
নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজঃ নাশকতা মামলার আসামী রাজু নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মুক্তিনগর এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। অবৈধ আয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আওয়ামীলীগ নেতা নেছার আহমেদ রাজু আহমেদ। এক সময়ে অর্ধাহারে, অনাহারে জীবন কাটানো নেছার আহমেদ রাজু সময়ের ব্যবধানে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। গড়েছেন একাধিক আলিশান বাড়ি, বিলাশ বহুল গাড়ি। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কিভাবে প্রায় শতকোটি টাকার মালিক বনে গেলেন তিনি। তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।
ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া জেলার টনকি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের একজন সামান্য ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন তিনি। তিনি চৈনপুর এলাকার মৃত: মইনল হোসেনের ছেলে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের এসকল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি । সম্প্রতি নয়াআটি এলাকায় তার মালিকানাধীণ পাঁচতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করে বিশাল ফ্ল্যাল তৈরী করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি এই ফ্ল্যাটেই বসবাস করছেন বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
নারায়ণগঞ্জের ক্রাইম নিউজের অনুসন্ধানে জানাযায়, অনুসন্ধানে জানাযায়, ২০২০ সালে মুন্সী ভিলা নামে রসুলবাগ এলাকায় আটকাঠা জমি ক্রয় করেন নেছার আহমেদ রাজু। ওই জমিটিতে তার ভাই মামুনকে একটি একতলা বাড়ি বাড়িয়ে দেন তিনি। বাড়িটির আনুমানিক মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। ২০২১ সালে উত্তর রসুলবাগ এলাকায় ছয়কাঠা জমিতে সাততলা বহুতল ভবন নির্মাণ করেন তিনি।
যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। একই বছরে ওই এলাকায় দশকাঠা জমিতে নির্মাণ করেন একটি টিনশেট ভবন নির্মাণ করেন তিনি। যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। ২০২২ সালে রসুলবাগ কানাপট্টি সংলগ্ন মুরতোলাবাদ এলাকায় পাঁচ কাঠা জমির উপর ছয়তলা ভবন নির্মাণ করেন তিনি। যার আনুমানিক মূল্য পাঁচকোটি টাকা। ২০২৩ সালে মুক্তিনগর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর টিপুর বাড়ির সংলগ্ন ভাই ভাই ভিলা নামে ছয় কাঠা জমির উপর অর্ধেকে টিনশেড ভবন ও বাকি অর্ধেকে দ্বিতলা ভবন নির্মাণ করেছেন।
যার আনুমানিক মূল্য চার কোটি টাকা। মুক্তিনগর এলাকায় ক্যানেলপাড় সংলগ্ন এমারত মিয়ার কাছ থেকে তিনকাঠা জমির পাঁচতলা ভবন ক্রয় করেছেন তিনি, যার আনুমানিক মূল্য চারকোটি টাকা। ২০২৪ সালে মৌচার এলাকার আলামিন গার্মেন্টস সংলগ্ন দশকাঠা জমি ক্রয় করেন। যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা।
এছাড়াও গ্রামের বাড়িতে বিশ বিঘা জমির উপর চয়নিকা বিকস নামে একটি ইটভাটা রয়েছে তার। যার আনুমানিক মূল্য দশকোটি টাকা। এছাড়াও দশ বিঘা জমির উপর মাছের ঘের রয়েছে তার। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। এছাড়া নামে বেনামে বিভিন্ন জায়গায় তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে এলাকাবাসী নিশ্চিত করেছেন।
নয়াআটি এলাকার বাসিন্দা আবু কালাম জানান, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে নয়াআটি এলাকায় ডাক্তার শকিফুল ইসলাম শফিক মিয়ার বাড়িতে মাত্র দুই হাজার টাকায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুন্সী নেছার আহমেদ রাজু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সিদ্ধিরগঞ্জের নয়াআটি, রসুলবাগ, আদর্শনগরসহ কমপক্ষে পাঁচ,ছয় তলা, টিনশেটসহ কমপক্ষে সাতটি বাড়ি রয়েছে তার। এসকল সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য প্রায় পয়ত্রিশ কোটি টাকা।
গ্রামের বাড়িতে ইটভাটা, মাছের ঘের, জমাজমিসহ রয়েছে প্রায় চল্লিশ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তার। তিনি বলেন, মাত্র কয়েক বছর পূর্বে যিনি ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করতেন, আওয়ামীলীগ সরকারের নাম ভাঙ্গিয়ে অল্প সময়ে কিভাবে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিনা।
আকরাম মিয়া নামে মুন্সী নেছার আহমেদ রাজু গ্রামের বাড়ির এক বাসিন্দা জানান, এক সময়ে রাজু মিয়ার ভাত খেতে ভাত পেতনা। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পরেই আলাদিনের চেরাগ চলে তার হাতে। তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। মাত্র পাঁচ বছরেই সিদ্ধিরগঞ্জের মুক্তিনগর, রসুলবাগ এলাকায় সাতটি বাড়ি ক্রয় করেছেন। রাতারাতি বনে গেছেন শতকোটি টাকার মালিক।
কোটা আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে শুনেছি রাজু মিয়া গা ঢাকা দিয়েছেন। হাসিনা সরকার পতনের পর তার গ্রামের বাড়িতে বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে যেসকল অপরাধীরা অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন ব্যবস্থা গ্রহন করলেও রাজু রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাইরে। তার বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য দাবি জানিয়েছেন তিনি।
টনকি ইউনিয়নের চৈনপুর গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, মাত্র চার বছরের ব্যবধানে আওয়ামীলীগ নেতা মুন্সী নেছার আহমেদ রাজু যেভাবে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এটা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। তিনি এখন রাজু সাহেব নামে এলাকায় পরিচিত। অথচ এক সময় কিছুই ছিলনা তার। শতকোটি টাকা সম্পদের পাশাপাশি হাকিয়ে বেড়াচ্ছেন কোটি টাকা মূল্যের হেরিয়ার মডেলের গাড়ি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সী নেছার আহমেদ রাজু নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, আমি কোন দূর্নীতি করে সম্পদের মালিক হই নি। ব্যবসা করে টাকা কামিয়ে সম্পদের মালিক হয়েছি।
দূর্নীতি দমন কমিশন নারায়ণঞ্জ কার্যালয়ের একজন পরিচালক নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, যারাই অবৈধ সম্পদের পাহাড় করেছেন তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। মুন্সী নেছার আহমেদ রাজুর সম্পদের খোজ খবর নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-১১-এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, দুর্নীতিবাজ যে দলেরই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমরা শিগগিরই মাঠে নামছি।