A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও শিমড়াইল মোড়ে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মহাসড়কের এই পথ দিয়ে যাতায়াত করা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় তেইশ জেলায় চলাচলরত প্রতিটি পরিবহন থেকে ধরণ পাল্টে চাঁদা তুলছেন সংঘবদ্ধ বাহিনীর সদস্যরা। চাঁদা না দিলে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের হয়রানির করার অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের লোকাল ফিটনেসবিহীন গাড়ি থেকেও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে গাড়িগুলো নির্ধিদায় চালাচ্ছে চাঁদাবাজদের একটি গ্রুপ। গাড়িতে স্টিকার লাগিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদা দেওয়া হলে নতুন করে স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়।

অনুসন্ধান চালিয়ে জানাগেছে, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করা দূরপাল্লার প্রত্যেকটি যাত্রীবাহি পরিবহন থেকে পঞ্চাশ থেকে এক’শ টাকা করে চাঁদা তুলছেন একটি সিন্ডিকেট। এছাড়াও চিটাগাংরোড থেকে গুলিস্তানগামী আদমজী কোমল পরিবহনের ৩০/৪০টি গাড়ি থেকে প্রতিদিন জিপি আদায় করেন তিন’শ চল্লিশ টাকা করে রহমান আলী ও ফারুক নামে দুই ব্যক্তি।

এই টাকার ভাগ নেন সড়ক পরিবহনের শ্রমিক নেতা জাহাঙ্গির হোসেন, সালাহ উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন। মনজিল নামের শিমড়াইল থেকে সভার চলাচল করা গাড়ি থেকে মাসিক পঞ্চাশ হাজার করে চাঁদা নেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এক নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন। এই পরিবহন থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি পরিবহন থেকে আলামিন নামে এক ব্যক্তি বিশ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এক নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম জানান, আমি মনজিল পরিবহন থেকে কোন প্রকার চাঁদার টাকা আদায় করি নাই।

চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আদমজী কোমল মিনিবাস মালিক সমিতির সহ- সভাপতি নূরুল ইসলাম জানান, চাঁদাবাজরা প্রতিদিন আমাদের গাড়িগুলো থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে থাকেন। তাদের কাছে আমরা এক প্রকার অসহায়। স্থানীয় প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না। পায়রা পরিবহনের মালিক আলমগীর হোসেন জানান, শিমড়াইল ও সাইনবোর্ড মোড় এলাকায় কোটি টাকার চাঁদা আদায়ের মিশনে নেমেছেন স্থানীয় চাঁদাবাজরা। একদিকে যাত্রী কম অন্যদিকে চাঁদাবাজদের দৌড়াত্যের কারণে এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসা করার চিন্তাভাবনা করছি আমরা।

সময় পরিবহন থেকে প্রতি মাসে বিশ হাজার টাকা চাঁদা উত্তোলন করেন শামীম মিয়া ও সেন্টু মিয়া নামের দুই ব্যক্তি। রজনীগন্ধা পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করেন পারভেজ মিয়া ও ওয়াসিম মিয়া নামের দুই ব্যক্তি।

ফিটনেসবিহীন প্রায় দেড়’শ লেগুনার প্রতিটি থেকে ষাট টাকা করে চাঁদা তুলেন আতিকুর রহমান, লিটন ওরফে হাতুরি লিটন, পরশ মিয়ার তিন ব্যক্তি। শিমড়াইল মোড়ে চলাচলচল রত তিন চাকার গাড়ি (মহাসড়কে চলাচলে সরকারের নিষেধাজ্ঞা আমান্য করে চলছে) থ্রী হুইলার থেকে সুমন মিয়া, মামুন ওরফে ভাগিনা মামুন, শাহ আলী নামে তিন ব্যক্তি ৫০ থেকে ৬০টি সিএনজির প্রতিটি থেকে ৬০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন।

পারভেজ মিয়া, ওয়াসিম মিয়া, সুমন মিয়া, শাহ আলী, শামীম মিয়া, আতিকুর রহমান ও সেন্টু মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা চাঁদা উত্তোলনের কথা অস্বীকার করেন।

অন্যদিকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমড়াইল মোড় হয়ে চলাচল করা ভৈরব পরিবহনের প্রায় অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহি পরিবহনের প্রতিটি থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা তুলেন, শিকিম আলী, সেলিম ওরফে বালতি সেলিম, লিটন ওরফে হাতুরি লিটন নামে তিন ব্যক্তি।

