A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া ও অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠেছে বারোটি চুনকারখানা। পরিবেশ দূষণকারী এসব চুনাভাট্টিগুলোতে দিনরাত জ্বলছে আগুন। আগুনে সৃষ্ট কালো ধোঁয়ার কুন্ডলীর সঙ্গে উড়ছে ছাই। এই ধোঁয়ার কারণে আশপাশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ।

চুনাভাট্টির গ্যাসের কারণে নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর। যার ফলে আশপাশের অধিকাংশ বাসিন্দাদের শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে মালিকপক্ষ আওয়ামীলীগ ও প্রশাসনের ছত্রছায়ার কারণে তাদের কোনভাবেই আইনের আওতায় আনা যায়নি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এসরকার সকল কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি। অনতিবিলম্বে এসকল কারখানাগুলো দ্রুত অন্যত্র স্থানান্তরের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। এসকল অবৈধ চুনাভাট্টি সরানোর দাবিতে সোমবার প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনারগাঁয়ের ভাটিবন্দর এলাকায় নূর আলমের মালিকানাধীন তিনটি চুনাভাট্টি, রয়েল রিসোর্টের সামনে একটি চুনাভাট্টি, ভবেরচর সাফা পার্কের সামনে ছয়টি চুনাভাট্টি, বালিগাঁও এলাকায় দুটি চুনাভাট্টি রয়েছে তার।

মনসুর হোসেনের মালিকানাধীন পিরোজপুর ইউনিয়নের সুখতারা পাম্পের সামনে মোজাফ্ফর ফাউন্ডেশনের ভিতরে চারটি চুনাভাট্টি রয়েছে, বাবুল মিয়ার মালিকানাধীন মেঘনাঘাট প্রেস্ মার্কেটের সামনে মোনায়েম সুগার মিল সংলগ্ন তিনটি ভাট্টি রয়েছে তার। মেঘনা সেতু এলাকায় জামঘর বালিয়াকান্দি এলাকায় সানুমিয়া ও লাভলু মিয়ার মালিকানাধীন চারটি চুনকারখানা রয়েছে তাদের।

সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন মেঘনা ঘাট এলাকায় দুটি চুনকারখানা রয়েছে তার। বাদশা মিয়ার মালিকানাধীন পাগলা এলাকায় তিনটি চুনাভাট্টি রয়েছে তার। এসকল চুনাভাট্টির মালিকরা পরিবেশের ছাড়পত্র ও তিতাস গ্যাসের অনুমতি না নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে আওয়ামীলীগ নেতাদের ম্যানেজ করে এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ,অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে চুনাভাট্টি পরিচালনা করায় সরকার মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পরিবেশের ছাড়পত্র ও ট্রেড লাইসেন্স না থাকার পরও কিভাবে এসকল চুনাভাট্টিগুলো পরিচালনা করছেন এ নিয়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। তবে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছেন এসকল অবৈধ চুনাভাট্টি।

ভাটিবন্দর এলাকার বাসিন্দা আফতাব উদ্দিন জানান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় জনস্বাস্থ্যর ক্ষতিকর চুনাভাট্টির মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না স্থানীয় প্রশাসন। প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করার পরও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।

পিরোজপুর এলাকার বাসিন্দা আক্কেল আলী জানান, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে স্থানীয় নেতা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসকল চুনাভাট্টি অবৈধভাবে পরিচালনা করে। বর্তমান সরকার এসকল অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন না করায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি।

চুন কারখানার মালিক নূর আলম, মনসুর হোসেন জানান, আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে কয়েকবার ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেও পাই নি। পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই আমরা চুনাভাট্টিগুলো পরিচালনা করছি। অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে কিভাবে কারখানা পরিচালনা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা কোন সদত্তোর দিতে পারেন নি।

নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এ এইচ এম রাসেদ বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে যেসকল চুনকারখানা গড়ে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ইতিমধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

তিতাস গ্যাস এন্ড ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড এর সোনারগাঁ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জাফ্রুল আলম জানান, অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নিয়ে চুনাভাট্টি পরিচালনা করায় মালিকদের বিরুদ্ধে কয়েকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা ও গ্যাসং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। খুব শিগ্রই তাদের বিরুদ্ধে ফের অভিযান পরিচালনা করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোন অবস্থাতেই চুনা কারখানা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। এসকল মালিককে তাদের চুনাভাট্টি অন্যত্র সরানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

 

আগের সংবাদ দেখুনরোববার অর্ধবেলা হরতাল
পরের সংবাদ দেখুনসন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের রুখতে হবে: সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম