
নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজঃ মানবতার এক উজ্জ্বল দুষ্টান্ত তিনি। যখনই যে জেলায় গিয়েছেন ওই জেলার অসহায়, নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষের পাশে ছায়া হয়ে থেকেছেন। কারো দূর্দিনের কথা, কষ্টের কথা শুনলেই ঝটপট সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন। জেলার বাসিন্দাদের অসহনীয় দূর্ভোগ লাঘবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। বলছি নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞার কথা। যিনি ইতিপূর্বেই দেশ সেরা মানবিক জেলা প্রশাসক হিসেবে ভূষিত হয়েছেন। অসহায় মানুষের শুশ্রুষা করে মানবতার ফেরীওয়ালা হিসেবে নিজের প্রমাণিত করেছেন।
জাহিদুল ইসলাম মিঞা ১৯৭৯ সালের অক্টোবর মাসে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের একটি সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা অগ্রণী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ চাঁদ মিঞা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলেন। তিন সন্তানের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম হচ্ছেন সবচেয়ে বড়।
ছাত্রজীবন থেকেই অত্যান্ত মেধাবী ছিলেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম বিভাগ কৃতিত্বের সঙ্গে রাশিয়ান ভাষায় ডিপ্লোমা অর্জন করেন। পরবর্তীতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বৃত্তির আওতায় আন্তর্জাতিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় কৃতিত্বের সঙ্গে যুক্তরাজ্য থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সহকারী কমিশনার হিসেবে লালমনিরহাট জেলায় যোগদান করেন। জেলার এনডিসি হিসেবে দীর্ঘ সময় লালমনিরহাট ও পরে নীলফামারী জেলায় দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী ও মৌলভীবাজারের সদরে উপজেলায়ও দায়িত্ব পালন করেন। পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়ে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে এবং নোয়াখালী জেলার চাটখিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কর্মদক্ষতার পুরস্কার হিসেবে কমলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন ২০১৫ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পুরস্কৃত হন তিনি। তারপর থেকে যে জেলায় তিনি গিয়েছেন সেখানেই মানবিকতার প্রমাণ দিয়েছেন। আর ওই অঞ্চলের মানুষের কাছে একজন মানবিক দেশপ্রেমিক জেলা প্রশাসক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। মানুষের দু:খ,দূর্দশা ও ভালো মন্দের কথা ভেবেই তার বেশীরভাগ সময় কাটে।
দেশের যেই জেলায়ই গিয়েছেন সেখানেই মানবিকতার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। ওই অঞ্চলের মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়েছেন। তেমনি প্রাচ্যের ড্যান্ডি নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেই এ জেলার সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। তা নিরসনে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসহায় মানুষের সন্ধান করে করে তাদের সেবার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। মানুষের কথা শুনছেন আর সহযোগীতায় এগিয়ে আসছেন। ইতিমধ্যে তাকে জেলার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ মানবিক ডিসি ডাকতে শুরু করেছেন।
আব্দুর রহমান নামে নারায়ণগঞ্জ সদর এলাকার এক বাসিন্দা জানান, জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা। ইতোমধ্যে তিনি নারায়ণগঞ্জের রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে তার প্রচেষ্টা প্রশংসা কুড়াচ্ছেন।
করিম মিয়া নামে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার এক বাসিন্দা জানান, জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর আমি তার কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমার কথাগুলো শুনে সাথে সাথেই কাজটি করে দিয়েছেন। তিনি একজন মানবতার প্রতীক। এমন জেলা প্রশাসক পেয়ে নারায়ণগঞ্জবাসী ধন্য হয়েছেন বলে আমার বিশ্বাস।
