নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ
রূপগঞ্জের ভুলতার শাওঘাট এলাকায় অবস্থিত আরআইসিএল (রহিম ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড) নামের একটি স্টিল মিলের বাট্টিতে লোহা গলানোর সময় বিস্ফোরণের ঘটনায় গোলাম রাব্বি (৩৫) নামে আরো এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ জনে। শুক্রবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই রি-রোলিং মিলের ভেতরে এ দূর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই নিয়ন নামে এক শ্রমিক মারা যান। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাকি চার জনের মৃত্যু হয়।
নিহত পাঁচ শ্রমিক হলেন- শঙ্কর (৪০), মো. ইলিয়াস আলী (৩৫), নিয়ন (২০), আলমগীর (৩৩) ও গোলাম রাব্বি (৩৫)। নিহত নিয়নের বাড়ি রাজবাড়ী সদর থানার রামকান্তপুর এলাকায়। বর্তমানে জুয়েল ও ইয়াছিন নামের আরও দুজন চিকিৎসাধী রয়েছেন।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হকের নেতৃত্বে প্রশাসন ওই কারখানায় গিয়ে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন। এছাড়া ঘটনা তদন্তের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আহবায়ক করা হয় ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুস্তাফিজুর রহমানকে। সদস্য সচিব করা হয় কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন অফিসার মো. রফিকুল ইসলামকে এবং সদস্য করা হয় নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ-২ এর ইঞ্জিনিয়ার আলতাফ হোসেনকে।
ইউনও ফায়সাল আলম বলেন, মিল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব¡ অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছি। ঘটনার তিন ঘন্টা পার হয়ে গেলেও ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ফায়ার সার্ভিসকে অবহিত করেননি মিল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত এবং সরকারি সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে।
এদিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেন জানান, আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ নিলয় মারা গেছে। তিনি বলেন, রূপগঞ্জ থেকে দগ্ধ অবস্থায় ছয় জন আমাদের এখানে এসেছিলেন। তার মধ্যে নিলয়ের শরীরের ৯৭ শতাংশ দগ্ধ ছিল। এছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা যান দগ্ধ ইলিয়াস আলী। তার শরীরের ৯৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, গত ৩ মাস ধরে কারখানাটি চালু করা হয়েছে। কারখানাটিতে প্রাথমিকভাবে ২০-২৫ জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কারখানাটি গত ৩ মাস ধরে চালু হলেও কারখানার ভেতরে কোন প্রকার অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার সামগ্রী রাখা হয়নি। এছাড়া এ ধরনের ঝুকিপূর্ণ কাজ করার জন্য শ্রমিকদের দেওয়া হয়নি কোন প্রকার সুরক্ষা সামগ্রী। এতে করে এতদিন পর্যন্ত শ্রমিকরা ঝুকি নিয়ে কারখানাটিতে কাজ করে যাচ্ছিল।
এদিকে শ্রমিকরা কারখানা মালিক পক্ষকে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ও ঝুকিপূর্ণ কাজের সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করার কথা বলে আসছিল। কিন্তু মালিক পক্ষ তাদের কোন প্রকার কর্নপাত না করে ঝুকিপূর্ণভাবে শ্রমিকদের কাজ করিয়ে যাচ্ছিল। এতে শ্রমিকরা মালিকপক্ষের প্রতি কিছু নাখোশ থাকলেও পেটের দায়ে শ্রমিকদের বাধ্য হয়ে কাজ করতে হতো।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মামলা বা অভিযোগ দেওয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের পক্ষ থেকে মামলা বা অভিযোগ না দিলে এই ঘটনায় দোষীদের অভিযুক্ত করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্য্যালয়: ৪র্থ তলা, রুপালী সুপার মার্কেট, চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ।
বার্তা কক্ষ: ইমেইলঃ [email protected] মোবাইলঃ 01711581634, 01921-116126
Powered by Sourav Bhuiyan