A Top Ads

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আনন্দ হাউজিংয়ে অবস্থিত একটি আলিশান বাড়ি। একসময় ক্ষমতাধর পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের পা পড়লে বাড়িটির আশপাশের এলাকা থমথমে হয়ে যেতো। নিরাপত্তাকর্মী থেকে শুরু করে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সরব উপস্থিতি ও পদচারণায় মুখর হয়ে উঠতো বাড়িটি।

ডুপ্লেক্স বাড়িটির চতুর্দিক নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখতেন প্রশাসনের লোকজন। এর আশপাশের রাস্তা দিয়ে স্থানীয়দের স্বাভাবিক চলাচলেও আরোপ করা হতো নিষেধাজ্ঞা। এখন প্রভাবশালী সেই বেনজীর আহমেদের দেখা নেই। উপস্থিতি নেই তার সাঙ্গপাঙ্গদেরও। ফলে আলিশান বাড়িটিতে এখন সুনসান নীরবতা। সম্প্রতি বাড়িটি পরিদর্শন করে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্বাচলের দক্ষিণবাগ এলাকায় গুতিয়াব মৌজায় অবস্থিত ‌‘আনন্দ হাউজিং সোসাইটি’। এর ছয়টি প্লটের ২৪ কাঠা জমির ওপর ‘সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে আলিশান বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০২২ সালের দিকে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। বেনজীর আহমেদ দেশে অবস্থানকালে মাঝে মধ্যে এই বাড়িতে আসতেন এবং অবসরে রাতযাপনও করতেন। বাড়িটিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় কেয়ারটেকারের পাশাপাশি দুটি কুকুরও রাখা হয়েছিল। কুকুর দুটি এখনো রয়েছে।

২০২৪ সালের ২৩ মে আদালতের আদেশে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এছাড়া ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে। এর ভেতর এ বাড়িটিও ছিল।

রূপগঞ্জ উপজেলার অধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির জন্য জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগ করেন আদালত। পরে জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশক্রমে এটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়।

২০২৪ সালে আদালত কর্তৃক বাড়িটি ক্রোক হওয়ার পরে পুরোপুরি রাষ্ট্রের অধীনে চলে যায়। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক বাড়িটির সার্বিক দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। এখানে দুজন নিরাপত্তাপ্রহরী বাড়িটি নিরাপত্তা দায়িত্বে। একজন বেনজীর আহমেদের সময়কার কেয়ারটেকার রতন মিয়া ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিয়োগ পাওয়া একজন আনসার সদস্য। এছাড়া রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হাবিবুল্লাহ নিয়মিত বাড়িটি দেখাশোনা করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়িতে প্রধান যে দুটি ফটক রয়েছে তা সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। ফলে এরপর থেকে আর কেউ বাড়িটিতে প্রবেশ করতে পারেননি। বাড়ির ভেতর যত আসবাবপত্র রয়েছে, সবগুলো আগের অবস্থায়ই রয়েছে। তবে বাইরের অংশে আলোচিত সেই দুটি কুকুর এখনো দেখা গেছে। পাশাপাশি বাড়িটির সৌন্দর্যবর্ধনে চতুর্দিকে যেসব গাছপালা রোপণ করা হয়েছিল, সেগুলোর পরিচর্যার অভাব লক্ষণীয়। সবমিলিয়ে বাড়িটিতে এখন সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণবাগ এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী এক পরিবারের কাছ থেকে জমিটি আনন্দ হাউজিং সোসাইটির নামে কেনা হয়েছিল। পরে এ জমিতে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করা হয়। প্রায়সময় এ বাড়িতে আত্মীয়-বন্ধুদের নিয়ে আসতেন বেনজীর আহমেদ।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তো এ জমি বিক্রি করতে চাইনি। বালু ভরাটের সময়ও বাধা দিছিলাম। কিন্তু তাগো লগে কি আর পারা যায়? পরে উপায় না দেইখা বিক্রি কইরা দিছি।

রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. হাবিবুল্লা জাগো নিউজকে বলেন, প্রশাসনিক নির্দেশে আমরা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বাড়িটির নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাপ্রহরী নিয়োগ দিয়েছি।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ডুপ্লেক্স বাড়িটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক একজন গ্রামপুলিশ সদস্য সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। আদালত কর্তৃক পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এ অবস্থা চলমান থাকবে।

সূত্রঃ জাগো নিউজ

আগের সংবাদ দেখুনসোনারগাঁয়ে শ্রমিক দলের  লিফলেট বিতরণ
পরের সংবাদ দেখুনব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে আবারও স্বৈরাচার তৈরি হবে: সুজন সম্পাদক