A Top Ads

বিশেষ প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মেঘনা শিল্পনগরী এলাকায় পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুম যা বলে তাই হয়। তার কথা ছাড়া ওই এলাকায় পান থেকে চুনও খষে না।

স্থানীয়রা বলেন, ওই এলাকার একচ্ছত্র আধিপত্য মাসুম চেয়ারম্যানের। তিনি অহমিকা করে বলেন, প্রশাসন, রাজণৈতিক নেতা ও মিডিয়াকর্মীরা আমার পকেটে। এছাড়াও এখন টাকা থাকলে আর কিছুই লাগে না। আমার ক্ষমতা ও টাকা আছে তাই আমাকে কেউ কিছুই করতে পারবেনা।

স্থানীয়রা জানান, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাসুদুর রহমান মাসুম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন, নূর আলী, মেঘনা গ্রুগ, আল মোস্তফা গ্রুপসহ অর্ধশতাধিক শিল্পকারখানায় ব্যবসা। ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আলী আকবর মেম্বার ও সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সামসুজ্জামান সামসুু ও স্বপনের সাথে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে মাসুম বাহিনীর সদস্যদের সাথে।

এসময় মাসুম বাহিনীর সদস্যরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা আলী আকবর মেম্বার, সামসুজ্জামান সামসু ও স্বপনের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন কওে ও তাদের ব্যবহৃত গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এরপর আস্তে আস্তে পুরো পিরোজপুর ইউনিয়নের একক আধিপত্য নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। টেন্ডারবাজি, বালু ভরাট, জমি কেনা বেচা, বিচার আচার থেকে শুরু করে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।

এসকল কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি গড়ে তুলেছেন এক বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। ওই এলাকার একক অধিপতি হিসেবে তিনি নিজেকে জাহির করেছেন ইতিমধ্যে। স্থানীয়রা চেয়ারম্যান ও তার বাহিনীর সদস্যদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না। এলাকাবাসীরা দীর্ঘ পনের বছর যাবৎ সে ও তার বাহিনীর কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে আছে।

স্থানীয়রা আরো জানান, এক সময়ের বখাটে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম ফুটবল খেলা নিয়ে বখাটে ছেলেদের মত ঘুরে বেড়াতেন। এলাকায় তার বাবা একজন সামান্য মসজিদের ইমাম হিসেবে চাকরি করতেন। তার স্বার্থ রক্ষার জন্য আপন চাচা নুরুল ইসলামের উপরও হামলা চালাতে দিধাবোধ করেন নি তিনি। তার চাচাকে মারধর করে এলাকা ছাড়া করে দেন।

তারা জানান, মাসুম চেয়ারম্যান এলাকায় গিরিংগি মাসুম হিসেবে বেশ পরিচিত। ক্ষমতার প্রভাব আর দখলবাজি করে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে মেঘনা এলাকায় একাধিক বহুতল ভবন, ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, নামে বেনামে প্রচুর জমিজমা, একাধিক গাড়িসহ প্রায় শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি।

ইতিপূর্বে তার অবৈধ সম্পদের হিসেব চেয়ে দূর্ণীতি দমন কমিশন তাকে নোটিশ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসকল অভিযোগ থেকে মুক্তি পান বলে চাউর উঠেছে এলাকায়।

এক সময়ের মাসুম চেয়ারম্যানের নূন আনতে পান্তা ফুড়াতো অথচ আজ তিনি কয়েক বছরের ব্যবধানে বাড়ি,গাড়িসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। দূর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করলেই তার অবৈধ সম্পদের সকল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বে মাসুম চেয়ারম্যান একজন নি¤œ আয়ের লোক ছিলেন। ক্ষমতার প্রভাবের সাথে সাথে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে তার। প্রথমবার সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের কাছে বিশাল ভোটে পরাজিত হন তিনি।

পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর নৌকা প্রতীক পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মাসুদুর রহমান মাসুম। এরপর তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝাউচর গ্রামের এক বাসিন্দা “নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ”কে জানান, স্যামসাং কোম্পানীর বালু ভরাটের কাজ পান পিরোজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের ছেলে শাহাদাৎ হোসেন। কাজটি পেয়ে তিনি বালু ভরাট শুরু করলে মাসুম চেয়ারম্যান বাহিনীর সদস্যদের হামলা ও মামলায় টিকে থাকতে না পেরে শাহাদাৎ হোসেন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।

পরবর্তীতে ওই কোম্পানীর সাথে নতুন চুক্তি করে কাজটি বাগিয়ে নেন মাসুম চেয়ারম্যান। এভাবে ইসলামপুর এলাকায় সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ পাওয়ার প্লান্টের ঠিকাদারি কাজটি বাগিয়ে নিতেই তিনি কারসাজি করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজের এই প্রতিবেদক একাধিক বার তার মুঠোফোনে ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়া নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, আওয়ামীলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যদি অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তাহলে এর দায়ভার আমরা নিবো না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যদি অবৈধভাবে সম্পদের মালিক হয়। তাহলে তদন্ত করে খতিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে:কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারী যেই হউক না কেন তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

আগের সংবাদ দেখুননদী দখল করে বালু ভরাট করছেন চেয়ারম্যান মাসুম
পরের সংবাদ দেখুনমিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন