A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক শাহ নিজাম বলেছেন, বছর ঘুরে আবার এসেছে শোকের মাস, আমাদের দুঃখ-বেদনা-লজ্জা-অনুশোচনার মাস আগস্ট। বাংলাদেশের, বাঙালি জাতির মর্মস্থলে জ্বলন্ত লৌহশলাকার মতো বিদ্ধ হয়ে আছে আজ থেকে প্রায় অর্ধশতাব্দী আগেকার নির্মমতা, নৃশংসতা, বিশ্বাসঘাতকতা, রক্তপাতের এক মর্মন্তুদ স্মৃতি।

এ দেশ, এ জাতি কখনো ভুলবে না, ভুলতে পারে না, ১৯৭৫-এর আগস্ট মাসের ১৫ তারিখের সেই ভয়াল রাতের কথা, যে রাতে প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তাঁদের পরিবারের প্রায় সকল সদস্য, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন, দেহরক্ষী, ভৃত্য সব মিলে ২৮ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক রাজনৈতিক গণহত্যাকান্ডের অধ্যায়টি রচনা করে। খুনিরা বঙ্গবন্ধুর নিজের ও পরিজনদের পরিবারের নববিবাহিতা আর সন্তানসম্ভবা বধূ থেকে শুরু করে দুগ্ধপোষ্য শিশু, অবোধ বালক পর্যন্ত কাউকে রেয়াত করেনি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়েই এদেশে এই অন্ধকার অধ্যায়টির সূচনা হয়, যার ধারাবাহিকতায় একই বছরের নভেম্বরে জেলবন্দি অবস্থায় নিহত হন বঙ্গবন্ধুর দক্ষিণ হস্তস্বরূপ জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন, মনসুর আলী ও কামারুজ্জামান।

শাহ নিজাম বলেন, বাঙালি জাতি যাঁকে পরম আদরে ‘বঙ্গবন্ধু’ সম্বোধনে ভূষিত করেছিল, যাঁকে কায়মনোবাক্যে নিজেদের সর্বোচ্চ নেতা মেনে তাঁর পতাকাতলে সমবেত হয়েছিল, যাঁকে নিজেদের বুকের সব ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছিল, সেই জাতিরই কিছু দুর্বৃত্ত কুসন্তান তাঁকেই নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং নির্বংশ করার অপচেষ্টা চালিয়ে স্বজাতির কপালে যে কলঙ্কতিলক এঁকে দিয়েছিল, বিশ্ব দরবারে বাঙালিদের একটা বর্বর জাতি হিসেবে প্রতিপন্ন করে তার সম্ভ্রম ধুলোয় লুটিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যকন্যা, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসে সেই খুনিদের বিচার ও দন্ড নিশ্চিত করে জাতিকে সেই লজ্জা ও কলঙ্ক থেকে মুক্তি দিয়েছেন। কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি সেই মহান নেতাকে চিরতরে হারানোর সেই তীব্র শোক, বেদনা আর মনোকষ্টের আগুন আজও পুরোপুরি নেভেনি, যে আগুনে গত অর্ধশতাব্দী ধরে সবচেয়ে বেশি পুড়ছেন জননেত্রী নিজেই। তিনি জীবনে যা হারিয়েছেন, এ পৃথিবীতে আর কারও জীবনে অত বেশি হারানোর দ্বিতীয় কোনো উদাহরণ আছে কিনা জানি না। ক্যালেন্ডারে প্রতিবছর আগস্ট মাস আসে সেই আমাদের দুঃসহ শোকের ক্ষতকে আরও একবার বাড়িয়ে দিতে। পুরনো ক্ষত থেকে আবারও কিছু রক্তক্ষরণ হয়। শহিদ জনকের পবিত্র রক্তপাতের স্মৃতিকে সাক্ষী রেখে আবারও আমরা নতুন করে শপথ নেই, বাংলাদেশের পবিত্র মাটি থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, পাকিস্তানপন্থি জঙ্গি সন্ত্রাসী দুর্বৃত্ত চক্রকে চিরতরে নির্মূল নিশ্চিহ্ন করে ফেলার।

