A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজঃ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ফ্যানের সিলিং এর সাথে ফাঁস দিয়ে শারমিন (২৩) নামে ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তিনি ভোলার লালমোহন গ্রামের কাঞ্চন হেরাং এর মেয়ে।

রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২ টায় সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকার শাহ আলমের ভাড়াটিয়া বাড়ির নিচ তলায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের স্বামী মো. ইমরান জানায়, আমাদের এক বছর আগে বিয়ে হয়। আজ ১২ টার দিকে আমি ও আমার স্ত্রী ভ্যান গাড়ি থেকে তার জন্য জুতা কিনে বাসায় এসেছিলাম। কিন্তু বাসায় এসে জুতা তার সাইজে বড় হওয়ায় আমাকে চেঞ্জ করে আনতে বলে কিন্তু ভ্যানগাড়ি ওয়ালা চলে যাওয়া আর চেঞ্জ করতে পারিনি। এ নিয়ে আমার স্ত্রীর সাথে তর্কাতর্কি হওয়ার পর আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাই। এরপর জানতে পারি সে ফাঁস দিচ্ছে। কিন্তু আসতে আসতে দে…
[8:37 pm, 10/11/2024] Asadur Jaman Nur: দূর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন পাথর মানবরা
আসাদুজ্জামান নূর, সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ: সময় তখন ঘড়ির কাটায় সকাল সাড়ে এগারটা। শীতলক্ষা নদীর তীরে গামছা মুড়ি দিয়ে উপরি ঝুপড়ি হয়ে বসে আছেন প্রায় সত্তর বছর বয়সের এক বৃদ্ধ। নাম পরিচয় জানতেই বলে উঠলেন তার নাম আব্দুল কাইয়ুম। তিনি সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত সুরমা নদীরপাড়ের বাসিন্দা। তার গ্রামের নাম দুল্লাপুর। তার বাবার নাম মৃত: তাহের আলী। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার শিমড়াইল এলাকার রুহুল আমিন মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অকপটে বলতে শুরু করেন, সেই ষোল বছর বয়সে পাথর টানার কাজ শুরু করেছিলেন। জীবনের সাথে যুদ্ধ করে আজও টিকে আছেন এই পেশাতেই। মাত্র পাঁচশ টাকা মুজুরী পেয়ে সংসারের অভাব কোন অবস্থাতেই কাটছে না। কাজ করতে গিয়ে পাথরের আঘাতে একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেলেও টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারেন নি তিনি। সংসারের অভাবের কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন তিনি। আব্দুল কাইয়ুমের বড় ছেলে মোরছালিন ও ছোট ছেলে মোসাদ্দেক মিয়া। অভাবের সংসারে ছেলেদের বেশিদূর লেখাপড়া করাতে পারেন নি তিনি। তাই বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে দুই ছেলেকেই। রিক্সা চালিয়ে তারাও উপার্জন করে বাবা মাকে নিয়ে কোন রকমে ডাল ভাত খেয়ে সংবার চালাতে হয় তাদের। শিমড়াইল এলাকার রুহুল আমিন হাজির বাড়িতে মাত্র দুই হাজার টাকায় একটি টিনের ঘরে ভাড়া থাকেন তিনি। আব্দুল কাইয়ুম আক্ষেপ করে বলেন, প্রতিদিন পাঁচশ টাকা আয় করে চাল কিনতে গেলে মাছ কিনতে পারি না। মাছ কিনতে গেলে তেল কিনতে পারি না। এটাই হলো আমাদের জীবন। অসুস্থ হয়ে বিছানায় একদিন পড়ে থাকলে ঘরে সেদিন চুলাও জ¦লবে না। পাশেই মাথায় বড় বড় পাথর তুলে মেশিনে ফেলছেন ষাট বছর বয়সী শফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার শাহিপুর থানার জামালপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শুকুরশি এলাকার বিল্লাল হোসেন মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া। তিনি জানান, চার মেয়ে দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার কোনভাবেই চলছে না তার আয়ের টাকায়। এক বেলা চুলা জ¦ললেও আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হয় তাদের। মাঝে মাঝে সন্তানদের নিয়ে বিপদে পরে যান তিনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সন্তানদের তিন বেলা তিন মুঠো খেতে দিতে পারি না। এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে একজন বাবার কাছে। সকাল সাতটা থেকে বিকাল পাঁচ টা পর্যন্ত হাড়ভাঙ্গা খুটানি খেটে ইনকাম হয় মাত্র পাঁচ শত টাকা। বর্তমান বাজারে এই টাকা দিয়ে তেমন কিছুই মিলে না। মাঝে মাঝে না খেয়েই কাটাতে হয় তাদের। মাঝে মধ্য অসুস্থ হয়ে পড়লে টাকার অভাবে চিকিৎসা সেবাও নিতে পারি না। এভাবে দিন কেটে যাচ্ছে আমার অভাবের সংসার।
বিশ বছর পূর্বে ধীরেন্দ্র নাথ মারা যাওয়ার পর থেকে পচান্ন বছর বয়সী বাসন্তি রানি সরকার পাথরের বোঝা মাথায় নিয়ে দ্ইু ছেলে ও এক মেয়ের ভরন পোষনের জন্য প্রচন্ড রৌদেও তাকে থামাতে পারে নি। সংসারের খরচ বহন করার জন্য সকাল থেকে সন্ধা পযন্ত মাথায় বোঝা নিয়ে অবিরামহীন ভাবে পথ চলছেন তিনি। কোনভাবেই সংসারের অভাব মিটাতে পারছেন না তিনি । বাসন্তি রানী সরকার বলেন, প্রতিদিন কাজ করে পাঁচশ থেকে ছয় শত টাকা আয় করতে পারেন তিনি। প্রতি টুকরি পাথর টানার জন্য ষাট টাকা পান তিনি।
পাথর ঘাটে কাজ করতে আসা হোসেন মিয়া, সিলেট সুনামগঞ্জ জেলার বিসম্বপুর পলাশ গ্রামের আবুল কাসেমের ছেলে। তিনি মেয়ে নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে জীবন ভালোই কাটছিলো তার। কিন্তু এক দালাল শহিদুল্লার খপ্পরে পড়ে ওমান যাওয়ার জন্য চার লাখ টাকা দেন তিনি। এরপর তিনি বিদেশে যেতে পারেন নি। ধার দেনা করে দেওয়া টাকার ঋণ পরিশোধ করতে পাচ্ছেন না তিনি। সংসারের অভাব মিটাতে পাথর উঠা নামানোর কাছ করছেন তিনি। তিনি বলেন, বৌ বাচ্চাদের মুখের দু মোঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে আমাকে। আমি একজন হার্ডের রুগী। এরপরও জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য পাথরের টুকরি মাথায় তুলে নিতে হয়েছে আমাকে।
বরিশাল জেলায় মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব কাজীরচর গ্রামের বাসিন্দা বুজতর আলীর ছেলে কালাম গাজী বাইশ বছর ধরে পাথর উঠা নামার কাজ করছেন। বয়সের কারণে এখন আর আগের মতো মাথায় বোঝা নিয়ে পরিশ্রম করতে পারছেন না তিনি। এক সময় প্রতিদিন আট’শ টাকা আয় হলেও বর্তমানে তিনি চারশো টাকার বেশি আয় করতে পারেন না। দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে অভাব অনটনের মধ্যেই চালাতে হয় তার জীবন। তিনি শুকুরশী এলাকার হেলেনা বেগমের বাড়ির ভাড়াটিয়া।