রহমান মিয়া নামে ফতুল্লার এক বাসিন্দা জানান, যতদূর শুনেছি তিনি একজন মানবিক জেলা প্রশাসক। এর আগে যে জেলায় ছিলেন বা যখনই যেখানে গিয়েছেন ওই জেলাকে একটি মনোরম পরিবেশ উপহার দিয়েছেন। ওখানকার মানুষের মুখে মুখে তার ভালো কাজের সুনাম ছড়িয়ে আছে। তিনি বলেন যতদূর শুনতে পেরেছি জনগণের দোরগোড়ায় সৎভাবে সঠিক সেবা পৌঁছে দেওয়াই তার মূল লক্ষ্য।
প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যত কাজ আছে তার করতে কখনো কৃপনতা করেন না তিনি। মানুষ যেন কোনো রকম হয়রানির শিকার না হয়ে সঠিক সেবা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে পান সেদিকে সবসময় নজর থাকে তার।
আড়াইহাজার এলাকার বাসিন্দা কৃষক শরীফুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জে এসেই জেলার কৃষিজমি রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। খাদ্য ঘাটতি দূর করার লক্ষ্যে জেলার সকল দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রুপান্তরিত করতে স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি। মাত্র দুইটি ফসল ফলানোর পরে অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকা জমিগুলোতে আরেকটি ফসল ফলানোর জন্য নতুন পাইলট প্রকল্প চালু করেছেন দেশজুড়ে মানবিক জেলা প্রশাসক হিসেবে পরিচিত জাহিদুল ইসলাম মিঞা। তার এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
হৃদয় হোসেন নামে এক বাসিন্দা বলেন, আমরা বেশিরভাগ জমিতেই দুই ফসল চাষ করতাম। এরপর অনাবাদি থাকতো। কিন্তু ডিসি স্যার আমাদের গ্রামে এসে সারা বিশ্বে কৃষি জমি ক্রমাগত কমে যাওয়ার ভয়াবহ প্রভাব ও ক্রমবর্ধমান খাদ্য সংকটের কথা জানালেন। তার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা আমার পুরো জমিতে এখন সবজি চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি এর সুফল সকলেই ভোগ করবে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই প্রতিবন্ধীদের জন্য একের পর সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন তিনি। মাথায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কলেজছাত্র সোহাগকে পড়াশোনার জন্য স্মার্ট ফোন উপহার দেওয়ার খবরে জেলার শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার দেখা দিয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে প্রতিবন্ধী ও শিশুদের মাঝে হুইল চেয়ার ও শিক্ষা সহায়তা উপকরণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন তিনি।
এ সময় জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, সূর্যের সৌন্দর্য তাপ, সমুদ্রের সৌন্দর্য ঢেউ। ঠিক তেমনই মানুষের সৌন্দর্য মানবিকতা। যারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, তাদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সবাইকে নিয়ে জেলা প্রশাসন কাজ করবে। তাদের স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে জেলা প্রশাসন সবসময়ই তাদের পাশে থাকবে।
প্রতিবন্ধী ফারুক আহমেদ বলেন, স্যার নারায়ণগঞ্জের মাটিতে পা রেখেই সর্ব প্রথম নজর দিয়েছেন আমাদের প্রতিবন্ধীদের দিকে। তাই বুঝতে বাকি থাকে না ডিসি মহোদয় কতটা দূরদর্শী, কতটা মানবহিতৈষী কল্যাণকামী উত্তম জনসেবক। এছাড়াও অসহায়, অস্বচ্ছল মানুষের সেবায় তার রয়েছে সহযোগীতার ভান্ডার।
মানবিক সাহায্যের যেকোনও আবেদন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। প্রতিদিনই এমন অসংখ্য অসহায় মানুষের ভিড় লেগেই থাকে ডিসির কার্যালয়ে। প্রতিটি সাহায্য প্রার্থীর সঙ্গে জেলা প্রশাসক নিজে কথা বলেন। তাদের যথাসাধ্য আপ্যায়ন করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে বলেন, মানুষের সেবা করার জন্যই প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিয়েছিলাম। আমি সব সময় চেষ্টা করি মানবিক সাহায্যের আবেদন দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করার। তাদের জরুরি আর্থিক সাহায্য দরকার বলেই আমার কাছে আবেদন করেছেন। জীবনে যতদিন বাঁচবো যেখানেই থাকবো মানুষের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।