
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের মেঘনা নদীতে নৌযান শ্রমিককে কুপিয়ে রক্তাক্ত যখম করেছেন নৌ চাঁদাবাজরা। সকালে উপজেলার কালাপাহাড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত ওই শ্রমিকের নাম আব্দুল আলীম। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত দেড় মাসে কমপকক্ষে অর্ধশতাধিক শ্রমিক ও জাহাজের সুকানিকে পিটিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
নৌযান মালিক ও শ্রমিকরা জানান, আড়াইহাজারে মেঘনা নদীতে বিভিন্ন নৌযানে অবাধে চাঁদাবাজি চলছে। ফলে নৌযান মালিকসহ নৌপথের ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। নৌপথে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে নৌযান মালিকরা ইতোমধ্যে বিআইডবিউটিএ এর কাছে চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, কিশোরগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পাথর, বালু, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী জাহাজ মেঘনা নদীর আড়াইহাজার উপজেলার দয়াকান্দা- বিবির কান্দি এলাকা দিয়ে নুনেরটেক, বৈদ্যেরবাজার ও মেঘনা সেতু এলাকা হয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলায় যাতায়াত করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের পরিচয়ে আড়াইহাজার অংশে ব্যাপক চাঁদাবাজি করছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজরা তাদের মারধর করে নদীতে ফেলে দেয়। এসব বিষয়ে প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায় নি বলে জানান তারা।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের ছাত্রদল নেতা রতন মিয়া, যুবদল নেতা ফুল মিয়া ও দুলাল মিয়াসহ ১৫/২০জনের একদল চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট প্রতিদিন পৃথক পৃথক স্পিডবোট যোগে এই চাঁদা আদায় করে থাকে। নৌযানের ধরণ অনুযায়ী চাঁদার হার নির্ধারণ করে চাঁদা নেয়া হয়। নৌযান ভেদে পাঁচ‘শ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করেন তারা। তবে ছাত্রদল নেতা রতন মিয়া, যুবদল নেতা ফুল মিয়া ও দুলাল মিয়া চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নন বলে দাবি করেন তারা।
নৌযান শ্রমিক আব্দুর রহমান জানান, আমরা পাথর বোঝাই করে আসার সময় মেঘনা নদীর কালাপাহাড়িয়া এলাকায় আসার পর আমাদের বল্বহেড থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় আমাকেসহ বাল্কহেডের চালককে পিটিয়ে আহত করে আমাদের মোবাইল ফোন ও টাকা পয়শা ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। আহত শ্রমিক আব্দুল আলিম জানান, গত পাঁচ তারিখের পরে মেঘনা নদীর কালাপাহাড়িয়া এলাকায় আমাদের উপর জুলুম, অত্যচার চালিয়ে মোবাইল ফোন,টাকা পয়শা সবকিছু ছিনিয়ে নিচ্ছে এই চাঁদাবাজরা।
চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আমাকে কুপিয়ে মারাত্মভাবে আহত করেছে। জানতে পেরেছি চাঁদাবাজরা আড়াইহাজার উপজেলার বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান সুমনের সমর্থক। আমরা চাঁদাবাজদের হাত থেকে বাঁচতে চাই।
জাহাজের সুকানি কুদরত মিয়া জানান, আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর বিএনপির নামধারী কতিপয় সন্ত্রাসী আমাদের কাছ থেকে জোড়পূর্বক চাঁদা আদায় করছেন। তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দিলে আমাদেরকে মেরে ফেলার হুমকিসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে থাকে। আমাদের জীবনের মায়া ছেড়ে দিয়ে জাহাজ চালাতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার কালের কন্ঠকে জানান, গত দেড় মাসে আমাদের বিভিন্ন জাহাজ ও নৌযান শ্রমিকের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক লোককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছেন চাঁদাবাজরা। এ বিষয়ে নৌ পুলিশের পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা চাঁদাবাজদের হাত থেকে শ্রমিকদের রক্ষা করার জন্য বড় ধরনের কর্মসূচী হাতে নিয়েছি।
খাগকান্দা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, নৌযানে চাঁদাবাজির বিষয়ে আমরা কয়েকবার চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করতে মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছি। চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য আমরা টহলের ব্যবস্থা জোড়দার করেছি।
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদুর রহমান জানন, মেঘনা নদীতে বিভিন্ন নৌযানে চাঁদাবাজির বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ করলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা সহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যানালিয়ন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, নৌপথে চাঁদাবাজদের বিষয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। চাঁদাবাজদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।