সরেজমিনে শীতলক্ষা তীরে গিয়ে দেখা যায়, পাথর উত্তোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছেন ওই এলাকায় প্রায় দুই হাজার মানুষ। পাথর তোলা, ভাঙা ও নামানো-ওঠানোর ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ ও পরিকল্পনার অভাবে প্রাণঘাতী ব্যাধি ‘সিলিকোসিস’ ঝুঁকিতে রয়েছেন সেখানকার পাথর শ্রমিকরা। পাথরের উপাদান সিলিকা (স্ফটিকের ধুলো) থেকে এ রোগ হয় বলে একে ‘সিলিকোসিস’ বলা হয়। তবে শ্রমিকদের অনেকেই জানেন না পাথর ভাঙার কাজে যুক্ত থাকায় তাদের দেহে কোন ধরনের জটিল রোগ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। জীবিকার জন্য শতশত শ্রমিক পাথর ভাঙা, পাথর লোড আনলোডের কাজে বাধ্য হয়েও জড়িয়ে পড়ছেন। মালিকপক্ষ তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন কোনো উদ্যোগ নেয়নি এ পর্যন্ত। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়াই শ্রমিকরা প্রতিদিন হাড়ভাঙা খাটুনি দিয়ে পাথর ভেঙে থাকেন। মেশিনে পাথর ভাঙার সময় পাথরের সূক্ষ্ম ধূলিকণায় আশপাশের এলাকার পরিবেশ নষ্ট হওয়াসহ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন শতশত শ্রমিক। পাথর ভাঙার কাজে বায়ুদূষণের মতো সমানতালে চলতে থাকে শব্দদূষণ। এর মধ্যে শ্বাস নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছেন দরিদ্র শ্রমিকরা। ধুলো-বালু থেকে মুক্ত থাকার জন্য তাদের কেউ মুখে গামছা বেঁধে কাজ করেন, অনেকে সচেতনতার অভাবে তারও ধার ধারেন না। প্রায় অধিকাংশ পাথরভাঙা শ্রমিক উচ্চ শব্দ আর ধুলো-বালুর মধ্যে কাজ করায় রাতে মাথাব্যথা ও নিদ্রাহীনতায় ভোগেন। ক্ষতিকর ধুলো-বালু নাক ও মুখ দিয়ে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করায় শ্বাসকষ্ট, সর্দি-জ্বরসহ নানাবিধ রোগে ভোগেন।

