A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জের ঠিকাদার ব্যবসায়ি হাবিবুর রহমান হাবিব। তাকে উপজেলার সকল স্থানে বালু হাবিব হিসেবেও চিনেন। তিনি রুপগঞ্জ উপজেলার  সকল প্রকার ঠিকাদারি  কাজ, বালু উত্তোলণ থেকে শুরু করে ড্রেজার ব্যবসা ও টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। বালু ব্যবসায়ি, ঠিকাদার, টেন্ডার নিয়ন্ত্রক হাবিবুর রহমান হাবি হাতে চাইছেন রুপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এতে ভোটাররা মনে করেন ঠিকাদার হাবিবের হাতেই যাচ্ছে রুপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সকল প্রকার ঠিকাদারি কাজ।

ইতোমধ্যে হাবিবুর রহমান হাবির ওরফে বালু হাবিব উপজেলার বিভিন্নস্থানে নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় ব্যস্তসময় পার করছেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন একজন বালু ব্যবসায়ি, ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী, উপজেলার টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকারি যদি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান  নির্বাচিত হয় তাহলে ওই উপজেলা অবস্থা ভয়াবহরুপ ধারণ করবে।  ইতিমেধ্যে স্থানীয়রা বলাবলি শুরু করেছেন বালু হাবিব নির্বাচিত  হতে পারলে পুরো রুপগঞ্জ উপজেলাকে গিলে খাবে। এমনিতেই তিনি লুটপাট, টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেই বেশী ভালবাসেন।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাগেছে,  রুপগঞ্জে এক আতংকের নাম হাবিবুর রহমান হাবিব ওরফে বালু হাবিব। তার ইশারা ছাড়া বালু ভরাট,বালু ব্যবসা,নদীর তীরে মালামাল লোড,আনলোড,উপজেলা ও পৌরসভায় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, হিন্দুদের জমি জোড় পূর্বক দখল, জমি বেচাকেনাসহ সকল কাজই নিয়ন্ত্রণ হয় তার ইশারায়। পুরো রুপগঞ্জের একক আধিপত্য বিস্তার করে অল্প সময়ে হাতিয়ে নিয়েছেন অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা। একাধিক বাড়ি,শত বিঘা জমি, বিলাশ বহুল একাধিক গাড়িসহ অঢেল টাকা মালিক বনে গেছেন এক সময়ের ছন্নছিন্ন ছাড়া হাবিবুর রহমান হাবিব ওরফে বালু হাবিব। তার অবৈধ সম্পদের খোঁজখবর নিতে দুদকের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন রুপগঞ্জের পাড়া মহল্লাবাসি।

উপজেলার উত্তর রুপসী (নগরপাড়া) গ্রামের মৃত আ: রাজ্জাক মিয়ার ছেলে হাবিব ভুইয়া ওরফে বালু হাবিব। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য শফিউল্লাহর নাম ভাঙ্গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, বালু ভরাট, জমি-জমা দখল, হিন্দু সম্প্রত্তিদখলসহ সকল কিছু একেএকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন তিনি।

মেসার্স হাবিব এন্টার প্রাইজ ও রুপসী ড্রেজিং প্রকল্প নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি রুপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার এলাকায় কৃষকদের ফসলি জমি জোড় পূর্বক বালু দিয়ে ভরাট, সাধারণ মানুষের জমি জোড় পূর্বক দখল, নদী খননের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি, নদীর তীরবর্তী কারখানায় মালামাল লোড-আনলোড, তারাবো পৌরসভা ও উপজেলায় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করাই বালু হাবিবের কাজ।

