সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম পেরিয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জে বন্ধ হয়নি অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিক। সরকারী সিদ্ধান্তের পর লোক দেখানোভাবে দু-চারটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিস। অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জন অফিস ম্যানেজে করে বছরের পর বছর ধরে চলছে অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যখনি উপর মহলের নির্দেশা আসে তখন তড়িগড়ি ফটোশেসন মার্কা অভিযান চালায় সিভিল সার্জন অফিস। মজার বিষয় হলো- রহসজনকভাবে অবৈধ এই সকল স্বাস্থসেবা প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ তালিকাও প্রকাশ করে না সিভিল সার্জন অফিস। ফলে এই সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা ও রোগ নির্নয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে রোগী সাধারণ। অন্যদিকে পকেট ভারী হচ্ছে অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান মালিকদের।
সূত্রমতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশিত ৭২ ঘন্টা পরবর্তী দেশে অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করার কথা থাকলেও নারায়ণগঞ্জের চিত্র ভিন্ন। জেলা জুড়ে এখনো চলমান রয়েছে অনিবন্ধিত অনেক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন বিভাগ থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার পর ২৭ ও ২৮ মে জেলার বিভিন্ন স্থানে ৭টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা হয়। ২৯ মে সিদ্ধিরগঞ্জ ও সদর থানা এলাকায় মোট ৬টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ফিজিও থেরাপি সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। অভিযানে ৩টি হাসপাতাল সীলগালা ও ৩টি প্রতিষ্ঠানকে নাম মাত্র জরিমানা করা হয়। ৩০মে সোনারগাঁ উপজেলায় ৬টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে সীলাগালা করে দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্ত অভিযোগ রয়েছে জেলায় শতাধিক অনুমোদনহীন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এদিকে যারা চিকিৎসা সেবার নামে প্রতিদিন রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে নুন্যতম আর্থিক জরিমানা তাদের অব্যবস্থাপনায় খুব একটা পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছে না জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্রমতে, স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনে জন্য আবেদন করতে প্রয়োজন হয় ৪টি লাইসেন্স। এগুলো হলো-পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স। জেলা জুড়ে ১৫৯ টি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত রয়েছে। যার মধ্যে হাসপাতাল রয়েছে ৯৯টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৫৬টি, ৪টি বøাড ব্যাংক। এর বাহিরে রয়েছে শতাধিক অনিবন্ধিত স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শহরের একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো অনলাইন লাইসেন্স গ্রহন কিংবা হালনাগাদ নবায়ন ও সঠিক নিয়মে আবেদন ব্যতীত রোগী ভর্তি, বিভিন্ন ধরনের অপারেশন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ অবৈধভাবে সকল ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরমধ্যে রয়েছে মুক্তি জেনারেল হাসপাতাল, রিজিয়া জেনারেল হাসপাতাল, মিতু ক্লিনিক, ইমন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সুপার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিক্যাল প্যাথলজি এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সোহেল জেনারেল হাসপাতাল, মেডিস্টার হাসপাতাল এন্ড রেনেসা ল্যাব। এছাড়াও সিভিল সার্জন বিভাগে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা অধিকাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নেই প্রয়োজনীয় দপ্তরের ছাড়পত্র। ফলে ছাড়পত্র ছাড়া আবেদনকৃত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন পত্র পায়না। তবে নিবন্ধনপত্র ছাড়াই তাদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
সিভিল সার্জন বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, প্রতিমাসে জেলা ব্যাপী অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমপক্ষে ৩-৪টি অভিযানের প্রয়োজন। এই অভিযান পরিচালনা করতে আমাদের জেলা প্রশাসনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। অবৈধ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়ে অভিযানের জন্য আমরা একাধিকবার উদ্যোগ নেয়ার চেষ্টা করলেও সহযোগিতা পাইনি। ফলে এক মাসেও একটি অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।
নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান জেলাব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনার প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এই সপ্তাহে আর কোন অভিযান পরিচালনা করছি না। আগামী সপ্তাহে এই অভিযান করা হবে। অভিযানে যেসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত করা হয়নি সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। অবৈধ ভাবে ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্য্যালয়: ৪র্থ তলা, রুপালী সুপার মার্কেট, চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ।
বার্তা কক্ষ: ইমেইলঃ [email protected] মোবাইলঃ 01711581634, 01921-116126
Powered by Sourav Bhuiyan