
নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সদস্য পদে প্রার্থী হতে রুপগঞ্জের চঁনপাড়া পূনর্বাসন কেন্দ্রে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। যেকোন সময়ে প্রাণহানিসহ বড় ধরনের ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসীরা।প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ওই এলাকার আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুরে ফের অশান্ত হয়ে উঠে দু’পক্ষের সন্ত্রাসীরা। প্রকাশ্যে আগ্নেআস্ত্র হাতে নিয়ে এক পক্ষ অন্যপক্ষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। শুরু হয় গুলি বর্ষণ। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২৫জন আহত হয়েছেন।
একজন গুলিবৃদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বজলুর মৃত্যুর ফলে উপ-নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। দুই গ্রুপের মধ্যে বারবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) ব্যর্থ হচ্ছেন বলে মন্তব্য করছেন এলাকাবাসীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকায় একক আধিপত্য, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে নানা অপরাধের নিয়ন্ত্রণ করতো প্রয়াত ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বজলু।
বজলুর রহমান মারা যাওয়ার পর থেকেই চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকার আধিপত্য নিজেদের দখলে নিতে কায়েতপাড়া ইউপির সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান সেলিনা আক্তার রিতা গ্রুপ, জয়নাল গ্রুপ, ইয়াছমিন গ্রুপ, রায়হান গ্রুপ, শাওন গ্রুপ, রবিন গ্রুপ, শমসের গ্রুপ ও শাহাবুদ্দিন গ্রুপ উঠে পড়ে লেগেছে। গত কয়েকদিন ধরেই ওই সব গ্রুপ আলাদা ভাবে বিভিন্ন সময় সশস্ত্র মহড়া দিয়ে রাতভর মহড়া দিয়ে এলাকাটি করে তুলছে অশান্ত।
এসব বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় হত্যা, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মামলা রয়েছে। শুধু জয়নালের বিরুদ্ধেই হত্যাসহ নানা অপরাধের অভিযোগে ২৮টি মামলা রয়েছে। এদের ভয়ে এলাকার মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না।
বুধবার দুপুরে জয়নাল গ্রুপের সঙ্গে শমসের ও শাহাবুদ্দিন গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। উভয় গ্রুপের সন্ত্রাসীরা লাইফ জ্যাকেট, হেলমেট পড়ে, পিস্তল ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। হামলাকারীরা এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীরা ছোটাছুটি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। নিরাপত্তার জন্য ঘরবাড়িতে তালা মেরে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ সময় উভয়ের গ্রুপের বেশ কয়েকজন এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষন শুরু করে। সংঘর্ষে এলাকাবাসী পথচারী সহ উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। এসময় সৈয়দ মিয়া নামে এক দিনমজুর গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ সৈয়দ মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষ অবস্থায় ভর্তি করা হয়।
গুলিবিদ্ধ সৈয়দের পরিবারের অভিযোগ, জয়নাল গ্রুপের রাব্বি নামের এক সন্ত্রাসী প্রকাশ্য দিবালোকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে সৈয়দ মিয়াকে।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। আবারো সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বিপুল পরিমাণ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চনপাড়া পূর্ণবাসন কেন্দ্র এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে।
এর আগে, গত (১২ এপ্রিল) দুই গ্রুপের মাঝে গুলি বিনিময় ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের পনের জন আহত হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, ঘটনার সাথে সাথে পুরো এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আহত সৈয়দ মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়েছে কিনা এটা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করা যায় নি। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।