
নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজঃ কেউ বলেন মামলাবাজ। কেউ বলেন ভূমিদস্যু। কেউবা বলেন পল্টিবাজ। আবার কেউ বলেন ঢালিউডের গাঙ্গুয়া(চেহারার অবয়ব গাঙ্গুয়ার মতো)। কোন কিছুতেই যেনো তার কমতি নেই। দেখতে মনে হবে খুবই নম্র, ভদ্র। চেহারা নূরানী।
যেনো ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারেন না। অথচ তার সাম্রাজ্যে সবাই অসহায়। রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিমগাঁও যেনো এখন টুকুর সাম্রাজ্য। তার সাম্রাজ্যে পান থেকে চুন খসলেই শিকার হতে হয় হামলা-মামলার। তার মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পায়নি স্কুল শিক্ষক, আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী কিংবা ব্যবসায়ীরা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগতো দূরের কথা টু-শব্দ করার সাহস নেই কারো। দু’চারজন যারা প্রতিবাদ করেছে তারাই হেনস্থা কিংবা মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছোটকাল থেকেই ছিলো টুকু ধুরন্ধর। কোনমতো মাধ্যমিক স্কুলের চৌকাঠ মাড়ানো টুকু তরুণ বয়সেই জালিয়াতি শুরু করে। জালিয়াতি করেই তার অর্থের হাতেখড়ি। সোহাগ কমিউনিটি সেন্টারের মালিক প্রয়াত আব্দুল মোতালিবের পশ্চিমগাঁওয়ের ১২ বিঘা জমি ও ঢাকার শ্যামপুরের ৪ তলা বাড়ি কৌশলে ব্যাংকে বন্ধক রেখে টাকা ঋণ নেন।
সেই টাকা দিয়ে দাউদকান্দি টোল প্লাজার ঠিকাদারি বাগিয়ে নেয়। এটা নিয়ে তৎকালীন সময়ে আব্দুল মোতালিবের সঙ্গে তার দা-কুঁমড়া সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে একই এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের সহযোগীতায় ক্ষমা চেয়ে ঐ যাত্রায় রেহাই পায় টুকু। এর পরপরই এলাকায় গড়ে তোলে নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী। এ বাহিনী জমি দখল থেকে শুরু করে ছিনতাই, ডাকাতি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলেন, দেখতে যেনো টুকু নম্র-ভদ্র। চেহারা নূরানী। চলেন সাধাসিধে। কিন্তু তার আগে-পিছে থাকে বড় বহরের সন্ত্রাসী বাহিনী। খন্দকার মনির, বিল্লাল হোসেন ও মজনু মিয়া এ বাহিনীর প্রধান। মনিরের কাছে রয়েছে অস্ত্রের ভান্ডার। সে নোয়াপাড়া এলাকায় চৌধুরির বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে অস্ত্রসহ আটক হয়। আর বিল্লাল ঢাকার বাসাবো এলাকায় গাঁজাসহ র্যাবের হাতে আটক হয়। তার সাম্রাজ্যে কেউ কথা বলার সাহস রাখে না। আর যারা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা ঠুঁকে দেয়।
এলাকাবাসীরা বলেন, তার মূল কাজ জমি জবরদখল করা। আওয়ামীলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে গত কয়েক বছরে সে অনেকের জমি জবরদখল করেছে। কথা হয় এদের মধ্যে একজন সুমন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার সাড়ে ৩ শতক জায়গা দখল নিয়া গেছে। শুধু আমরাটা না, আমার ভাই রিপন ও বোন পারুলের জায়গাও দখলে নিয়া গেছে। উল্টা আরো হামলা ও মিথ্যা মামলার ভয় দেখায়। গোটা পশ্চিমগাঁও টুকা ও তার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। কথা হয় আরেক ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, টুকুর থাবা থেকে আমার সামান্য জমি রেহাই পায়নি। সে তার বাহিনী দিয়ে জমি জবরদখল করে নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে স্থানীয় ৩ যুবক মোঃ আজগর হোসেন খোকন, রফিকুল ইসলাম রফিক, মোঃ ইব্রাহিম খলিল খোকন এখন ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি ঐ তিন যুবকের বিরুদ্ধে আদালতে তিনটি মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেছে।
দখল করে নিয়েছে তাদের কেনা পৌনে ১০ শতক জমি। কথা হয় আজগর হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা তার অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। এ কারণে আমাদের নামে তিনটা চাঁদাবাজি মামলা করেছে নারায়ণগঞ্জ আদালতে। আমাদের কেনা পৌনে ১০ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে। মিথ্যা মামলার শিকার হওয়া পশ্চিমগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিনি কয়েক বছর আগে কৃষি জমিতে বালু ভরাট করতে গেলে প্রতিবাদ করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওনি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। শুধু আমার নামেই নয়, ঐসময় যারাই প্রতিবাদ করেছে তাদের গণহারে মামলা দেয়।
এলাকাবাসীরা বলেন, অবৈধ গ্যাসলাইন দিয়ে পশ্চিমগাঁও, কেওঢালা ও দক্ষিণপাড়া গ্রামের সাড়ে ৮শ’ পরিবার থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ টাকা সে তার ফিলিপাইনে পড়–য়া ছেলের কাছে পাঠিয়েছে। কথা হয় ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, গ্যাস লাইনের জন্য টুকু আমার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। পালের গরু বেইচ্যা টাকা দিছিলাম।
এখনতো লাইনই নাই। হাবিবুরের মতো মোক্তার হোসেন, খোরশেদসহ অনেকে পালের গরু, স্ত্রীর সোনার গহনা বিক্রি করে টুকুকে টাকা দিয়েছিলো বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমাজকল্যাণ সমিতির পদবহনকারী একজন বলেন, সে স্থানীয় সমাজকল্যাণ সমিতির ৩২ শতাংশ জমি বিক্রির টাকা আত্মসাৎ করেছে। ওনি স্বীকারোক্তি দিয়েছিলো এ টাকা পশ্চিমগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিয়ে দিবে। আজ পর্যন্ত তা ফেরত দেয়নি।
টুকুর ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানায়, তার ধানমন্ডিতে রয়েছে ফ্ল্যাট। পশ্চিমগাঁও মৌজায় রয়েছে ২০ বিঘার মতো জমি। এক ছেলে লন্ডনে লেখাপড়া করে দেশে ফিরেছেন। আরেক ছেলে ফিলিপাইনে লেখাপড়া করে চাকুরী করছেন। এলাকায় গ্রীণ কনক্রীট সিরামিক কারখানা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান ঐ সূত্রটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল বাশার টুকুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি যেসকল সম্পদ করেছি সেগুলো বৈধ ভাবে করেছি। অবৈধভাবে কোন সম্পদ অর্জন করেছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন কারী যে হউক না কেন তাকে কোনভাবই ছাড় দেওয়া হবে না। আইনের আওতায় এনে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে:কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, অপরাধিদের খুজে বের করার জন্য আমরা কাজ করছি। টুকুর বিষয়ে খোজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।