সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি: ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শিমড়াইল মোড় এলাকায় দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে এক দোকানীকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছেন একাধিক মামলার আসামী চিহিৃত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজিরা। এ বিষয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এসকল চাঁদাবাজদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
ওই ব্যবসায়ীকে মারধরের ভিডিও বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসলে চাঁদাবাজরা গাঁ ঢাকা দেয়।
দোকানীরা জানান, মহাসড়কের শিমড়াইল মোড় এলাকায় ফল ব্যবসায়ী ইব্রাহীম মিয়ার কাছ থেকে প্রতিদিন তিন’শ টাকা করে চাঁদা আদায় করে আসছেন র্যাব, পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ একাধিক মামলার আসামী জামাল হোসেন।
অতিরিক্ত হারে চাঁদা দাবি করলে ব্যবসায়ী ইব্রাহীম মিয়া চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় জামাল হোসেন তার সহযোগী কালু মিয়া, সামাদ মিয়া, ইউনুস আলী, জিসান মিয়া, ফয়েজ মিয়া, আতিক হোসেনসহ ১০/১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালিয়ে ব্যবসায়ী ইব্রাহীম মিয়াকে পিটিয়ে আহত করে। দোকানীকে মারামারির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। আহত অবস্থায় ওই ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
থানা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পুলিশের হাতে ফুটপাতে চাঁদাবাজি করার সময় হাতেনাতে গ্রেফতার হন জামাল হোসেন। কিছুদনি পর ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারী সন্ধ্যায় শিমড়াইল এলাকায় ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করার সময় র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১১ অভিযান পরিচালনা করে জামাল হোসেন ও তার এক সাহযোগীকে গ্রেফতার করেন।
এ বিষয়ে সে সময়ের র্যাব-১১ এর মিডিয়া অফিসার সহকারি পরিচালক এ এসপি রিজওয়ান সাঈদ জিকুর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। জামাল হোসেন চাঁদপুর জেলার মতলব থানার শিকারীকান্দি এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। সে সিআইখোলা কাঠেরপুল এলাকার কামাল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফুটপাত ব্যবসায়ী জানান, শিমরাইল মোড় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পাশে^ অবৈধভাবে গড়ে উঠা সকল ফুটপাত দোকান বারবার উচ্ছেদ করা হলেও জামালের নেতৃত্বেই আবারো ফুটপাত দখলে নেন হকাররা।
প্রতিবার ফুটপাত উচ্ছেদের পর আবার পুনরায় বসতে জামাল হোসেনকে দিতে হয় প্রতি দোকান প্রতি দশ থেকে বিশ হাজার ও প্রতিদিন দোকান প্রতি তিন’শ থেকে চার’শ টাকা। প্রতিদিন প্রায় তিন’শ দোকান থেকে চাঁদা উত্তোলন করতো জামাল হোসেন ও তার সহযোগীরা।
এক ফল দোকানদার জানান, জামাল ও তার কয়েকজন সহযোগী প্রতিদিন আমাদের কাছ থেকে জোড় পূর্বক প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে হাজার হাজার টাকা উত্তোলন করছেন। আমরা তার দাবিকৃত চাঁদা না দিলে আমাদেরকে ভিন্নভাবে হয়রানিসহ মারধর করা হয়।
মোবাইলে যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী জানান, আমরা চাঁদাবাজ জামাল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর নিকট এক প্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছি। বিশাল বাহিনী নিয়ে সে হুমকি দিয়ে আমাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকেন। তার সাথে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত থাকায় আমরা ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাই না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদককে জানান, এক সময় এই জামাল ভাত খাইতে ভাত পাইত না। সে আজ চাঁদার টাকায় নাকি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। প্রশাসনও তাকে কেন গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনছেন না। তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
আহত ফল ব্যবসায়ী ইব্রাহীম মিয়া জানান, আমার কাছে অতিরিক্ত হারে চাঁদাদাবি করলে আমি দিতে অস্বীকার করায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ জামাল হোসেনের নেতৃত্বে আমার উপর হামলা চালিয়ে আমাকে মারধর করে আহত করে। আমি কিভাবে এখানে দোকান চালাই দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। এতে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ও আতংকে দিন কাটাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, এ বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পাই নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিও দেখে চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জানান, আমি ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিও দেখে বিষয়টি অবগত হয়েছি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য স্থানীয় পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান র্যাব-১১ এর পরিচালক লে: কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, ইতিমধ্যেই এই চাঁদাবাজকে ফুটপাত থেকে চাঁদাবাজির সময় হাতে নাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবারো তাকে গ্রেফতার করতে মাঠে কাজ করছে র্যাব-১১।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্য্যালয়: ৪র্থ তলা, রুপালী সুপার মার্কেট, চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ।
বার্তা কক্ষ: ইমেইলঃ [email protected] মোবাইলঃ 01711581634, 01921-116126
Powered by Sourav Bhuiyan