নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। উপজেলার রূপসী-কাঞ্চন সড়কে ক্ষমতাসীন নেতা হাবিবুর রহমান (বালু হাবিব) এর আপন ছোট ভাই আজাবুরের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি চলছে বলে জানান স্থানীয়রা।
প্রতিদিন ৩দফায় এ চাঁদাবাজরা প্রকাশ্যে এ চাঁদা তুলে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে গাড়ী ভাংচুর ও পরিবহণ চালককে মারধরও করা হয়। এ সড়কে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ট্রাকে চাঁদা গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এ কারণে বাজারে গিয়ে দাম বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রূপসী-কাঞ্চন সড়ক দিয়ে গন্ধর্বপুর সাইনবোর্ড এলাকায় গেলেই দেখা যায়, ৮/১০ বছর যাবত ক্ষমতাশীন নেতা বালু হাবিবের আপন ছোট ভাই আজাবুরের নেতৃত্বে গন্তর্বপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার সাহেব আলীর ছেলে আরিফ, পনিরের ছেলে সুজন ও তার ভাই নান্নু, জাকিরের ছেলে রতন, সোহরাবের ছেলে শফিকুল ও কায়েতপাড়া এলাকার সোহাগসহ ৮/১০ সদস্যের এক দল চাঁদাবাজ হাতে লাঠি সোটা নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
পণ্যবাহী ট্রাক পৌছানো মাত্রই ২/৩জন সড়কের মাঝখানে এসে ট্রাকের গতিরোধ করে ৩শ-৫শ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের চাহিদামতো টাকা দিলেই চাকা ঘুরে পণ্যবাহী ট্রাকের। অন্যথায় গাড়ি ভাংচুর ও মারধরের শিকার হয় ট্রাক চালকরা। এ সড়কে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ট্রাকে চাঁদা গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এতে বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের দাম।
তবে সড়কে পণ্যবাহী বাহনে চাঁদাবাজি বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো রকম আইনি পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণেই দিন দিন এ উপজেলায় চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম।
ট্রাক চালক রাজিব বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই রুপসি-কাঞ্চন সড়ক দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে বগুড়া যাতায়াত করে থাকি। রাত নাই দিন নাই সব সময় যতবারই এই রোড দিয়ে আমরা যাতায়াত করি আমার মতো প্রত্যেক ট্রাক ড্রাইভারকে প্রতিবাবই ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।
আমরা চাঁদা দিতে দ্বিমত প্রকাশ করলে আমাদের গাড়ির গ্লাস ভেঙে দেয়। এমনকি আমাদেরকে মারধর করা হয়। কিছু কিছু সময় তাদের লোকজন আমাদের গাড়ির ভিতরে জোর করে প্রবেশ করে আমাদের পকেটে থাকা টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আসলে আমরা নিরুপায় আমাদের কিছু বলার থাকে না।
ট্রাকচালক আমির হোসেন বলেন, এ রূপসী-কাঞ্চন সড়ক দিয়ে আসলেই ২শ টাকা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে ট্রাকের চাবি কেড়ে নেয়। আবার মারধরও করে। তাদের অমানুষিক অত্যাচারের বাধ্য করে টাকা দিতে। আমরা নিরুপায়।
ট্রাক চালক হান্নান বলেন, এখানকার চাঁদাবাজদের জন্য আমরা ট্রাক চালকরা অতিষ্ঠ। এ সড়ক দিয়ে গেলেই গুনতে হয় ৩শ টাকা আবার কোনো দিন ২শ টাকা। পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে চাঁদাবাজি না করতে সরকার সারাদেশে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু প্রশাসন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ট্রাক চালক মোহাম্মদ আলী বলেন, গাজীপুর থেকে আসছি সিটি মেইলে চিনি নিতে। এখানে এসে গাড়ি লোড করতে ২/৩দিন চলে যায়। এই খানে রাস্তায় ট্রাক রাখলে প্রতিদিনই চাঁদা দিতে হয় নয়তো তারা আমাদের মারধর করে বাসা থেকে টাকা আনায়। তারা দুইশত টাকার নিচে চাঁদা নেয় না। তাদের চাঁদা দিয়ে আমাদের খাবার এর টাকাও থাকে না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আজাবুর নারায়নগঞ্জ ক্রাইম নিউজের কাছে
অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি এ চাঁদাবাজদের কোনো রকম নেতৃত্ব দেইনি। আমার নাম ভাঙ্গিয়ে কে বা কাহারা চাঁদাবাজি করে। আমি এর সঙ্গে জড়িত নই। আপনারা যদি পারেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেন।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, রূপসী-কাঞ্চন বাইপাস সড়কে পণ্যবাহী ট্রাকে চাঁদাবাজি হয় তা আমাদের জানা নেই। এ ধরনের কোনো ঘটনা থাকলে আমরা অবশ্যই চাদাঁবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, আসলে রূপসী-কাঞ্চন সড়কে এই চাঁদাবাজির বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না। আপনাদের মাধ্যমে এই বিষয়টি জানতে পারলাম। তবে তারা কে বা কার মাধ্যমে এই ধরনের চাঁদাবাজি করে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সে যেই হোক না কেনো তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্য্যালয়: ৪র্থ তলা, রুপালী সুপার মার্কেট, চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ।
বার্তা কক্ষ: ইমেইলঃ [email protected] মোবাইলঃ 01711581634, 01921-116126
Powered by Sourav Bhuiyan