নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজঃ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকায় পঁচা চাউলের ব্যবসা করে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন মোক্তার নামে এক ব্যক্তি। সামান্য পঁচা চাউলের ব্যবসা করে ওই এলাকায় গড়ে তুলেছেন কয়েকটি বহুতল ভবন। এছাড়াও নামে বেনামে রয়েছে তার প্রচুর জায়গা জমি। হাকিয়ে বেড়াচ্ছেন দামি গাড়ি। দূর্নীতি দমন কমিশন দূদক ও রাজস্ব বিভাগ তার সম্পদের হিসেব দেখলেই বেড়িয়ে আসবে আসল রহস্য।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, চাঁদপুর জেলার উত্তর মতলব ছেঙ্গারচর গ্রামের বাসিন্দা মৃত হাজী রজ্জব আলী সরকারের ছেলে মোক্তার হোসেন সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ পঁচা চাউলের ব্যবসা করে আসছেন। তিনি সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দূদক) তার সম্পদের হিসেব অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল ও তার দূর্নীতির চিত্র।
সরেজমিনে শনিবার হীরাঝিল এলাকায় গিলে দেখাগেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল আবাসিক এলাকার তিন নাম্বার গলিতে ছয় কাঠা জমির উপর সাত তলা ভবণ, যার আনুমানিক মূল্য ছয় কোটি টাকা। একই এলাকায় এক নাম্বার গলিতে রয়েছে তার চারকাঠা জমির উপর সাত তলা বাড়ি যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ছয় কোটি টাকা। দশ নাম্বার গলিতে পাঁচ কাঠা জমির উপর নয়তলা ভবন যার আনুমানিক মূল্য আট কোটি টাকা। ১৫ নং গলিতে পাঁচ কাঠা জমির উপর সাত তলা বাড়ি যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ছয় কোটি টাকা।
এছাড়াও চিটাগাংরোড আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেটের নীচ তলায় মিতু ও রিতু রাইস এজেন্সী নামে দুটি চাউলের দোকান রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় চার কোটি টাকা। নয়াআটি মুক্তিনগর এলকায় একটি টিনশেট বাড়ি যার আনুমানিক মূল্য এক কোটি টাকা। তার গ্রামের বাড়িতে প্রায় দশ কোটি টাকা মূল্যে সম্পদ রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে প্রচুর জমাজমি ও সম্পদ রয়েছে বলেও জানাযায়। সরকারের ভ্যাট, ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অল্প সময়ে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। কিভাবে এত অল্প সময়ে অঢেল সম্পদের মালিক হলেন তা দুর্নীতি দমন কমিশন দূদক অনুসন্ধান করলে বেরিয়ে আসবে আসল রহস্য।
আহসান উল্লাহ মার্কেটের এক চাল ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, গত দুই মাসে চিটাগাংরোড চালের মার্কেটে কয়েক দফায় প্রতি কেজি চালে বিশ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির কারণে চালের বাজারে একটা অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা স্বীকার করছেন ক্ষুদ্র চাল বিক্রেতা, পাইকারি বিক্রেতা এবং জেলা বাজার কর্মকর্তাও।
তবে এ দাম বৃদ্ধির কারণ নিয়ে পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে একমত নন খুচরা বিক্রেতারা। খুচরা বিক্রেতারা দাবি করছেন, সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। মেসার্স রিতু ও মিতু রাইস এজেন্সীর মালিক মোক্তার হোসেন সরকার একটি সিন্ডিকেট করে চালের বাজারে অস্থিরতা বাড়িয়ে চলেছে। মূলত ব্যবসায়িক ফায়দা লাভের জন্য কৃত্রিম এই সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের।
আবদুর রহমান হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি জানান, এক সময়ের জীবিকা নির্বাহের জন্য শিমড়াইল মোড়ে সড়কের পাশে রাস্তায় বসে বস্তায় ভরে চাল বিক্রি করতেন মোক্তার হোসেন। সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন ভাবে ভালো চাউলের সাথে পঁচা চাউল মিশিয়ে অতিরিক্ত হারে মুনাফা আদায় করতেন তিনি। এ ছাড়া অবৈধভাবে সরকারি নীতিমালা অমান্য করে অল্প দামে চাউল ক্রয় করে গোডাউনে রেখে বাজারে চাউলের সঙ্কট তৈরী করে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করেন তিনি। নূন আনতে পান্তা ফুড়ানো মোক্তার হোসেন পঁচা চাউলের ব্যবসা থেকে এখন শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
আফসার উদ্দিন নামে হীরাঝিল এলাকার এক বাসিন্দা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় ফুটপাতে হকার বসিয়ে মুক্তার হোসেন সরকার চাঁদাবাজি করতেন। এতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলরত পথচারীরা। ফুটপাতে চাঁদাবাজি করে তিনি প্রতিমাসে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বর্তমানে মোক্তার হোসেন হীরাঝিল আবাসিক এলাকার সমাজ কল্যান সমিতির যুগ্ন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এ বিষয়ে মোক্তার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনটি রিসিভ করেন নি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, অপরাধের সাথে জড়িতদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। মোক্তার হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে খুব শিগ্রই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ দূর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, হীরাঝিল এলাকার চাল ব্যবসায়ী মোক্তার হোসেনের অবৈধ সম্পদের খোজ নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারলে তার বিরুদ্ধে দুদক ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্য্যালয়: ৪র্থ তলা, রুপালী সুপার মার্কেট, চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ।
বার্তা কক্ষ: ইমেইলঃ [email protected] মোবাইলঃ 01711581634, 01921-116126
Powered by Sourav Bhuiyan