
বিশেষ প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম শফিক থানা সেচ্ছাসেবকলীগের পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের দুই নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইকবাল হোসেনের কার্যালয়ে হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়ে বেশ আলোচনায় এসেছেন তিনি। এতে দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন দলীয় পদ পেতেই স্থানীয় কাউন্সিলরের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
গত আট সেপ্টেম্বর সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেনের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যপক ভাঙচুর করেছে সন্ত্রাসীরা। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শফির ছেলে টেনশন গ্রুপের প্রধান রাইসুল ইসলাম সীমান্তের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, মিজমিজি এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম চেয়ারম্যানের ছেলে শফিকুল ইসলামের প্রত্যক্ষ মদদে তার ছেলে কিশোরগ্যাং সর্দার ও টেনশন গ্রুপের প্রধান রাইসুল ইসলাম সীমান্তের নেতৃত্বে ২০/৩০জনের একটি গ্রুপ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেনের কার্যালয়ে ব্যপক ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জ জেলা সেচ্ছাসেবকলীগের এক নেতা জানান, ২০০৪ সালে জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে শফিকের নাম থাকলেও পরবর্তীতে বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য কোন কমিটিতে স্থান দেওয়া হয় নি তাকে। তিনি তার ছেলে রাইসুল ইসলাম সীমান্তকে দিয়ে এলাকায় একটি বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন।
এই বাহিনীর সদস্যরা এলাকায় প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালাচ্ছেন। তারা র্যাবসহ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হাতে এলাকাধিক বার গ্রেফতার হয়েছে। এসকল লোকদেরকে যদি দলীয় পদ দেওয়া হয় তাহলে তারা এলাকায় মানুষকে জিম্মি করে একচ্ছত্র আধিপত্র বিস্তার করবে এবং দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবেন বলে মনে করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিজিমিজ পশ্চিমপাড়া এলাকার এক বাসিন্দা জানান, এলাকায় শফিকের দাপট আগে থেকে বেড়েগেছে। তার ছেলে রাইসুল ইসলাম সীমান্ত র্যাবের হাতে আটকের পর ছাড়া পেয়ে আবারো বেপরোয়া হয়ে গেছে। এলাকার উঠতি বয়সী যুবকদের নিয়ে টেনশন গ্রুপ খুলে বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন সে। এছাড়া শফিক সেচ্ছাসেবকলীগের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শাখার সভাপতি পদপ্রার্থী তাই সে কাউন্সিলর কার্যালয় হামলা ভাংচুর করে দলীয় শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
রহিমা আক্তার নামে এক নারী এই প্রতিবেদককে জানান, হঠাৎই দলবল নিয়ে শফিকুল ইসলাম তার ছেলে রাইসুল ইসলাম সীমান্তসহ একটি বিশাল সিন্ডিকেট এলাকায় ত্রাসের রাজক্ত কায়েম করছে। শুনলাম সামনে দলে পদ পাইতে উঠে পড়ে লেগেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন মিয়া নারায়নগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, শফিকুল ইসলাম শফিক নামে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের কোন কমিটিতে এমন কোন ব্যক্তির নাম কোথাও নেই। তবে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ অপকর্ম করলে তাকে কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম শফিক নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, আমি গত নির্বাচনে বর্তমান কাউন্সিলরের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিলাম। তাই আমাকে রাজণৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগতভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য নিজেদের কার্যালয়ে নিজেরাই ভাংচুর করে আমার উপর দায়ভার চাপাচ্ছে। আমি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি পদে একজন শক্তিশালী প্রার্থী। তাই আমি যেন পদ পেতে না পারি সেজন্য আমার দলের প্রতিদন্দ্বীরাও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন জানান, আমার কার্যালয় প্রকাশ্যে ভাংচুর করছে শফিকুল ইসলাম শফিক ও তার ছেলে রাইসুল ইসলাম সীমান্ত বাহিনী। এর আগে আমার ব্যক্তিগত সচিব মাস্টার মহিউদ্দিনকেও মারধর করে রক্তাক্ত যখম করেছেন শফিক ও তার ছেলে। হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি পুলিশ। কার্যালয়ে ভাংচুর করায় অফিসের নিযুক্ত সচিবসহ অন্যান্য কর্মচারীরাও ভয়ে অফিসে আসছেন না। এতে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কয়েক হাজার ওয়ার্ডবাসী। আমি এর ন্যায় বিচার চাই।