A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ

একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি নিজেই, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার স্ত্রী, পরিচালক ফুপাতো ভাই, পরিচালক শ্যালক। এছাড়াও পরিচালক হিসেবে রয়েছেন বাবা, মা ও নিজের মেয়ে। আপন ছোট ভাই জেনারেল ম্যানাজার ও আত্মীয় পরিচয়দানকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা, ডেপুটি মার্কেটিং ম্যানেজার সহ একই পরিবারের দশ’জন সদস্যরাই চালাচ্ছেন তিন’শ বেডের একটি বিশেষায়িত বাংলাদেশ নবজাতক হাসাপাতল।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় অবস্থিত হাসপাতালটি পরিবারতন্ত্র করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন ডাঃ মুজিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। ফলে ফুসে উঠেছেন হাসপাতালের অন্যান্য পরিচালকবৃন্দ। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অন্যান্য পরিচালকরা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সরেজমিনে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, ডাঃ মুজিবুর রহমান ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, তার স্ত্রী মাহবুবা সুলতানা আসমা ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়াও পরিচালক হিসেবে রয়েছেন ফুপাতো ভাই সাহাবুদ্দিন মিয়া, শ্যালক ডাক্তার আমিনুল ইসলাম, মেয়ে শিখা সুহাদা, বাবা আবুল কাসেম মা আমেনা খাতুন, তার আপন ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম মেম্বার জেনারেল ম্যানাজার, জনসংযোগ কর্মকর্তা সাদিক আহম্মেদ বাবু, আত্মীয় ডেপুটি মার্কেটিং ম্যানাজার ওবায়দুল্লা মিয়া। একই পরিবারের দশজনকে দিয়ে হাসপাতালটি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে পরিচালনা করার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ও রোগীরা। সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানে ওয়েবসাইট থেকে চেয়ারম্যান ডাঃ মুজিবুর রহমান হিসেবে নিজের নামটি সরিয়ে তার স্ত্রী মাহবুবা সুলতানা আসমার নাম বসিয়েছেন। তবে সকল সরকারি ও বেসরকারি দফতরে তার নামটি চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন একাধিক পরিচালক।

সাইনবোর্ড এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ডাঃ মুজিবুর রহমান ও তার আত্মীয় স্বজনরা যেভাবে সেচ্ছাচারিতা করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চিকিৎসার নামে অর্থ আদায় করছেন এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাদের ইচ্ছে মতো রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হারে টাকা আদায় করছেন। যদি কোন রোগী টাকা দিতে না পারে তাহলে তাদের নিয়োজিত গুন্ডা বাহিনী দিয়ে বিভিন্নভাবে নাযেহাল করা হয়। মুজিবুর রহমানের স্ত্রী মাহবুবা সুলতানা আসমা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে হাসপাতালটি একক সিদ্ধান্তে পরিচালনা করছেন। তার আপন ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম মেম্বারকে দিয়ে হাসপাতালের সকল যন্ত্রপাতি, মেশিনারিজ সহ হাসপাতালের যাবতীয় কেনাকাটার দায়িত্ব দিয়ে হাসপাতালটিতে লুটপাট করাচ্ছেন। এছাড়াও হাসপাতালটিকে আত্মীয় পরিচয়দানকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে সাদিক আহম্মেদ বাবু ও ডেপুটি মার্কেটিং ম্যানাজার ওবায়দুল্লা মিয়াকে দিয়েও বিভিন্ন রকমের অনিয়ম ও দূর্নীতি করাচ্ছেন।

রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মাতুয়াইল শিশু মার্তৃস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং শিশু, কিশোর ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ ইউনিটের ইনচার্জ ডাঃ মুজিবুর রহমান সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে ব্যক্তি মালিকানা চারটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের দায়িত্বপালন করছেন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা ও ডাক্তার কোন অবস্থাতেই ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানের কোন দায়িত্বে থাকতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এমন কর্মযজ্ঞ চালিয়ে আসলেই রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাতুয়াইল শিশু, মার্তৃস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটের এক কর্মকর্তা জানান, ইতিপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ডাক্তার মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠার পর তার বিরুদ্ধে হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তারদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হলেও রহস্যজনক কারণে তিনি থেকে যান ধারা-ছোয়ার বাইরে। ফলে তিনি পূর্বের চেয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সালমা খাতুন নামে এক রোগী জানান, বহু আশা নিয়ে এই হাসপাতালে আমার বাচ্চার চিকিৎসা সেবা নিতে এসেছিলাম। এসে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা সারাজীবন মনে থাকবে। তারা মানুষের সাথে টাকার জন্য যে আচরণ করেন তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ফাতিহা খাতুন নামে এক রোগী জানান, ডাঃ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা নিয়মনীতি না মেনে যেভাবে ইচ্ছে ঠিক সেই ভাবেই হাসপাতালটি পরিচালনা করছেন। এতে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা।