বন্দরে ভারত ও ভুটান থেকে ট্রাকে করে আনা পাথর ৫০ থেকে ৬০টি ক্র্যাশিং মেশিনে ভেঙে গুঁড়া করছেন শ্রমিকরা। তীব্র বায়ু ও শব্দদূষণের মধ্যে দিনভর কাজ করতে হয় তাদের। এত ধুলো-বালুর মধ্যেও অনেকের মুখে কোনো ভালোমানের মাস্ক বা গামছা নেই। তাদের সারা গায়ে ধুলোর আবরণ।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ বলেন, সিলিকোসিস রোগ সম্পর্কে মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক সেমিনার করা হয়েছে। তবে মালিকপক্ষের দিক থেকে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া ছাড়া আর কোনো দায়িত্ব নেওয়া হয়নি। দিনমজুরি ধরনের কাজ হওয়ায় শ্রমিকরা স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকেন। তাদের পক্ষে দাবি কিংবা অধিকার আদায় করার জন্যও নেই কোনো সাংগঠনিক ভিত্তি।

কথা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সি শ্রমিক জসিম উদ্দিন আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমগোর অনেকেই এহন গামছা বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢাইক্কা (ঢেকে) পাত্তর (পাথর) ভাঙার কাম করতেছি। আবার মেলাজনে এহনও খালি মুহে কাম করে।’ ‘সিলিকোসিস’ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে হাসপাতালের লোকজন আসে, বলে মুখ বাইন্ধা কাজ করতে। মুখ খালি রাখলে বহুত রোগে ধরবে। তাই আমি মুখ ঢাইক্কাই রাহি।’
মুখ না ঢেকে কাজ করছেন এমন শ্রমিকদের মধ্যে সুরভী কোচ বলেন, ‘গামছা বা কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢাইক্কা কাম করলে ফাফর লাগে। তাই মাঝে মাঝে গামছা ব্যবহার করলেও বেশি সময় খুলে রাখি। সর্দি-কাশি তো এমনিতেই অয়, আর কাজ করলে তো একটু অইবোই।

আসলাম মিয়া নামে এক শ্রমিক জানান, পাথরভাঙা ছাড়া অন্য কোনো কাজের ক্ষেত্র নেই তার এলাকায়। তাই বাধ্য হয়েই পাথর ভাঙার কাজ করছেন তিনি। এনজিওর লোকদের কাছ থেকে জেনেছেন সিলিকোসিস রোগের ভয়াবহতার কথা। প্রায়শ শ্বাসকষ্ট, ঘুম কম হওয়া, চোখ জ্বালাপোড়া ও বুক ধড়ফড় করাসহ ঠান্ডাজনিত রোগে তার মতো অনেকেই ভুগছেন। কিন্তু সংসার চালানোর জন্য পেটের দায়ে এ কাজ করতে হবে বলে তিনি জানান।

নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসক ডা: জহিরুল ইসলাম জানান, সিলিকোসিস ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সর্দি-কাশি, জ্বরসহ শরীর দিন দিন দুর্বল হয় ও ওজন কমে যায়। পাথরভাঙা শ্রমিকরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। মাস্কসহ বিশেষ ধরনের পোশাক পরলে সিলিকোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

জাতীয় মানবাধিকার সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটির লেখক কল্যাণ সম্পাদক কবি জামান ভুইয়া জানান, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে নিরাপত্তা সরঞ্জাম অবশ্যই মালিককে সরবরাহ করতে হবে। এসব নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন দায়িত্ব নিলে শ্রমিকরা উপকৃত হবেন। আর এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে শ্রমিকদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ সিলিকোসিসসহ ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, শ্রমিকদের যথাযতভাবে সুরক্ষার জন্য যেসকল প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দেওয়া প্রয়োজন সেগুলো নিশ্চিত করতে মালিক পক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসকল নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

আগের সংবাদ দেখুনভুয়া পুলিশ আখ্যা দিয়ে মারধর
পরের সংবাদ দেখুনগণঅভূত্থানে অগ্রনী ভুমিকায় ছিলেন আবুল কালাম আজাদ রাসেল