এছাড়াও এই পরিবহনগুলো থেকে রিপন মিয়া নামে এক ব্যক্তি প্রতি গাড়ি থেকে ২০ টাকা করে চাঁদা ঊত্তোলন করেন। তারাবো পরিবহন, শ্রাবন পরিবহন, হিমালয় পরিবহন, বোরাক পরিবহন, যশোর পরিবহন, খুলনা ও বরিশালে চলাচল করা প্রতিটি যাত্রীবাহি পরিবহন থেকে চাঁদা উত্তোলন করেন ইয়াসিন মিয়া ও জসিম মিয়া নামে দুই ব্যক্তি। এছাড়া ইমরান মিয়া নামে এক পরিবহন চাঁদাবাজ এ পথ দিয়ে চলাচলরত প্রায় দেড়’শ যাত্রীবাহি পরিবহনের প্রতিটি খেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করেন।

অন্যদিকে এ পথ দিয়ে চলাচলরত কচুয়া পরিবহন থেকে ৫০, পায়রা পরিবহন থেকে ৩০, যাত্রীসেবা পরিবহন থেকে ৩০, পাহাড়িকা পরিবহন থেকে ৩০ টাকা উত্তোলন করেন আলাউদ্দিন মিয়া নামে এক ব্যক্তি। প্রিন্স পরিবহন, প্রাইম পরিবহন, তিশা পরিবহন, জোনাকি পরিবহনের প্রতি গাড়ি থেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করেন সোহাগ মিয়া, রাজিব মিয়া নামে দুই ব্যক্তি।

প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি যাত্রীবাহি পরিবহন থেকে প্রতিদিন দেদারছে টাকা তুলছেন তারা। এছাড়াও সিলেট, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবনসহ দূরপাল্লার প্রতিটি যাত্রীবাহি পরিবহন থেকে চাঁদা উত্তোলন করেন রিপন নামে এক ব্যক্তি। এই টাকা ভাগভাটারা করে নেন লিটন ওরফে হাতুরি লিটন, শিকিম আলী, সেমিল ওরফে বালতি সেলিম। চাঁদা আদায়ের বিয়ষে জানতে চাইলে লিটন মিয়া, সেলিম মিয়া ও শিকিম আলী জানান, তারা চাঁদা উত্তোলনের সাথে জড়িত না। তবে পরিবহন সংগঠনের নামে শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য কিছু টাকা উত্তোলন করা হয়।

অন্যদিকে, সাইনবোর্ড থেকে গাজীপুর চন্দ্রাগামী ঠিকানা পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করছেন রুবেল মিয়া নামের ওই পবিহনের পরিচালক। দুই শতাধিক পরিবহন থেকে চার’শ টাকা করে জিবি (চাঁদা) নেওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। এসকল টাকা পরিবহন শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করার কথাও জানান তিনি।

এই পরিবহনের নিয়মিত চাঁদা উত্তোলন করেন মিলন মিয়া নামে এক লাইনম্যান। এছাড়া অনাবিল পরিবহন, অনাবিল সুপার, গ্রীন অনাবিল পরিচালনা করছেন জাহাঙ্গির হোসেন ও মান্নান মিয়া নামের দুইজন পরিচালনক। জিপি আদায়ের বিষয়ে জানার জন্য জাহাঙ্গীর মিয়াকে একাধিক বার তার মুঠোফোন কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ইকবাল পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করছেন ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি। সাইনবোর্ড থেকে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, সাইনবোর্ড থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলাচল করা প্রায় এক হাজার সিএনজি থেকে প্রতিমাসে পাঁচ’শ ও দৈনিক ষাট টাকা হারে চাঁদা তুলছেন র‌্যাব পুলিশের তালিকাভুক্ত চাঁদাবাজ মাসুদ মিয়া নামের এক ব্যক্তি।

প্রতিদিন এসকল সিএনজি থেকে চাঁদা উত্তোলন, মাসুদ মিয়ার সহযোগী মঞ্জু মিয়া, লিটন মিয়া, রুবেল মিয়া, সৈকত মিয়া, সিয়াম মিয়া, কামরুল কবির, রেজু মিয়া, সেলিম লিটুসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ঈদকে সামনে রেখে এসকর পরিবহনের চাঁদার হার ও জিপি দ্বিগুন হারে আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। এ বিষয়ে জানতে মাসুদ মিয়ার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কলটি কেটে দেন।

