A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজঃ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে দুই নারী ও এক শিশুর বস্তাবন্দি খন্ড-বিখন্ড লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) দুপুর সোয়া একটার দিকে খবর পেয়ে মিজমিজি পশ্চিমপাড়া বড়বাড়ি পুকুর পাড় এলাকার মৃত আক্তার হোসেনের বাড়ির পাশ থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- মিজমিজি এলাকার মৃত আ. সামাদের মেয়ে লামিয়া আক্তার (২২), লামিয়ার শিশু সন্তান আব্দুল্লাহ হাবিব (৪) ও লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না আক্তার (৩৪)। তাদের মধ্যে স্বপ্না আক্তার মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানায় এলাকাবাসী। এ ঘটনায় পুলিশ নিহত লামিয়ার স্বামী ইয়াছিন আলীকে গ্রেপ্তার করেছে। নিহতরা মৃত আক্তার হোসেনর নিচ তলায় ভাড়া থাকত। এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনের ধারণা, পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যাকান্ডগুলো ঘটে থাকতে পারে। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ এসে নিহত তিনজনের খন্ড-বিখন্ড লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তিনজনের খন্ড-বিখন্ড লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে এলাকাবাসী ও উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। পুলিশের ধারণা পারিবারিক কলহের জেরেই এ হত্যাকান্ডটি ঘটে থাকতে পারে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, গত চার দিন ধরে লামিয়া আক্তার, তার সন্তান আব্দুল্লাহ হাবিব ও লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না আক্তার নিখোঁজ ছিলেন। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে শুক্রবার দুপুরে নিজ ভাড়াটিয়া বাড়ির পাশের একটি সড়কের পাশে ইট-সুরকির নিচে বস্তাবন্দি অবস্থায় একটি হাত দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে স্থানীয়রা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানায়। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বস্তাবন্দি খন্ড-বিখন্ডত তিনটি মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যৌথভাবে ঘটনাস্থলে পৌছে বস্তাগুলোর ভেতরে থাকা খন্ড-বিখন্ড মরদেহ উদ্ধার করে। এ সময় র‌্যাব সদসরাও ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তিনজনের খন্ড-বিখন্ড লাখ উদ্ধারের খবর পেয়ে আশপাশ থেকে শত শত লোকজন ঘটনাস্থলে ভিড় করে। এ সময় এ হত্যাকান্ডের জন্য ইয়াছিন আলীকে দায়ী কওে তার ফাঁসি দাবি করেন। এ সময় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
স্বপ্না ও লামিয়ার বড় বোন শিরিন বেগম বলেন, চার দিন ধরে আমার দুই বোন ও ভাগ্নে কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না। লামিয়া প্রেম করে বিয়ে করে সংসার করছিল। স্বপ্না মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। আমার দুই বোনের মধ্যে লামিয়ার স্বামী একজন বখাটে ছিল, সংসারে ঝগড়া লেগেই থাকত। আমরা সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই। নিহত লামিয়ার ভাড়াটিয়া বাড়ির ভাড়িওয়াল ভাতিজা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চলতি মাসের ১ তারিখেই তার চাচা আক্তার হোসেনের বাড়ির নিচ তলায় ভাড়া আসে তারা। লামিয়ার স্বামী ইয়াছিন আলী কয়েকদিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। লামিয়ার স্বামী নেছাগ্রস্থ ছিল। সে অটো চালাত। ৪ দিন ধরে রুমটি তালাবদ্ধ ছিল। শুক্রবার দুপুরে বাড়ির পাশে ইট-সুরকির মধ্যে একটি হাত বের হয়ে আসতে দেখে তারা পুলিশ খবর দেন। পরে পুলিশ এসে লাশ তিনটি উদ্ধার করে। ৬-৭ দিন আগে তার স্বামী এ বাসায় আসে। লামিয়ার পরিবার গত ২৪ বছর ধরে এখানে বাড়িঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিল। লামিয়ার বাবা মারা যাওয়ার পর বাড়িটি বিক্রি করে দেয়ার পর তারা এলাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছিল।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শাহীনুর আলম জানান, মিজমিজি এলাকার একটি পুকুর পাড় এলাকায় বস্তবন্দী লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইটি নারীর খন্ডবিখন্ড ও অপরটি একটি শিশুর মরদেহ রয়েছে। তিনি আরও জানান, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে । এলাকাবাসী জানায়, লামিয়ার স্বামী ইয়াসিন আলী একজন মাদকাসক্ত। তাই ইয়াছিন আলীকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল। সে মাদকের মামলায় কিছুদিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। নেশার টাকার জন্য প্রায়ই স্বামী ইয়াসিন লামিয়াকে লামিয়াকে মারধর করত। এমন হত্যাকান্ড পারিবারিক কলহের জের ধরে মাদকাসক্ত স্বামী ইয়াছিনই ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে এলাকাবাসী ধারণা করছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) তাসমিন আক্তার বলেন, মিজমিজির পশ্চিপাড়া এলাকার আমির হোসেনের বাড়ির পাশে নারী ও শিশুসহ তিনটি লাশ পাওয়া গেছে। গর্ত করে লাশ তিনটি পুতে রাখা হয়েছিল। সেখানে একটি হাত দেখা গিয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা এ বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পুলিশ এসে লাশগুলো উদ্ধার করা করে। খোজ-খবর নিয়ে জানা যায় লামিয়া আক্তার ও স্বপ্না আক্তার নামে দুই বোন এ বাসায় থাকত। লামিয়ার আক্তারের চার বছরের একটি ছেলেও ছিল। লামিয়ার স্বামী নেশাগ্রস্থ ছিল। তাই স্ত্রীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল না। লামিয়ার স্বামী কোন রোজগার করত না। লামিয়া গার্মেন্টসে কাজ করত। লামিয়ার স্বামীর তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেয়ার জন্য চাপ দিত। এ হত্যাকান্ডের জন্য নিহত লামিয়ার আক্তারের পরিবার তার স্বামী ইয়াছিন আলীকে সন্দেহ করে। তাই আমরা ইয়াছিন আলীকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ বিষয়ে আইনানুগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে

 

আগের সংবাদ দেখুনএসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় বৈষম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলন
পরের সংবাদ দেখুনশিশু ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে যুবক গ্রেপ্তার