
নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ
‘সেভ দ্য রোড’ এর প্রতিবেদন ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রশাসনের সক্রিয়তায় চালক, পথচারি ও যাত্রী সাধারণের মধ্যে সচেতনতা ও সাবধানতার কারণে পথে মৃত্যু কমলেও বেড়েছে দূর্ঘটনা ও আহতের সংখ্যা। ২০২৩ সালের ১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪০৬ টি ছোট-বড় দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৮৯৪ জন, নিহত হয়েছেন ৪০২ জন।
সোমবার (৩ এপ্রিল) ‘সেভ দ্য রোড’ এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা স্বাক্ষরিত এক মাসিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে জানা যায়, বাইক লেন না থাকা, ‘সেভ দ্য রোড’ এর নিয়মিত প্রতিবেদন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইন’সহ বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা কিছুটা কমলেও ৯৮৪টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯০৬ জন, নিহত হয়েছেন ৮৮ জন। ৬৪৫টি ট্রাক দুর্ঘটনায় আহত ৭১৮ এবং নিহত হয়েছেন ৮৭ জন। নির্ধারিত গতিসীমা না মেনে, বিশ্রাম না নিয়ে টানা ১২ থেকে ২০ ঘন্টা বাহন চালনা’সহ বিভিন্ন নিয়ম না মানায় ৮৮৯টি বাস দুর্ঘটনায় আহত ৯৩৭ এবং নিহত হয়েছেন ১৩৭ জন। দায়িত্বে অবহেলা, স্থানিয় পুলিশ-প্রশাসনের দুর্নীতি’সহ বিভিন্নভাবে সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধ বাহন নাসিমন-করিমন এবং অন্যান্য ৩ চাকার বিভিন্ন ধরণের বাহনে ৮৮৮টি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯৩৩ এবং নিহত হয়েছেন ৯০ জন।
‘সেভ দ্য রোড’ এর চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনাম, প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদী, ভাইস চেয়ারম্যান বিকাশ রায়, জিয়াউর রহমান জিয়া, আইয়ুব রানা ও লায়ন ইমাম হোসেন এর তত্বাবধানে দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক দেশ রূপান্তর, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক জনকন্ঠ, দৈনিক কালবেলা’সহ ১৭টি জাতীয় দৈনিক, আরটিভি, জিটিভি, যমুনা নিউজ, মাছরাঙ্গা, এটিএন বাংলা’সহ ২০টিভি চ্যানেল, জাগো নিউজ, বাংলা নিউজ, বিডি নিউজ’সহ ২২টি নিউজ পোর্টাল এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ‘সেভ দ্য রোড’ এর স্বেচ্ছাসেবীগণের দেয়া তথ্যানুসারে এই প্রতিবেদন দুর্ঘটনামুক্ত পথের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
আকাশ, সড়ক, রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত করার জন্য নিবেদিত দেশের একমাত্র সচেতনতা, গবেষণা ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ‘সেভ দ্য রোড’ এর পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, ১ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত নৌপথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৭টি। এতে আহত ৯৭ জন এবং নিহত হয়েছেন ১৭ জন। রেলপথে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৯টি। এতে আহত ৭২ এবং নিহত হয়েছে ১৮ জন। আকাশপথে কোন দুর্ঘটনা না ঘটলেও বিমানবন্দরের অব্যবস্থাপনার কারণে সাধারণ যাত্রীদের ১টি বড় অংশ শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথের দুর্ঘটনামুক্ত পথ চলাচলের অধিকার রক্ষায় মালিক-শ্রমিক-প্রশাসনিক এবং সাধারণ জনগনের সমন্বয়ের কোন বিকল্প নেই বলে ‘সেভ দ্য রোড’ মনে করে। আর তাই বারবার ৭ দফায় ফিরে যায়। পাশাপাশি ‘সেভ দ্য রোড’ এর পক্ষ থেকে গত ১৪ বছর যাবৎ ৪ পথ দুর্ঘটনামুক্ত করতে ‘সেভ দ্য রোড’ এর ৭ দফা দাবী নিয়ে এগিয়ে চলা অব্যহত রয়েছে ছাত্র, যুব-জনতা, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার ঐক্যবদ্ধতায়।
আর সেই ৭ দফা হলো- মিরেরসরাই ট্রাজেডিতে নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করা; ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দেওয়া; সড়কপথে ধর্ষণ ও হয়রানি রোধে ফিটনেস বিহীন বাহন নিষিদ্ধ এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ ও জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যতিত চালক ও সহযোগী নিয়োগ এবং হেলপার দ্বারা পরিবহন চালানো বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা; স্থল, নৌ, রেল ও আকাশপথে দূর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ১০ লাখ ও আহতদের ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ সরকারীভাবে প্রদান করা; ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন’ বাস্তবায়ন করা; পথে দূর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করণের মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করা এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের পূর্ব পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ ও নৌ পুলিশ’সহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা, সহমর্মিতা ও সচেতনতার পাশাপাশি সকল পথের চালক, শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া; সকল পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক করা; ইউলুপ বৃদ্ধি, পথ ও সেতু’সহ সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ে দূর্নীতি প্রতিরোধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। যাতে ভাঙা পথ, ভাঙা সেতু আর ভাঙা কালভার্টের কারণে আর কোন প্রাণ দিতে না হয়।
‘সেভ দ্য রোড’ এর অঙ্গীকার, পথ দূর্ঘটনা থাকবে না আর’ বাক্যটিকে লালনে রেখে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে ২০০৭ সালে পথচলা শুরু করে আকাশ, সড়ক, রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত করার জন্য নিবেদিত দেশের একমাত্র সচেতনতা, গবেষণা ও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন ‘সেভ দ্য রোড’।