উপজেলা নির্বাচনি হলফনামায় হাবিবুর রহমান হাবিব উল্লেখ করেছেন, ব্যবসা থেকে হাবিবুর রহমান হাবিবের বাৎসরিক আয় দুই কোটি একষট্টিলাখ বারো হাজার পাঁচশত টাকা। ড্রেজার ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় সাত লাখ পয়তাল্লিশ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ পঁচিশ লাখ টাকা রয়েছে।ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা রয়েছে ছয়কোটি সাতানব্বই লাখ সাত হাজার চারশত বাইশ টাকা। তার নামে একটি জিপ, একটি পিকাপ দুইটি কার দুইটি সিএনজি রয়েছে যার মূল্য এককোটি ঊনিশলাখ ছিয়ানব্বই হাজার নয়শত পঁচাশি টাকা। তার নামে বিশ ভরি স্বর্নালংকার রয়েছে। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী দেখিয়েছেন নয় লাখ পঞ্চান্ন হাজার টাকা। আসবাবপত্র দেখিয়েছেন পঞ্চাশ হাজার টাকা। তার নামে কৃষি জমি রয়েছে ৯০৭.৯৬ শতাংশ যার মূল্য চৌদ্দকোটি ঊনত্রিশ লাখ ঊনানব্বই হাজার সাতশত পঁচানব্বই টাকা। অকৃষি জমি রয়েছে ৭১০.৮৬ শতাংশ যার মূল্য দেখিয়েছেন চারকোটি ঊনসত্তর লাখ ছিচল্লিশ হাজার সাতশত তিন টাকা। বসুন্ধরার ভাটারায় আবাসিক বিল্ডিং এর মূল্য দেখিয়েছেন বেয়াল্লিশ লাখ টাকা। হাবিব পেপার মিলস এর মালিকানা দেখিয়েছেন এক কোটি টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকে দেনা দেখিয়েছেন পাঁচ কোটি বাষট্টি লাখ একাত্তর হাজার টাকা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। হলফ নামায় তিনি উল্লেখ করেন কৃষি জমির পরিমান ৯০৭.৯৬ শতাংশ ও অর্জন কালীন সময়ে আর্থিক মূল্য বাবদ চৌদ্দকোটি ঊনত্রিশ লাখ ঊনানব্বই হাজার সাত,শ পাঁচনব্বই টাকা।

অকৃষি জমি ৭১০.৮৬ শতাংশ ও অর্জনকালীন সময়ের আর্থিক মূল্য বাবদ চার কোটি উনস্ততর লাখ ছিচল্লিশ হাজার সাত’শ তিন টাকা। বসুন্ধরা আবাসিক ভাটারা এলাকায় একটি ভবন থেকে আয় বেয়াল্লিশ লক্ষ টাকা।

এছাড়াও অন্যান্য খাতে ও হাবিব পেপার মেইল থেকে এক কোটি টাকা আয় দেখালেও প্রকৃত পক্ষে হাবিবুর রহমানে হাবিব ওরফে বালু বালু হাবিরের ঢাকার বসুন্ধরা এলাকায় এভার গ্রিন হাসপাতালের পিছনে ছয় কাঠা জমির উপর ছয় তলা ভবন যার আনুমানিক মূল্য পনের কোটি টাকা। রুপসি এলাকায় দশ কাঠা জমির উপর দুটি পাঁচ তলা ভবন যার আনুমানিক মূল্য দশ কোটি টাকা। পূর্বাচল এলাকায় কয়েককোটি টাকা মূল্যের একাধিক প্লট, তারাবো পৌরসভা ও গোলাকান্দাইল এলাকায় প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা মূল্যের শতাধিক বিঘা জমি রয়েছে তার।

আয়েশা সিদ্দিকা নামে গোলাকান্দাইল এলাকার এক বাসিন্দা জানান, হাবিবুর রহমান ওরফে বালু হাবিবের এক সময় কিছুই ছিলো না,অথচ আজ সে শতকোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। দূর্নীতি দমন কমিশন তার সম্পদের হিসেব দেখলেই তার সম্পদের আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

তারাবো এলাকার বাসিন্দা আবুল ফজল নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, হাবিবুর রহমান ওরফে বালু হাবিব আওয়ামীলীগের সদস্য পদে থেকেও যেভাবে সে বালু ও জমি ব্যবসা টেন্ডারবাজিসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে এটা অত্যান্ত দু:খজনক। তিনি যদি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন তাহলে তিনিই হবেন উপজেলার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি। এতে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসঙগঠনের নেতাকর্মীরা অসহায় হয়ে পড়বে তার কাছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান হাবিব নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, আমি বালু ব্যবসা করে নিজের ভাগ্যের উন্নয়ণ করেছি। পাশাপাশি ঠিকাদারি করেছি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে সকলের জন্য কাজ করবো।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনকারি যেই হউক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

আগের সংবাদ দেখুনজেলা ট্রাফিক পুলিশ বেপরোয়া
পরের সংবাদ দেখুনকিশোরগ্যাং প্রতিরোধ মিছিলে কিশোরগ্যাং নেতা