
নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ:
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে গত রোববার রাতে ভাঙচুর, টায়ারে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বিএনপির ৪৮ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় স্থানীয় খাবারের হোটেলের ব্যবসায়ীসহ চারজনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
তবে সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই দিন এশার নামাজের পর হঠাৎ সাত-আটজন যুবক সড়কে টায়ারে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ও কয়েকটি কাভার্ড ভ্যানের কাচ ভাঙচুর করে পালিয়ে যান। তাঁদের মুখে মাস্ক পরা ছিল। দুষ্কৃতকারীদের তাঁরা কেউ চিনতে পারেননি বলে পুলিশের কাছে সাক্ষ্যও দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ওই ঘটনায় পুলিশ বিএনপির ৪৮ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলাটি করে।
সিদ্ধিরগঞ্জের হাজী মাদ্রাসা রোড এলাকায় অবস্থিত নিউ আল মদিনা হোটেলের মালিক হুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানান। তিনি পুলিশের দায়ের করা নাশকতার মামলার এজাহারের ৩ নম্বর সাক্ষী। এক বছর ধরে তিনি সেখানে খাবারের হোটেলের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। রোববার তাঁর হোটেলের সামনের সড়কে টায়ারে আগুন ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের হাজী মাদ্রাসা সড়কের মোড়ে মৌচাক সড়কে গাড়ির কাচের টুকরা ভাঙা পড়ে আছে। নিউ আল মদিনা হোটেলের টিনের ঝাপ ভাঙা দেখা গেছে। স্থানীয় চায়ের দোকানি বিল্লাল হোসেন, আসবাবপত্র ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান ঘটনার সময় উপস্থিত থাকলেও তাঁরা কেউ দুষ্কৃতকারীদের চিনতে পারেননি। তাঁরা জানান, বিএনপি বিকেলে কর্মসূচি করেছে, ঘটনা ঘটেছে রাত সাড়ে আটটা-পৌনে নয়টার দিকে।
মামলাটি করা হয়েছে সোমবার দিবাগত রাতে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান বাদী হয়ে থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেনকে। অপর আসামিরা সবাই বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
পুলিশ এজাহারে ৩টি বিস্ফোরিত ককটেলের অংশবিশেষ, ১২টি চার ফুট লম্বা বাঁশের লাঠি, ৫টি তিন ফুট লম্বা লোহার রড, ১টি আগুনে পোড়া টায়ার ও ভাঙা টুকরা কাচ জব্দ তালিকায় দেখিয়েছে।
মামলার সাক্ষী হুমায়ূন কবির প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এশার নামাজ শেষে হোটেলে আসেন। এ সময় হঠাৎ একটি সাদা প্রাইভেট কার ও একটি কালো মোটরসাইকেলে ৫-৭ জন তরুণ তাঁর দোকানের সামনে এসে নামেন। তাঁদের প্রত্যেকের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছর। প্রত্যেকের মুখে মাস্ক পরা ছিল। প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে দুটি টায়ার বের করে সড়কে আগুন দেন তাঁরা। বাঁশ দিয়ে এক যুবক তাঁর দোকানের ঝাপে আঘাত করলে তিনি ভয়ে হোটেলের একটি ঝাপ ফেলে সরে যান। তাঁরা তিন-চারটি কাভার্ড ভ্যানের গ্লাস ভাঙচুর করেন। এ সময় পাশের জাহাঙ্গীরের চা-দোকানে পেট্রল ছুড়ে মারলে চুলায় আগুন ধরে যায়। তাঁরা দ্রুত পাসপোর্ট কার্যালয়ের দিকে চলে যান। ঘটনার পাঁচ মিনিটের মধ্যে পুলিশ এসে উপস্থিত হয়। হুমায়ূন কবির বলেন, ‘আমরা দুষ্কৃতকারীদের কাউকে চিনি নাই। নামও বলতে পারি নাই। পুলিশ কীভাবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করে মামলা করেছে, তা আমাদের জানা নেই।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী চা-দোকানি জাহাঙ্গীরের দোকান বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যাংক কলোনি এলাকার বাড়িতে গেলে জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ করে অল্প বয়সী কয়েকজন ছেলে টায়ারে আগুন জ্বালায়, কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। তাঁকে উদ্দেশ করে গালি দিয়ে দোকান বন্ধ করতে বলে। এ কথা বলেই তাঁর দোকানে পেট্রল ছুড়ে মারে। এতে দোকানে আগুন ধরে যায়। তিনি লাফ দিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে যান। আগুনে তাঁর দোকানের দুই কার্টন বিস্কুট, চানাচুর ও অনেক চিপসের প্যাকেট পুড়ে যায়। আগুন নেভাতে গিয়ে তাঁর ডান হাতের আঙুল পুড়ে যায়। তিনি বলেন, মুহূর্তের মধ্যে ঘটনা। হামলাকারীদের চেনা যায়নি। মুখে মাস্ক পরা ছিল। কোনো মিছিল ও স্লোগান দিতে দেখেননি তাঁরা।
মামলার বাদী এসআই মশিউর রহমান এজাহারে উল্লেখ করেন, সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে খবর পান, নিউ আল মদিনা হোটেলের সামনে সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী চিকিৎসার জন্য মুক্তির দাবিতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মিছিল করে সড়ক অবরোধ করেছেন। তাঁরা টায়ারে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে তিনিসহ পুলিশের দল ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই আসামিরা পালিয়ে যান। তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত জব্দ করেন এবং উপস্থিত সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেন।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটি নিশ্চিত হলেন কীভাবে, প্রশ্নে এসআই মশিউর বলেন, ‘আপনি আইসেন। আসলে সামনাসামনি কথা বলব।’ এ কথা বলেই ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর তাঁকে কয়েক দফা ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করতে পুলিশ মিথ্যা মামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ওই দিন বিকেলে বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে। পুলিশের মদদে সরকারি দলের লোকজন ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের আসামি করে ‘গায়েবি’ মামলা করেছে।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: প্রথম আলো