
ফয়সাল আহমেদ, সোনারগাঁ
সোনারগাঁয়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বিড়ম্বনায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রেমিটেন্স যোদ্ধা বিদেশ যাত্রীরা। বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার দেশের দক্ষ জনশক্তি ও বেকার যুবকদের পাসপোর্ট সরবরাহ ও প্রবাসী ঋণ কার্যক্রমে আন্তরিক হলেও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে সোনারগাঁয়ের বাসিন্দারা।
যে কোন বিদেশ যাত্রীর ক্ষেত্রে মেডিকেল কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া করার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়। সোনারগাঁ থেকে বিদেশগামী পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বিড়ম্বনার শিকার কয়েকজন যাত্রীর অভিযোগ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে আবেদন করার সময় প্রথম শ্রেণির সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্ট কপি, ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক সরবরাহকৃত নাগরিক সনদ, নিজ পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র, পরিশোধিত বিদ্যুৎ বিলসহ সঠিক তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করার পরেও কোন কারণ ছাড়াই আবেদনটি বাতিল হয়ে যায়।
যে কোন বিদেশ যাত্রী প্রথম দফা আবেদন করলে ৪/৫ দিন পর আবেদনটি বাতিল হয়ে গেলে কারণ জিজ্ঞাসা করার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হেল্প ডেস্ক প্রদত্ত মুঠোফোন ০১৩২০০০১৮২৪-২৫ নাম্বারে শতবার ফোন করলেও কেউ রিসিভ করেনা। পরে বাধ্য হয়ে বিদেশ যাত্রীদের পুনরায় আবেদন করতে হয়। একজন বিদেশগামী ব্যক্তি পর পর কয়েক দফা আবেদন করার ফলে একটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে নির্দিষ্ট সময়ের পরিবর্তে এক মাসেরও অধিক সময় লেগে যায়।
তাদের অভিযোগ, বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার দেশের দক্ষ জনশক্তি ও বেকার যুবকদের পাসপোর্ট সরবরাহ ও প্রবাসী ঋণ কার্যক্রমে আন্তরিক হলেও আমরা কেন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে বিড়ম্বনার শিকার হব?
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোনারগাঁ থানার সামনে রাস্তার পাশে মা কম্পিউটার অনলাইন সার্ভিস এন্ড ট্রেনিং সেন্টারে মোকাররম হোসেন দুলাল নামে এক ব্যক্তি বিদেশ যাত্রীদের কাছ থেকে চুক্তি ভিত্তিক পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করার জন্য তিন থেকে চার হাজার টাকা নিয়ে থাকে। সোনারগাঁ থানা পুলিশ ও নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যলয়ে অবস্থানরত অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন রিসিভ কর্মকর্তা এসআই ইফতেখারের সঙ্গে তার সখ্যতা থাকায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার বিনিময়ে প্রথম শ্রেণির সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত ব্যতিত নিজেস্ব ভূয়া সত্যায়নে যে কোন আবেদন রিসিভ করিয়ে থাকেন।
সে জন্য বিদেশ যাত্রী অনেক ভুক্তভোগী সোনারগাঁ উপজেলার প্রথম শ্রেণির সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্ট কপি, ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক সরবরাহকৃত নাগরিক সনদ, নিজ পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র, পরিশোধিত বিদ্যুৎ বিলসহ সঠিক তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করার পরেও অন্য যে কোন কম্পিউটার সেন্টার থেকে অনলাইনে আবেদন করলেও তা বাতিল হয়ে যায়। সে জন্য একজন বিদেশগামী ব্যক্তির পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে একাধিকবার আবেদন করতে হয়। তাছাড়া ৫০০ টাকা ব্যাংক চালান জমা দেওয়ার পর পুলিশ ভেরিফাই করার নাম করে বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে সোনারগাঁ থানার কিছু অসাধু কর্মকর্তা বিদেশগামী ব্যক্তিদের কাছ থেকে এক থেকে দেড় হাজার টাকা নিয়মিত আদায় করেন।
অপরদিকে, বিদেশগামী ব্যক্তিরা পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য অনলাইনে যে আবেদন জমা করেন তা ভেরিফাই করার জন্য তার সিংহভাগ আবেদন নিজের নিয়ন্ত্রনে রেখে কিছু আবেদন অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঝে বন্টন করেন সোনারগাঁ থানার মুন্সির দায়িত্বে থাকা এএসআই শেখ ফরিদ। এছাড়া মুন্সির দায়িত্বে থাকা এএসআই শেখ ফরিদ বিদেশগামী ব্যক্তিদের কাছ থেকে পুলিশের উচ্চ পদস্থ্য কর্তা ব্যক্তিদের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন খরচের নানা অযুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিদেশগামী কোন ব্যক্তি টাকা দিতে না চাইলে কোন কারণ ছাড়াই দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন একটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রিন্ট দিতে। এতে করে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সোনারগাঁ থেকে বিদেশগামী ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ওসি মাহাবুব আলম জানান, বিদেশ যাত্রীদের ক্ষেত্রে ফৌজধারী অপরাধে কোন মামলা না থাকলে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দিতে সোনারগাঁ থানা পুলিশ বিদেশগামী ব্যক্তিদের জন্য সব সময় আন্তরিক। কোন কারণ ছাড়া বিদেশ যাত্রীরা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে ভোগান্তির শিকার হলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।