খোঁজ খবর নিয়ে জানাগেছে, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমড়াইল, সাইনবোড মোড়ে সংঘবদ্ধ কয়েকটি পরিবহন চাঁদাবাজচক্র প্রতি মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই বাহিনীর কয়েকজন সদস্যদের কয়েকবার র‌্যাব-১১ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি গ্রেফতার করলেও ফের ছাড়া পেয়ে আবারো এই চাঁদাবাজির কাজে জড়িয়ে পড়েন। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে এই বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার না করা হলে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের যন্ত্রনার সীমা থাকবে না। তাই মহাসড়কের শিমড়াইল মোড়ের ্এসকল ভয়স্কর চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরিবহন মালিক জানান, শিমড়াইল মোড়ে শ্রমিকলীগ নেতা লিটন ওরফে হাতুরি লিটন, শিকিম আলী, সেলিম ওরফে বালতি সেলিমসহ একটি চাঁদাবাজ চক্র রয়েছে। এই বাহিনীর ভয়ে তটস্থ থাকেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এই পথ দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পথে চলাচল রত বাস, ট্রাক, মিনিবাস, এ্যাম্বুলেন্সসহ সকল পরিবহন থেকে চক্র ভেদে চাঁদা আদায় করে থাকেন। চাঁদা না দিলে ওই পরিবহনের চাকা ঘুরতে দেন না তারা। চাঁদাবাজ চক্রের সাথে সখ্যতা করেই পরিবহন চলাচল করতে দিতে হয় না হয় গাড়ি চলতে দেওয়া হয় না।

কামাল মিয়া নামে এক পরিবহন হেলপার কান্নাজর্জরিত কন্ঠে বলেন, চাঁদাবাজ বাহিনীকে টাকা না দিলে আমাদের মারধর করে। গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে, ড্রাইভারদের মারতে তেড়ে আসে। একদিন চাঁদা দিতে না চাওয়ায় আমাকে মেরে রক্তাক্ত করেছেন লিটন, সিকিম আলী, সেলিম বাহিনীর সদস্যরা।

করিম মিয়া নামে দূরপাল্লার এক গাড়ি চালক জানান, শিমড়াইল মোড়ে পৌছা মাত্রই চাঁদার টাকা না দিলে গাড়ি আটকিয়ে দেওয়া হয়। চাঁদা দিলে গাড়ি ছাড়েন চাঁদাবাজ বাহিনীর সদস্যরা। তিনি বলেন, আমরা চাই ঈদ যাত্রা আরামদায়ক ও স্বস্তিতে করতে এই চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করবেন প্রশাসন।

শিমড়াইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর(টিআই) শরফুদ্দিন আহমেদ জানান, আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে মহাসড়কে যাতে পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় না করতে পারে সেজন্য সিসি ক্যামেরা ও মোবাইল টিমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ থ্রী হুইলার মহাসড়কে কিভাবে চলাচল করছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসকল নিষিদ্ধ থ্রি হুইলারের বিরুদ্ধে প্রতিদিন মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাঁদাবাজদের চিহিৃত মামলা দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহন করছি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিক জানান, শিমড়াইল মোড় থেকে কয়েকদিনে আগেও পাঁচজন পরিবহন চাঁদাবাজ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ঈদ যাত্রায় যেন কোন ধরনের হয়রানি না হয় সেদিকে আমরা সবসময় লক্ষ রাখছি।

র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ার র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে.কর্ণেল তানভির মাহমুদ পাশা জানান, ইতিমধ্যেই মহাসড়কে অবৈধভাবে বিভিন্ন যাত্রীবাহি পরিবহনে চাঁদা উত্তোলনের সময় মামুন ওরফে ভাগিনা মামুনসহ একদল চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে সংঘবদ্ধ চাাঁদাবাজচক্রকে হাতেনাতে গ্রেফতারের জন্য আমরা অভিযান পরিচালনা শুরু করেছি।

আগের সংবাদ দেখুন“শাহ নিজাম”কে ঘিরেই স্বপ্ন বুনছেন উপজেলাবাসী
পরের সংবাদ দেখুনঘুমন্ত স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে দিলেন স্ত্রী