A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নির্বাহী  সদস্য অধ্যাপক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে সোনারগাঁ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল ওমর বাবুর বিরুদ্ধে।

বুধবার দুপুরে সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর এলাকায় বিএনপির ডাকা অবরোধের প্রতিবাদে আওয়ামীলীগের শান্তি সমাবেশে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে আবারও বিভেদের বিষয়টি প্রকাশ পেল এমনটাই মনে করছেন আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন কর্মসূচিকে ঘিরে এই দ্বন্দ্বের অনেকটাই অবসান ঘটেছিল। কিন্তু এই ঘটনা আবারও নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিলো। তবে জাতীয়পার্টির এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা।

আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির ডাকা সারাদেশে তিনদিন ব্যাপী অবরোধের বিরুদ্ধে শান্তিমিছিল করতে বুধবার সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কাঁচপুরে জড়ো হন। এর আগে সকাল থেকেই মহাসড়কের কাচপুরে কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোশাররফ হোসেন, তার ছোট ভাই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল ওমর বাবুসহ তার অনুসারীরা অবস্থান নেন।

পরবর্তীতে আবু জাফর বিরুর নেতৃত্বে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বড় একটি মিছিলসহ কাঁচপুরে জড়ো হন।  এসময় বিরুকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন বাবুল ওমর বাবু। তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ঘটে। এতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বাবুর আচরণে হতভম্ব হয়ে পড়েন।

তারা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী বিরু আওয়ামীলীগের একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে এলাকায় বেশ গ্রহনযোগ্য ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না বাবু ও তার পরিবারের সদস্যরা। ফলে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাবুল ওমর বাবু তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে বিরুর দিকে তেড়ে যান। এসময় উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতারা দুইপক্ষকে বুঝিয়ে শান্ত করেন। পরবর্তীতে বাবুর বড় ভাই কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ- সভাপতি মোশাররফ হোসেন বিরুকে ওইখান থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। এসময় মোশাররফ হোসেন বিরুকে বলেন, বাবুর মেয়ে মারা যাওয়ার পর থেকেই ও পাগলের মতো হয়ে আছে। তাই ও এমন কাজ করে ফেলেছে।

কয়েকজন ত্যাগী নেতাকর্মীরা জানান, বাবুল ওমর বাবু সিনিয়র আওয়ামীলীগ নেতার সাথে যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তাকে অবিলম্বে দল থেকে বহিস্কার করার দাবি জানান তারা।

সোনারগাঁ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবুল ওমর বাবুর জানান, বিরু যদি বলে আমি তার সাথে হাতাহাতি করেছি তাহলে করেছি। তিনি বলেন, বিএনপির কর্মীদের সাথে বিরুর কথাকাটি হয়। এখানে অনেকে সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের লোক উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, লাঞ্ছিত করার বিষয়টি অস্বীকার করলেও তর্কাতর্কির বিষয়টি স্বীকার করেছেন অধ্যাপক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু। তিনি জানান, মাসখানেক আগে বাবুর মেয়ে যেদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় ওইদিন রাত ৩টার দিকে বাবু তাকে কল দিয়েছিল তার মেয়ের চিকিৎসার পরামর্শের জন্য। তিনি একাধিকবার আমাকে ফোন দিলেও সজাগ না থাকায় আমি ফোনটি রিসিভ করতে পারিনি। পরবর্তীতে তার মেয়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে মারা গেলে আমার উপর তার একরকম ক্ষোভ ছিল। পাশাপাশি সে এইবার সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। কয়েকমাস আগে সোনারগাঁ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও এখনো এর কমিটি ঘোষণা হয়নি। বাবুর ধারণা আমার কারণে এই কমিটি গঠন হয়নি। আমি হয়তো বাধা প্রদান করে কমিটি গঠন আটকে দিয়েছি। এই দুই বিষয় নিয়ে সে কয়েকদিন ধরে আমার উপর ক্ষিপ্ত ছিল।

কিন্তু এতোদিন মুখোমুখি না হওয়ায় তিনি এই ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারছিলেন না। আজ আমাকে পেয়ে এই ক্ষোভ থেকেই আমার সঙ্গে এমন আচরণ করেন। তবে এ ঘটনায় আমি কোনো দুঃখ পাইনি। কারণ আমরা দুজনই একই দলের কর্মী। একই দলের কর্মীর সঙ্গে কোনো রাগ রাখা যায়না। ভুল বুঝাবুঝি থেকে তিনি হয়তো আমার সঙ্গে এই আচরণ করেছেন। তিনি আরো বলেন, একটি পক্ষ জোট সরকারের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার সাথে আতার করে আওয়ামীলীগের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য চেষ্টা করছেন। বাবুল ওমর বাবু ও তার ভাই কাচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যার মোশারফ ওমর গত দশ বছর জাতীয় পার্টির সাংসদের সাথে আতাত করে আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়ার পায়তারা করছে। এটা কোনভাবেই করতে দেওয়া হবে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে সোনারগাঁ আসন থেকে আমি আওয়ামীলীগের মনোনয়নে শতভাগ আশাবাদি। তাই আমাকে নিয়ে অনেক নেতাদের মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেছে। সকল বাধাবিপত্তি পার হয়ে অভিষ্টলক্ষে পৌছাব ইনশাল্লাহ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়া নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, একজন সিনিয়র ও সন্মানি ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে এরকম আচরণ করা কোনভাবেই যুবলীগ নেতা বাবুল ওমর বাবুর উচিৎ হয়নি। তবে আমরা তাৎক্ষনিক দুজনের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝির শেষ করে দিয়েছি। তবে সিনিয়র নেতাদের সাথে ভবিষৎে এরকম অসদাচরণ করা হলে তার(বাবু)র বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগের  সাধারণ সম্পাদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার  নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নেউজকে জানান, বাবুল ওমর বাবু একজন সিনিয়র আওয়ামীলীগ নেতা ডা: আবু জাফর চৌধুরী বিরুর সাথে যে আচরণ করেছেন তা অত্যন্ত দু:খজনক। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তবে দলীয়ভাবে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবো। জাতীয়পার্টির এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বাবুল ওমর বাবু এ ঘটনা ঘটিয়েছেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে মুখ খুলেননি।

আগের সংবাদ দেখুনপুলিশ আহতের ঘটনায় গ্রেফতার-১০
পরের সংবাদ দেখুনঅবরোধকারীদের পাপ্পাগাজীর হুশিয়ারী