আব্দুল জাব্বার নামে এক ব্যক্তি জানান, সাদিক আহম্মেদ বাবুকে এই প্রতিষ্ঠানের কমিউনিকেশন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি সকল প্রকার দালাল ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব নিয়েছেন। সম্প্রতি সংবাদকর্মীরা ওই হাসপাতালের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদকর্মীদের সাথে বাবু বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সুরাহা হয়।

বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালের পরিচালক আশিকুজ্জামান চৌধুরী কালের কন্ঠকে জানান, ডাঃ মুজিবুর রহমানসহ আমরা পাঁচজন পরিচালক মিলে হাসপাতালটি পরিচালনা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করি। পরবর্তীতে যখন দেখি তিনি তার স্ত্রী, ভাই ও স্বজনদের দিয়ে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এসকল কাজের প্রতিবাদ করায় আমাদেরকে মূল্যায়ন না করে ওনার একক সিদ্ধিন্তে হাসপাতালটি পরিচালনা করছেন। আমাদের হিসেব-নিকেষও ঠিকমত দিচ্ছেন না তিনি। তিনি বলেন, একজন সামান্য ডাক্তার হয়ে মুজিবুর রহমান রাজধানীর ১৮/নিউ বেইলী রোডের এসও বেইলী নেষ্ট দুটি ফ্ল্যাট, ঢাকা মৌচাক মার্কেটে অন্তরা, অফসরা কমপ্লেক্স ভবনে একটি ফ্ল্যাট গোপীবাগের ছয়তলা বাড়ি, মাতুইয়ালে দুটি প্লট। এছাড়াও কানাডায় বাড়ি ক্রয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনি শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

তিনি বলেন, আমরা মুজিবুরের দূর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছি না। এই হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ তানিয়া ইসলাম কালের কন্ঠকে জানান, যে আশা নিয়ে হাসপাতালটি করেছিলাম সেটা বাস্তাবায়ন করার আগেই পরিবারতন্ত্র করে হাসপাতালটি পরিচালনা করছেন ডাঃ মুজিবুর রহমান। এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিনা আমরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালের এক পরিচালক কালের কন্ঠকে জানান, মাতুয়াইল শিশু মার্তৃস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং শিশু, কিশোর ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ ইউনিটের ইনচার্জ ডাঃ মুজিবুর রহমান সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ব্যক্তি মালিকানা চারটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের দায়িত্ব পালন করছেন। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তা ও ডাক্তার কোন অবস্থাতেই ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানের কোন দায়িত্বে থাকতে পারেন না। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এমন কর্মযজ্ঞ চালিয়ে আসলেও রহস্য জনক কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাতুয়াইল শিশু মার্তৃস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং শিশু, কিশোর ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ ইউনিটের ইনচার্জ ডাঃ মুজিবুর রহমান কালের কন্ঠকে জানান, বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালটি নিয়মনীতি মেনেই পরিচালনা করা হচ্ছে। একই প্রতিষ্ঠানে কিভাবে আপনাদের পরিবারের একাধিক ব্যক্তি দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই হাসপাতালটির বেশীরভাগ মালিকানাই আমরা। তাই দেখাশোনার দায়িত্ব আমাদের বেশী পালন করতে হয়।

মাতুয়াইল শিশু মাতৃ স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক এম এ মান্নান কালের কন্ঠকে জানান, মাতুয়াইল শিশু মার্তৃস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং শিশু, কিশোর ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ ইউনিটের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কোন অবস্থাতেই সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে থাকতে পারেন না। একাধিক প্রতিষ্ঠানে তিনি দায়িত্ব পালনের প্রমান পাওয়া গেলে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মশিউর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, হাসপাতাল পরিচালনা করার জন্য যেসকল নীতিমালা রয়েছে এর বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বাংলাদেশ নবজাতক হাসপাতালটি নিয়ম মেনে পরিচালনা করছে কিনা এ বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। যদি কোন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সূত্র: কালের কন্ঠ

আগের সংবাদ দেখুনপথচারীদেরকে ইফতার বিতরণ
পরের সংবাদ দেখুনসাংবাদিক হত্যা চেষ্টাকারী’সহ গ্রেফতার ২