কিন্তু আমাদের সে প্রয়াস এখনো যে সম্পূর্ণ সফল হয়নি, এখনো যে দেশের রন্ধে রন্ধে পুরনো সেই সাপগুলো লুকিয়ে আছে, সুযোগ পেলে এখনো যে তারা তাদের অন্ধকার গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে ছোবল বসানোর জন্য প্রস্তুত, তার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেল এবারের আগস্ট শুরুর প্রাক্কালেই। চাকরির সংরক্ষিত কোটা সংস্কারের জন্য সাধারণ ছাত্র সমাজের সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, সাম্প্রদায়িকতাবাদী, প্রতিক্রিয়াশীল বিএনপি-জামায়াত জঙ্গি সন্ত্রাসী চক্র যেভাবে কুক্ষিগত করে নিয়ে ব্যাপক আর বেপরোয়া ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠল, যেভাবে তারা কোটা সংস্কারের অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে আন্দোলনের গতিপথ পাল্টে ফেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটানোর এক দফা, এক দাবির আন্দোলনে পরিণত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে, যেভাবে তাদের কারণে অসংখ্য তরুণ তাজা প্রাণ বিনষ্ট হয়েছে, অনেকে জন্মের মতো পঙ্গু হয়ে গেছে, তা এবারের আগস্টে আমাদের শোক ও দুঃখকে দ্বিগুণ করে তুলেছে। সুকৌশলে একাত্তরের পরাজিত শক্তির এই নবউত্থান আমাদের আতঙ্কিত আর চিন্তিতও করে তুলেছে।

বিএনপি-জামায়াতি দুষ্টচক্র এবার যেভাবে কোটা আন্দোলনকারীদের মধ্যে ঢুকে গিয়ে তাদের অরাজনৈতিক আন্দোলনটাকে নিপুণভাবে ছিনতাই করে নিল এবং সরকারবিরোধী রাজনৈতিক রূপ দিয়ে দিল, তা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেছি। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ঢাকাসহ সারাদেশে তারা যে তান্ডব চালিয়েছে, যে কাউকেই ভাবিয়ে তুলবে। প্রাথমিক হিসাবে সরকারি ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে প্রায় তিরিশ হাজার কোটি টাকা এবং সরকারি-বেসরকারি মিলে এক লক্ষ কোটি টাকার কম হবে না। আমাদের স্বপ্নের মেট্রোরেলকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশন সদর দপ্তরকে, ক্ষতি করা হয়েছে ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ডের, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ড্যাটা সেন্টার, হামলা চালানো হয়েছে হাসপাতালেও, জেল ভেঙে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে দাগী কয়েদিদের, পুড়িয়ে বা ভেঙে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি যানবাহন। নারায়ণগঞ্জে নাসিম ওসমান পার্কটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। হামলা ভাংচুর ধ্বংশলীলা চালিয়েছে। পার্সপোর্ট অফিসটি জ¦ালিয়ে দিয়েছে। পিবিআই এর অফিসটি ভাংচুর লুটপাট করেছে। শীতল পরিবহনের অর্ধশত গাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। সিটি কর্পোরেশন, পৌর পাঠাগার, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব, বিভিন্ন আওয়ামীলীগ অফিস ভাংচুর, পুলিশ বক্স ভাংচুরসহ সারাদেশে তান্ডবলীলা চালিয়েছে তারা।

যড়যন্ত্রকারীরা সাধারণ ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে সুকৌশলে গা ঢাকা দিয়ে দেশে প্রায় এক গৃহযুদ্ধের অবস্থা সৃষ্টি করতে যাচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ দূরদর্শী নেতৃত্বে তা আপাতত অবসান হয়েছে। তারপরও সাপের লেজে এখনো প্রাণ রয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে, যার সম্পূর্ণ বিনাশ ঘটাতে হবে। কথায় বলে, পাপের আর সাপের শেষ রাখতে নেই।

সারাদেশে আওয়ামীলীগের সকল কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে শাহ নিজাম বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান অগ্রগতি ও উন্নয়নের বেগবান ধারাকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে কোথাও কোথাও এই চক্রান্তকারীদের যে কোনো মূল্যে রুখতে হবেই। ছাত্র সমাজকে প্রতিনিয়ত সজাগ থাকতে হবে তাদের কোনো গণতান্ত্রিক অরাজনৈতিক আন্দোলন যাতে প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি ভবিষ্যতে আর কোনোদিন ছিনতাই করে নিতে না পারে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিদের সদাসতর্ক থাকতে হবে যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিপক্ষ শক্তিরা আবারও এদেশে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের মতো অরেক কালরাত্রি ডেকে আনতে না পারে। অচিরেই আমরা যেন এদেশের মাটি থেকে শোকের মাসের সৃজকদের সব অনুসারীকে সম্পূর্ণ উৎখাত করতে পারি। এ দেশে আর যেন দ্বিতীয় কোনো শোকের মাসের সৃষ্টি না হয়, এটা নিশ্চিত করতে আসুন আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার পতাকাতলে সমস্ত বিভেদ ভুলে সমবেত হই সুদৃঢ় ঐক্যবন্ধনে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

আগের সংবাদ দেখুনসিদ্ধিরগঞ্জে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা
পরের সংবাদ দেখুনমিতালী মার্কেট কার্যালয়ে অগ্নিকান্ডে ঘটনায় মামলা