ে আমি নি:স্ব হয়ে গেছি। আমার পরিবার ও আমি প্রচুর বিপদে পড়েছি। আমার কাছ থেকে বিপুল পরিমান টাকা খেয়েছে আলমগীর ও তার স্ত্রী শাহিনুর আক্তার।
আকলিমা খাতুন নামে সানারপাড় এলাকার এক বাসিন্দা জানান, মাদকের জোয়াড়ে ভাসছে সানারপাড় এলাকা। এই এলাকায় মাদকের ডিলার আলমগীর ও তার স্ত্রী শাহিনুর আক্তার। তাদের কারণে স্কুল কলেজে পড়–য়া উঠতি বয়সের কোমলমতি সন্তানেরা আজ মাদকের ধাবায় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
সানারপাড় থেকে এই দুই মাদক সম্রাজ্ঞীকে গ্রেফতার করলে সানারপাড় এলাকায় মাদক থেকে মুক্তি পাবে কোমলমতি সন্তানেরা।
সানারপাড় এলাকার ভুক্তভোগী বিশিষ্ট দানবির, সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী মৃত আব্দুল কাদির মোল্লার ছেলে মহিউদ্দিন মোল্লা এই প্রতিবেদককে জানান, আমি সানারপাড় জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার সাধারণ সম্পাদক, সানারপাড় বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদ ও বায়তুল জান্নাত জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রায় ১৮ বছর যাবৎ সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছি।
পাশাপাশি স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাটসহ এলাকার উন্নয়ণে সবসময় কাজ করছি। এছাড়া সামাজিক ও রাজণৈতিক কর্মকান্ডে সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখি। সম্প্রতি আমি মোসায়েব সবুজের কাছ থেকে আমার ছেলে মেহিদী হাসানের নামে একটি জমির ক্রয় করি।
জমির মালিকানা দাবি করে মাদক সম্রাট আলমগীর হোসেন ও তার স্ত্রী মক্ষিরানী শাহিনুর আক্তার আমার বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে হয়রানি করার চেষ্টা করছেন। এতে আমার সামাজিক, পারিবারিক ও রাজণৈতিক সুনাম চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। অনতিবিলম্বে তদন্তসাপেক্ষে এসকল মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে বিএনপি জামায়াতের জ্বালাও পোড়াও নাশকতার একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া সে ও তার স্ত্রী শাহিনুর আক্তার এলাকায় চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে শিগ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে:কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, জামায়াত শিবির ও বিএনপি এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে কখনো আপোশ করা যাবে না। তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে।