A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সিংহপুরুষ ও সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের বড় ভাই প্রয়াত সাংসদ একেএম নাসিম ওসমানের নামে প্রতিষ্ঠিত নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (নম পার্ক) কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে জামায়াত শিবির ও বিএনপির ক্যাডাররা নগ্নভাবে হামলা, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে পার্কটি জ¦ালিয়ে দেয়। এসময় আটকে পড়া চারজন কর্মচারী একটি কক্ষে আটকে পড়ে। পরবর্তীতে একেএম শামীম ওসমানের নেতৃত্বে হামলাকারীদের ধাওয়া দিয়ে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার করা হয়। নমপার্কে অগ্নিকান্ড ও ভাংচুরের ঘটনায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ক্ষতিসাধণ হয়েছে বলে নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে নিশ্চিত করেছেন পার্কটির দায়িত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম।

প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের পরিচয়: নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। নাসিম ওসমান প্রথমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তার বাবা এ কে এম শামসুজ্জোহা ছিলেন প্রখ্যাত আওয়ামীলীগ নেতা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম সহচর। পরবর্তীতে নাসিম ওসমান বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে পড়েন। তিনি ১৯৮৬, ১৯৮৮, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে ৪ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মুক্তিযুদ্ধে যোগদান: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নাসিম ওসমান পালিয়ে ভারতে চলে যান। সেখানে তিনি গেরিলা যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশে ফিরে এসে যুদ্ধ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে গেছেন তিনি। লাল সবুজের পতাকা জাতীকে উপহার দেওয়ার জন্য নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করেছেন তিনি।

শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রতিশোধ নিতে তার ভুমিকা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের সকলের সাথে হত্যা করা হয়। তার আগের দিন ১৪ আগস্ট তিনি পারভীন ওসমানকে বিয়ে করেন। বিয়েতে শেখ মুজিবুর রহমানের পুত্র শেখ কামাল উপস্থিত ছিলেন। ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে নাসিম ওসমান নবপত্নীকে ফেলে হত্যার প্রতিশোধ নিতে চলে যান। তিনি ঢাকায় প্রতিরোধ গড়াার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তিনি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাহিনীতে যোগ দেন। এরপর তিনি আবার ভারতে চলে যান এবং সেখানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন। তৎকালীন কাদের বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।


নাসিম ওসমানের মৃত্যু: নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের সাংসদ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এ কে এম নাসিম ওসমান ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল ইন্তেকাল করেছেন।
নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (নম পার্ক) উদ্বোধন: ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (নম পার্ক) উদ্বোধন করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমান এর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ এ কে এম শামীম ওসমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম প্রমুখ।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র জানায়,সাংসদ শামীম ওসমানের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্পত্তি শাখা ১ দশমিক ৪৪ একর ভূমি অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদকে অনুমতি দেয়। পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস সেখানে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে পার্ক নির্মাণ করতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজামের মালিকানাধীন মেসার্স জেড এন টির সঙ্গে ইজারা চুক্তি করেন। এ চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া হিসেবে বছরে দুই লাখ টাকা পাবে উপজেলা পরিষদ।

আপাদমস্তক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী: নাসিম ওসমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং আপাদমস্তক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি শুধু প্রত্যক্ষ মুক্তিযুদ্ধই করেননি, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘাতকরা সপরিবারে হত্যা করলে এর প্রতিশোধ নিতে তিনি অংশ নিয়ে ছিলেন প্রতিরোধ যুদ্ধেও।
১৯৫৩ সালের ৩১ জুলাই নারায়ণগঞ্জে ঐতিহাসিক ওসমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নাসিম ওসমান। তার বাবা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত (মরণোত্তর) প্রয়াত এ কে এম শামসুজ্জোহা ছিলেন ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তার মা মরহুম বেগম নাগিনা জোহাও ছিলেন ভাষাসৈনিক।
সদালাপী নাসিম ওসমান ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান। ছাত্রজীবনে পরিবারের ভূমিকায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নাসিম ওসমান আওয়ামী লীগের রাজনীতি দিয়ে জীবন শুরু করে ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন অকুতোভয় বীরসেনানী। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নাসিম ওসমান ভারতে চলে যান। সেখানে তিনি গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশে ফিরে এসে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।

নম পার্কে হামলার কারণ: নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (নম পার্ক)টি নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এই পার্কটির দায়িত্বে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ শামীম ওসমানের  স্নেহধন্য, বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন ও পরীক্ষিত কর্মী নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম। এই পার্ক থেকেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এখানেই নারায়ণগঞ্জের প্রাণ পুরুষ শামীম ওসমান নেতাকর্মীদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এই পার্কে বসেই। আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ন কর্মসূচী, সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন করা হয় এই কার্যালয়ে থেকে।
কোটা আন্দোলনকারীরা টার্গেট ও পরিকল্পনা করেই নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (নম পাক)’ এ, হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ক্ষতি সাধণ করেন।

রাজণৈতিক বিশ্লেষকরা মনে বলছেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের চারবারের প্রয়াত সাংসদ নারায়ণগঞ্জবাসীর আশা আকাঙ্খা ও ভালবাসার আশ্রয়স্থল একেএম নাসিম ওসমানের নামে এই পার্কটির নাম করণ করায় এই পার্কটির কদর নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে অত্যন্ত বেশি। অন্যদিকে এই পার্কটিতে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মিছিল, মিটিং, সভা, সমাবেশ হওয়ায় এর গুরুত্বও রাজনীতিবিদসহ সকলের কাছে কোন অংশে কম নয়। তাই রাজনৈতিক, সামাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই এই জামায়াত শিবির ও বিএনপির কর্মীরা অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও তান্ডবলীলা চালিয়েছেন।

নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (নম পার্ক)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক শাহ নিজাম বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্কটিতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট চালাবে এটা আমি কোনভাবেই বিশ^াস করিনা। তিনি বলেন, এই পার্কটিতে প্রবেশ করতে ছাত্র-ছাত্রীদের কোন প্রবেশ ফ্রি লাগে না। সম্প্রতি ফতুল্লার আদর্শ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকরা এই পার্কটিতে শিক্ষাসফরে এসেছিলেন। তাদের কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়া হয় নি। এভাবে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাথীরা বিনামূল্যে শিক্ষাসফরে আসেন নম পার্কে।

দৃঢ় কন্ঠে শাহ নিজাম বলেন, নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল অ্যামিউজমেন্ট পার্ক (নম পার্ক)টিতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, চালিয়েছেন জামায়াত শিবির ও বিএনপির কর্মীরা। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ^াস করে না। দেশের উন্নয়ণকে বিশ^াস করে না। এ পার্কটিতে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার ক্ষতি সাধণ হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এ পার্কে হামলা করে একজন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার সন্মান নষ্ট করেছে। সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অসন্মান করা হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহিৃত করে অবিলম্বে গ্রেফতারের জোড় দাবি জানান এই বর্ষিয়ান নেতা।

 

 

 

আগের সংবাদ দেখুনশেখ হাসিনাকে ক্ষমতাকে সরানো সহজ নয়: শামীম ওসমান
পরের সংবাদ দেখুনডিবি থেকে সরিয়ে দিলেন হারুনকে