প্রতিবছরই সারা বিশ্বের শ্রমজীবীদের ন্যায় বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেনী ও বিভিন্ন সংগঠন-দল, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মে-দিবস উদযাপন করে আসছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধিও কারণে শ্রমজীবী পরিবার যখন কঠিন দুরবস্থায়, তখন আমরা মে-দিবস উদযাপন করছি। আমরা সকলেই জানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরী হার সর্বনিম্ম পর্যায়ে।
এছাড়াও মানুষ হিসেবে বসবাস ও জীবন যাপনের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন ও ভবিষ্যৎ সঞ্চয় বলতে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। একজন শ্রমিক ও তার পরিবারের ভবিষ্যৎ বলতে এখন আর কিছু নেই। একভাবে শ্রমিকদের নব্যদাসে পরিনত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ৭৬ ভাগ রপ্তানি আয় করে, এ শিল্প এখন বিশ্ব প্রতিযোগিতায় ২য় স্থান অতিক্রম করে বিশ্বের শীর্ষ স্থানে উন্নিত করার ঘোষণা দিয়েছে অথচ এই শিল্পের শ্রমিকদের বেতন বিশ্বের সর্বনিম্ম পর্যায়ে। পোষাক শিল্প সহ প্রায় সকল শিল্প কারখানার শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার শক্তভাবে হরণ করা হয়েছে। যার কারণে শ্রমিকরা নির্যাতিত হলেও সংগঠিত ভাবে কোন প্রতিবাদ করতে পারে না। শ্রমিকরা আজ নিজেদের ন্যায্য দাবি দাওয়া নিয়ে মালিকদের কাছে কোন আবেদনও করতে পারে না। মালিক শ্রেনী অযৌক্তিক মুনাফার জন্য সরকার ও রাষ্ট্র শক্তিকে ব্যবহার করছে।
১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে মালিকেরা শ্রমিকদের সাথে যে আচরণ করেছিল আজ বাংলাদেশের মালিক শ্রেনীও শ্রমিকদের সঙ্গে অনুরুপ আচরণ করে চলেছেন। ১৩৭ বছর আগে আমেরিকার শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কর্ম দিবসের জন্য যে কালজয়ী সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল সেই সংগ্রাম আজ সাগর-মহাসাগর অতিক্রম করে বিশ্বের প্রতিটি দেশে সূর্যের আলোর মতো ছড়িয়ে পড়েছে। পৃথিবীর নির্যাতিত শ্রমিক শ্রেনীর আর্তনাদ মহান মে-দিবসে বজ্রকন্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে-’দুনিয়ার মজদুর এক হও’।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল মহান মে দিবসের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল শোষণ মুক্তির চেতনা। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার হরণ করা কিংবা মৌলিক অধিকার হরণ করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল না। যেহেতু পুজিঁবাদের ধর্ম মানুষের সম্পদ শোষন ও লুটপাট করে মানুষকে তিলে-তিলে নিঃস্ব করে দেওয়া। স্বাধীনতা পরবর্তী ৫১ বছরে পুজিঁবাদ বা মালিক শ্রেনী তাদের পক্ষের রাজনীতি দিয়ে বাংলাদেশের জমিনে সহজে এই কাজটি করে ফেলেছে। যার কারণে বাংলাদেশে একদিকে হাজার কোটি টাকার মালিক এবং গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রি আর অন্যদিকে ৬৮% মানুষ ভূমিহীন এবং ৪ কোটি মানুষ বেকার।
পুজিঁবাদি সিন্ডিকেট মুনাফার নামে যখন তখন দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি করে যে লুটতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এর পরিনতি বা দূর্ভোগ থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে শ্রমিক শ্রেনীকে শোষণ মুক্তির চেতনায় জাগ্রত হতে হবে। তবেই মহান মে-দিবসের চেতনা বাস্তবায়িত হবে বা মহান মে দিবস উদযাপন করার স্বার্থকতা আসবে। “দুনিয়ার মজদুর এক হও”।
এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল
সভাপতি, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্য্যালয়: ৪র্থ তলা, রুপালী সুপার মার্কেট, চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ।
বার্তা কক্ষ: ইমেইলঃ [email protected] মোবাইলঃ 01711581634, 01921-116126
Powered by Sourav Bhuiyan