A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ

সিদ্ধিরগঞ্জের সাইলোগেইট এলাকায় বাংলাদেশ আন্তঃজিলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন সাইলো শাখার নামে প্রতিমাসে লাখ টাকা চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওই সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা। এসকল চঁদার সম্পর্কে বেশিরভাগ টাকা সংগঠনের সদস্যরাই জানেন না বলে দাবি করেন সদস্যদের। এতে ওই শাখার সাধারণ সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সংগঠনটির সকল কার্যক্রম বন্ধ করে কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেওয়ার দাবি তুলেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে কোন সুরাহা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ আন্তঃজিলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন সাইলো শাখায় ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে কবির হোসেন সভাপতি ও তার ভাতিজা মিজানুর রহমান দীপু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। দুই বছর মেয়াদের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের পর গেল সাত বছর যাবৎ কোন নির্বাচন হয়নি এই শাখায়।

শুধু তাই নয়, নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে প্রতি মাসে মাসিক সাধারণ সভা হওয়ার কথা গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকলেও নির্বাচনের পর একটি সাধারণ সভারও আয়োজন করেন নি নির্বাচিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক। ফলে ওই শাখার কার্যক্রম একেবারেই নেই বললেই চলে। সভাপতি ও সম্পাদক তাদের নিজের ইচ্ছে মতোই সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে বেশিরভাগ সদস্যরা সংগঠন থেকে নিস্কৃয় হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

শ্রমিক, ট্রান্সপোর্ট মালিক ও ঠিকাদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাইলো শাখার সভাপতি কবির হোসেন নির্বচনের পর থেকেই নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গেল সাত বছর ধরে কেন্দ্রীয় নেতাদের ম্যানেজ করে সংগঠনের নির্বাচন আটকে রেখেছেন তিনি। কোন সদস্য যদি নির্বাচনের কথা বলে বা সংগঠনের হিসেব চায় তাহলে ওই সদস্যকে থানায় মামলা দেওয়ার হুমকি দেন সভাপতি নিজেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সাইলো খাদ্য গুদামের ডিআরটিসি পরিবহন ঢাকা বিভাগে চলাচলরত খাদ্য গুদামের স্থানীয় পন্যবাহী ট্রাক মালিকদের কাছ থেকে দুই’শ টাকা এবং সংগঠনের নামে তিন’শ পঞ্চাশ টাকা ও ঢাকা বিভাগসহ অন্যান্য মালিকদের কাছ থেকে সভাপতির নামে এক হাজার ও সংগঠনের নামে তিন’শ পঞ্চাশ টাকা চাঁদা প্রতি গাড়ি থেকে আদায় করছেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় ঠিকাদার (সিআরটিসি) পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে প্রতি গাড়ি থেকে সভাপতির নামে এক হাজার ও আন্তঃজিলার নামে চারশত টাকা চাঁদা আদায় করেন তিনি।

প্রতিদিন কমপক্ষে আশি থেকে শতাধিক গাড়ি থেকে চাঁদার নামে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন সাইলো শাখার সভাপতি কবির হোসেন। সভাপতি থাকার কারণে তার ব্যক্তিগত গাড়ি ও আত্মীয় স্বজনের গাড়ি কোন প্রকার নিয়মনীতি না মেনেই লোড করেন তিনি। এসকল চাঁদার টাকা উত্তোলন করেন কবির হোসেনের ভাগিনা খলিলুর রহমান, মামুন মিয়া, নাঈম মিয়া, চাচাতো ভাই বাবুল মিয়া, ভাতিজা আবিদ মিয়া ও মিনহাজ মিয়া।

অভিযোগ রয়েছে, আন্তঃজিলা সাইলো শাখার কোন সদস্যদের কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা না দিয়ে আত্মীয়করণ করে কবির হোসেন পুরো নারায়ণগঞ্জ সাইলো খাদ্যগুদামের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তার বড় ভাই মোক্তার মিয়াকে দিয়ে সকল ঠিকাদারকে নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।

বাংলাদেশ আন্তঃজিলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন সাইলো শাখার সহ-সভাপতি নূর হোসেন রুমী জানান, প্রায় সাত বছর ধরে সংগঠনের কোন নির্বাচন হয় না। কোন সদস্যদের মূল্যায়ন নেই এই কমিটিতে। নির্বাচনের পর কোন সাধারণ সভাও হয় নি। তিনি বলেন, সংগঠন চলবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। তবে এই পর্যন্ত এই সংগঠনের কোন কাজ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এখানে শ্রমিকরা অবহেলিত। শ্রমিক নেতারা মুখে বলে এক করে আরেক। তাদের ক্ষমতার কাছে আমরা কিছুই না। তিনি বলেন, এই সংগঠনের নামে কতিপয় ব্যক্তি পকেটভারি করছেন। এই সকল চাঁদাবাজির টাকায় বাড়ি গাড়ি করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি স্থানীয় রমজান এন্টার প্রাইজের সত্তাধীকারী রমজান আলী জানান, কবিরেরই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সাইলো শাখা খাদ্যগুদাম। কেউ কোন কথা বললে তার উপর নেমে আসে নানা প্রকারের হুমকি। আওয়ামীলীগের একজন পোড়খাওয়া ত্যাগী নেতা হিসেবে সবাই আমাকে চিনে। কিন্তু সাইলোগেইট এলাকায় ভুইফোড় সংগঠনের নব্য আওয়ামীলীগাররা লুটেপুটে সবকিছু খাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবির হোসেন জানান, আমি সংগঠনের নামে কোন ভাবেই চাঁদা উত্তোলন করিনি। সংগঠনের সভাপতি পদে থেকে দীর্ঘ দিন ধরে কোন সভা না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিকুলতার জন্য সভা করা হয়নি। একই কমিটিতে দীর্ঘদিন পদে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অকপটে বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন নিয়েই আমরা সংগঠনের কার্যক্রম চালাচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আন্তঃজিলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কাউসার আহম্মেদ পলাশ জানান, সংগঠনের নামে ৩০ টাকার বেশী চাঁদা নেওয়ার কথা বাংলাদেশ আন্তঃজিলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রে নেই। আমাদের সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে অতিরিক্ত হারে কেউ চাঁদা আদায় করলে তার বিরুদ্ধে খুব শিগ্রই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। দুই বছরের জন্য কমিটির অনুমোদন থাকলেও আমাদের পূর্বের কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। তবে মেয়াদউত্তীর্ণ নারায়ণগঞ্জ সাইলো শাখাসহ সারাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ সাইলো সুপার নাজিম উদ্দিন জানান, এই বিষয়টি আমাদের অফিসের কার্যক্রমের সাথে জড়িত না। ঠিকাদারদের কাছ থেকে কে বা কারা কিভাবে চাঁদা আদায় করছেন এই বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, চাঁদাবাজির সাথে জড়িতদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে: কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, চাঁদাবাজরা যেই দলেরই হউক না কেন তাদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। সাইলোগেইট এলাকায় আন্তঃজিলার নামে অবৈধভাবে কেউ চাঁদা আদায়কারীদের খুব শিগ্রই আইনের আওতায় আনা হবে।

আগের সংবাদ দেখুনআ’লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল
পরের সংবাদ দেখুনসংবাদ প্রকাশের পর ফেষ্টুন অপসারণ