A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: নাম তার আব্দুল রহিম মেম্বার। ছিলেন মনোয়ারা জুট মিলের শ্রমিক। আশির দশকে মাত্র ছয়শত টাকা মাসিক বেতনে কাজ করতেন তিনি। হঠাৎই বদলে যায় আলাদিনের দৈত্যের কল্পকাহিনীর মতো আব্দুল রহিম মেম্বারের ভাগ্যের চাকা। রাতারাতি পাল্টে যায় জীবনচিত্র। হাঁকাতে শুরু করেন অর্ধকোটি টাকা মূল্যের গাড়ি। বুড়ো বয়সে দেশে বিদেশে ভ্রমন ও আনন্দ বিলাশে মগ্ন থাকেন তিনি।

আব্দুর রহিম মেম্বারের এ পরিবর্তনে অনেকেই রীতিমতো অবাক হচ্ছেন। তারা বলছেন পরের ধনে পোদ্দারি করায় তার এই পরিবর্তন। তার অবৈধ সম্পদের হিসেব দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে আসল রহস্য।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাগেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে আব্দুর রহিম মেম্বার। ১৯৭৭-৭৮ সালে সিদ্ধিরগঞ্জের মনোয়ারা ঝুট মিলের সামান্য শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। ১৯৮৩-৮৪ সাল পর্যন্ত ছয়শ টাকা বেতনে চাকরি করতেন তিনি। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শশুরবাড়ির সম্পদ পেয়ে শুরু করেন বিত্তশালীদের মতো চলাফেলা। এক রকম আলাদিনের চেগারের মতো। যেন দৈত্যএসে তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, জালজালিয়াতি, জমিজমার ব্যবসা, জমির দালালি, অন্যের জমি দখলে তার পারদর্শিরা ছিলো চোখে পড়ার মতো। বেশিরভাগ সময়ে অনেক জমি জাল দলিল করে দখল ও অন্যত্র বিক্রি করতেন আব্দুর রহিম মেম্বার। স্ত্রী মোরছেনা বেগমের সম্পত্তির উপর ছোট্ট একটি কাঁচাবাজার নির্মাণ করে স্ত্রীর নাম না দিয়ে নিজের নামে করে ফেলেন রহিম মার্কেট। ধীরে ধীরে ওই এলাকার নামও হয়ে যায় রহিম মার্কেট।

স্থানীয়দের কয়েকটি সূত্র জানায়, এক সময়ের সামান্য শ্রমিকের কাজ করা আব্দুর রহিম মেম্বার তার আপন খালাতো বোনকে বিয়ে করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। খালার ছেলে না থাকায় আপন খালাতো বোন মোরছেনা বেগমকে বিয়ে করে শশুরবাড়ির প্রায় পাঁচ থেকে সাত বিঘা জমি পেয়ে আব্দুর রহিম মেম্বার হয়ে উঠেন বিত্তশালি।

তাই এলাকায় চাউর রয়েছে রহিম মেম্বার পরের ধনের পোদ্দারি করে টাকার মালিক হয়েছেন।
আকরাম মিয়া নামে রহিম মার্কেট এলাকার এক বাসিন্দা জানান, মিজমিজি পশ্চিম পাড়া এলাকায় সবচেয়ে বেশি জমির মালিক ছিলেন, রহিম মেম্বারের শশুর মৃত: আব্দুস সোবহান। যিনি সম্পর্কে রহিম মেম্বারের খালু ছিলেন। তারই মেয়ে মোরছেনা বেগমকে বিয়ে করে রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান রহিম মেম্বার।
অন্যদিকে রহিম মেম্বারের বাবার বসৎ ভিটা ছাড়া তেমন কোন সম্পদ ছিলো না। শশুরবাড়ির সম্পদ পেয়ে রহিম মেম্বার দিশেহারা হয়ে পড়ে। জমিজমার ব্যবসা, জাল দলিল বানিয়ে অন্যের জমি বিক্রি করে তিনি এখন অর্ধশত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

আলাউদ্দিন মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, হাজী আব্দুস সামাদ মাদ্রাসার পাশে এক খন্ড জমি কাঁচপুর এলাকার এক বাসিন্দার কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে জমিটি বায়না করেন তিনি। এই জমির পিছনে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ করেও জমিটি রেজিষ্ট্রি বায়নায় যেতে পারি নি।

আব্দুর রহিম মেম্বার জমিটির জাল দলিল বানিয়ে অন্য এক ব্যক্তির কাছ বিক্রি করে দিয়েছেন। অন্যদিকে একই এলাকায় সেলিম মাস্টার নামে এক ব্যক্তি সাত শতাংশ জমি খাড়া দলিল করে অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন আব্দুর রহিম মেম্বার। এভাবে অনেকেই নি:স্ব করে পথে বসিয়েছেন তিনি।

শুধু আলাউদ্দিন মিয়াই নয় এমন অসংখ্য মানুষের জমি জাল দলিল বানিয়ে অন্য ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে সমাজের উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন আব্দুর রহিম মেম্বার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রহিম মেম্বার নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, আমি সারাজীবন পরিশ্রম করে সম্পদের মালিক হয়েছি। অবৈধভাবে কোন সম্পদের মালিক হইনি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারীদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। আব্দুর রহিম মেম্বারের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের আমরা কোনভাবেই ছাড় দিবো না। এ বিষয়ে খবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

 

 

 

আগের সংবাদ দেখুনস্টাফ কোয়াটারে আ: হকের আস্তানা উচ্ছেদ
পরের সংবাদ দেখুনজাতির পিতার ১০৬তম জন্মদিন আজ