
নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ
নেই পরিবেশের ছাড়পত্র ও কারখানা চালানোর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। পরিবেশ দূষণ রক্ষার্থে আবাসিক এলাকা থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে একাধিক নোটিশ দিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর। তবুও অদৃশ্য পন্থায় অবৈধভাবে সিদ্ধিরগঞ্জে চলছে পরিবেশ দূষণকারি চৌদ্দটি চুনা কারখানা। এতে শ্বাস জনিতসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে আশপাশের বাসিন্দারা। এ বিষয়ে এলাকাবাসীরা স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না প্রশাসন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের এক নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের সিআইখোলা এলাকায় জাজিরা লাইমস, হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুকের মদিনা লাইমস, চাঁন মিয়ার রনি লাইমস, জালাল মিয়ার সুরমা লাইমস, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্বে বাবুল মিয়ার ফয়সাল লাইমস, মিজমিজি সিআই খোলা এলাকায় খোরশেদ মিয়ার ঢাকা লাইমস ও যমুনা লাইমস, সিদ্ধিরগঞ্জ পুল এলাকায় প্রয়াত আবু তালেবের ভাই ভাই লাইমস, প্রয়াত সুন্দর আলীর শরীফ লাইমস, আটি এলাকায় আরাফাত লাইমস এর মালিক হযরত আলী, আশরাফ আলী লাইমস এর মালিক জালাল মিয়া, মেঘনা লাইমস এর মালিক আব্দুল হাই, ওয়াপদা কালোনী এলাকায় খাজা লাইমস এর মালিক সোহেল মিয়া, হারুন লাইমস এর মালিক সাদেক মিয়া, রহমান লাইমস এর মালিক শহিদ হোসেন বিটু, এছাড়াও চুনাফাঁকি করে পবিবেশ বিপন্ন করে ব্যবসা পরিচালনা করছেন আটি ছাপাখানা এলাকার শুভ লাইমস এর মালিক আবু সুফিয়ান, একই এলাকায় শরিফ উদ্দিন ও রমজান মিয়া চুনার ধোঁয়া উড়িয়ে ব্যবসা করছেন।
এলাকাবাসীরা জানান, পরিবেশের নীতিমালা না মেনে ও তিতাস গ্যাস চুরি করে সিদ্ধিরগঞ্জের ঘনবসতি বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় চলছে এসকল চুনা কারখানা। পাথর পুড়িয়ে চুনা তৈরি করতে এসব কারখানায় সারাক্ষণ দাউ দাউ করে জ্বলে আগুন। ফলে কালো ধোয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি নিয়ম ও পরিবেশ দূষণ রক্ষার্থে আবাসিক এলাকা থেকে এসব কারখানা সরিয়ে নিতে গত তিন বছর আগে নোটিশ করেন নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তর। নির্দিষ্ট সময় দিয়ে কয়েক দফা নোটিশ করলেও অদৃশ্য কারণে অদ্যবধি পর্যন্ত এসব কারখানা সরানো হচ্ছেনা। কোন ব্যবস্থাও নিচ্ছেন না সংশিষ্ট দপ্তর। প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারখানার পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন করছেন না। অপরদিকে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ণ করছেন না নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। ফলে কারখানাগুলো বৈধতা হারালেও সংশিষ্ট দপ্তর ও বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে চালানো হচ্ছে।
সিআইখোলার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, এই এলাকার কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের নেতৃত্বে এসকল অবৈধ চুনা কারখানা দীর্ঘদিন যাবৎ পরিচালনা করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই তিনি বহাল তবিয়তে আবাসিক এলাকায় কাগজপত্র নবায়ন ছাড়া চুনাকারখানাগুলো চালিয়ে আসছেন। আমরা অবিলম্বে এসকল অবৈধ চুনা কারখানা অন্যত্র স্থানান্তরের জোর দাবি জানাই।
আমেনা আক্তার নামে হীরাঝিল এলাকার এক বাসিন্দা জানান, বেশীর ভাগ চুনা কারখানার মালিকরা অবৈধভাবে গ্যাস চুরি করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ মালিক বনে গেছেন। প্রত্যেকের রয়েছে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও প্রচুর টাকাকড়ি।
আফিফা রহমান নামে এক বাসিন্দা জানান, চুনাকারখানার সাথে বাসাবাড়ি হওয়ায় আমরা খুবই সমস্যায় আছি। তীব্র গরম আর কারখানার কালো ধোয়ায় জনজীবনে নেমে এসেছে দূর্ভোগ। শিশু ও বয়স্করা শ^াসকষ্টসহ নানা রোগশোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
কারখানার বৈধতা না থাকা সত্বেও কিভাবে চলছে আবাসিক এলাকায় চুনা কারখানাগুলো এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নয় কারখানা মালিকরা। তবে চুনা কারখানার একাধিক মালিকরা কারখানা স্থানান্তরে পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠি ও ছাড়পত্র নবায়ন না করার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মেসার্স জাজিরা লাইমসের মালিক আনোয়ার ইসলাম বলেন, আমরা যখন চুনা কারখানা করেছিলাম তখন ওই এলাকায় ঘনবসতি ছিল না। তবে আমরা নতুন জায়গা দেখে কারখানা স্থানান্তর করার জন্য চিন্তা করছি। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কিভাবে এসকল অবৈধ চুনা কারখানা চালাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কোন ভাবেই এসকল কারখানা পরিচালনা করছি না।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুলাহ আল মামুন জানান, ২০১৬ সাল থেকে এসকল চুনা কারখানার মালিকদের পরিবেশের ছাড়পত্র নবায়নের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। কারখানাগুলো অন্যত্র সরাতে চিঠি দেওয়া হয়েছে সকলকে। খুব শিগ্রই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, আবাসিক এলাকায় কোন অবস্থাতেই চুনা কারখানা পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। এসকল মালিককে তাদের চুনাভাট্টি অন্যত্র সরানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।