
বিশেষ প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের ইসলামপুর এলাকায় মেঘনা নদীর একাংশ দখল করে বালু ভরাট করছেন পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তিনি নদী ভরাট করছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকার সামিট মেঘনাঘাট পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেডের বিদ্যুৎ স্টেশনের নির্মাণ কাজ চলছে। মেঘনা নদীর পাড়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশনা থাকলেও নদী ভরাটের কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। গেল কয়েকদিন ধরে মেঘনা নদীতে জেটি তৈরীর অযুহাতে বড় বড় কয়েকটি কার্গো জাহাজের মাধ্যমে ইট, পাথর বালু দিয়ে মেঘনা নদীর একাংশ দখল করে নিচ্ছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মাসুদুর রহমান মাসুম। ফলে মেঘনা নদীর তীরের কয়েক গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই নদী দখল ও ভরাট করছেন এই প্রভাবশালী মহলটি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাসুম চেয়ারম্যান একজন সাদামাঠা আয়ের লোক ছিলেন। ক্ষমতার প্রভাব আর পালাবদলের পাশাপাশি ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে তার। প্রথমবার সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামের কাছে বিশাল ভোটে পরাজিত হন তিনি। পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর নৌকা প্রতীক পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মাসুদুর রহমান মাসুম। এরপর তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। মেঘনা গ্রুপ, আল মোস্তফাসহ ওই ইউনিয়নে অবস্থিত যেকোন কোম্পানীর জমি ক্রয় বিক্রয়, বালু ভরাট ও দখল বাণিজ্যে মেতে উঠেন চেয়াম্যান মাসুম। তার হুকুম ছাড়া কোন কাজই হয়না এসব কোম্পানীতে।
এছাড়া মেঘনা শিল্পনগরী এলাকায় তার অর্ধশতাধিক শিল্পকারখানার ঝুট ব্যবসা থেকে শুরু করে সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি নিজেই। এভাবে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে মেঘনা এলাকায় একাধিক বহুতল ভবন, ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, নামে বেনামে প্রচুর জমিজমা, একাধিক গাড়িসহ প্রায় শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। ইতিপূর্বে তার অবৈধ সম্পদের হিসেবে চেয়ে দূর্ণীতি দমন কমিশন তাকে নোটিশ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসকল অভিযোগ থেকে মুক্তি পান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিরোজপুর এলাকার এক বাসিন্দা “নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ”কে জানান, এক সময়ে মাসুম চেয়ারম্যানের নূন আনতে পান্তা ফুড়াতো অথচ আজ তিনি কয়েক বছরের ব্যবধানে বাড়ি,গাড়িসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। দূর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করলেই তার অবৈধ সম্পদের সকল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
ইসলামপুর এলাকার এক বাসিন্দা নারায়নগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, কোন ব্যক্তি যদি ওয়ারিশ সার্টিফিকেটের জন্য মাসুম চেয়াম্যানের কাছে যান, তাহলে তিনি সার্টিফিকেট না দিয়ে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ওই সম্পত্তি নিজের নামে নিয়ে পরে কোম্পানীর কাছে বেশী দামে বেক্রি করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজের এই প্রতিবেদককে একাধিক বার তার মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুইয়া “নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ”কে জানান, নদী দখল করে বালু ভরাটের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে দলীয় নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ নদী দখলের সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর(সওজ)’র নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস “নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ”কে জানান, মেঘনা সেতুর কমপক্ষে ছয় কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন বা নদী ভরাটের কোন নীতিমালা নেই। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বালু উত্তোলন বা ভরাটের কারণে সেতুর যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানকে এর দায়ভার নিতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন বিআইডব্লিউটিআই এর নারায়ণগঞ্জের যুগ্ন পরিচালক মো: শহিদুল্লাহ “নারায়নগঞ্জ ক্রাইম নিউজ”কে জানান, নদী ভরাটের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দখল কারীরা যতই শক্তিশালী হউক না কেন তাদের বিরুদ্ধে খুব শিগ্রই আইনগত ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ “নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ”কে জানান, নদী দখল কারী কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ^াস দেন তিনি।