A Top Ads

নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: রাজধানীতে প্রবেশের মূল ফটক ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, সানারপাড়, মৌচাক চিটাগাংরোডের শিমড়াইলমোড়, কাঁচপুর সেতুর নীচেসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্টাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন পরিবহনের মালিক ও চালকরা। এসব পয়েন্টে জেলা ট্টাফিক পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তারা যানবাহনে তল্লাসির নামে মোটা অংকের চাঁদা তুলছেন।

কোন কোন সময়ে পরিবহনের ফিটনেস নেই, চালকের লাইসেন্স নেই, গাড়ির রোড পারমিট নেই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে বাস ট্টাক, সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করছেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওই পরিবহনকে জরিমানা করা হচ্ছে। পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে পনের হাজার পর্যন্ত টাকা জরিমানার করছেন ওই জেলা ট্টাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা। আর উৎকোচ বা মুচলেকা দিলেই সবকিছু সমাধান হয়ে যাচ্ছে। গত দুই মাস ধরে এমনই পরিবহন চাঁদাবাজির কার্যক্রম চালাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্টাফিক বিভাগ।

শান্তি পরিবহনের চালক ইব্রাহিম জানান, ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-১৯৩৭। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সার্জেন্ট ফয়সাল গাড়িটি আটক করে পনের হাজার টাকার মামলা করে দেয়। গাড়িতে ৪১টি সিটের পরিবর্তে ৩৭টি সিট থাকার অপরাধে এই মামলা করা হয়। তিনি বলেন, সামান্য অপরাধে কিভাবে আমাদের পনের হাজার টাকা মামলা দেওয়া হয়েছে তা কোনভাবেই বুঝে উঠতে পারছিনা।

ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৯১৪৩ সময় পরিবহনের চালক রায়হান মিয়া জানান, তার গাড়িটি মহাসড়কের এক পাশে^ ছিলো হঠাৎ জেলা পুলিশের সার্জেন্ট সোহেল রানা ও তার সঙ্গীয় ফোর্স জামাল মিয়া গাড়িটি জব্দ করে পাঁচ হাজার টাকা মামলা দিয়ে দেন। কি অপরাধে মামলা দেওয়া হয়েছে তা কোনভাবেই বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, ঢাকা মেট্রো-ব, ১১-৩৪২১, ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৮৯৩১, ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৮৩৮৭ এই পরিবহনগুলো আটক করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় জেলা ট্রাফিক পুলিশ।

চালকরা জানায়, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টরা যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে কাগজপত্র চেক করার নামে চাঁদা আদায় করছেন। শুধু তাই নয়, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন নানা ব্রান্ডের গাড়ি কারণে-অকারণে থামিয়ে কাগজপত্র চেকসহ বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি করছে। আবার অনেক গাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটক রাখায় যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। গাড়ির কাগজপত্র চেক করা নয়, সাধারণ মানুষকে হয়রানি আর টাকা আদায়ই তাদের মূল টার্গেট বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের এই চাঁদাবাজি নিত্যদিনের হয়ে দাড়িয়েছে। যানজটের তোয়াক্কা না করে শুধু দিনে নয়, রাতভর চাঁদা নিতে তৎপর এসব ট্রাফিক সদস্যরা। প্রতিটি ট্রাক থেকে ন্যূনতম ১০০ থেকে শুরু করে ১০০০ টাকা বা তারও বেশি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। রাতের বেলায় কাচপুর সেতু হয়ে গাড়ি শিমড়াইল মোড়ে ঢুকলেই তাদের টাকা দিতে হয়।

খোঁজখবর নিয়ে জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টক (টিআই) আব্দুল করিম শেখের নির্দেশে ঢাকা চট্রগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও শিমড়াইল মোড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে সার্জেন্ট সোহেল ও তার সহযোগী জিয়া নামের একব্যক্তি প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি বিভিন্ন যানবাহন দেখা ও তল্লাসির নামে বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি করছেন। দাবিকৃত চাঁদা না দিলে গাড়ি ডাম্পিং এ দিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। তারপরও যদি চাঁদার মাশোয়ারা না দেয় তাহলে গাড়িটি মামলা দিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এভাবেই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা সাইনবোড থেকে শিমড়াইল মোড় ও কাচপুর সেতুর নীচের বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদা তুলছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন চালক জানান, বাস, ট্রাক কাভার্ডভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র দেখার নামে ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট পরিচয় দিয়ে গাড়ি আটকের পর মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর এ চাঁদাবাজি সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত করছে।

প্রকাশ্যে গাড়ি ধরে চাঁদা আদায় করছেন এরা। ব্যস্ততম ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট নিরসনের পরিবর্তে নারায়নগঞ্জ জেলা ট্রাফিক ও সার্জেন্টদের চাঁদাবাজির কারণে যানজটও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই আব্দু করিম শেখের নির্দেশেই সাইনবোর্ড, শিমড়াইল মোড়ের বি বিভিন্ন পয়েন্টে বিভিন্ন পরিবহন থেকে প্রতিনিয়তই চাঁদাবাজি হচ্ছে। সার্জেন্ট সোহেল রানা ও সহযোগী জিয়া মিয়াসহ একটি জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিম এই চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের একাধিক সদস্য।

নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সোহেল রানা জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) করিম স্যারের নির্দেশে আমরা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে আমরা যে সকল পরিবহনের কাগজপত্র ও চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করছি।

শিমড়াইল মোড়ের এক বাস চালক জানান, জেলা ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজিতে তারা অতিষ্ঠ। শিমড়াইল মোড়, সাইনবোর্ড হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করতে কমপক্ষে তিনবার ট্রাফিক পুলিশের হাতে পড়তে হয়। তিনি বলেন, খবর নিয়ে দেখলাম এরা নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের সদস্য। কারণে-অকারণে গাড়ি থামিয়ে মামলা দেয়ার ভয় দেখানো হয়। আবার ট্রাফিক পুলিশের এডিশনার এসপির ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকার হাতিয়ে নেয়। তাদের চাহিদা মতো টাকা দিলে সব ঝামেলা চুকে যায়।

তারাবো মেঘলা হিমাচল শ্রাবন পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম মিয়া জানান, কাগজপত্র ও চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক থাকার পরেও অহেতুক হয়রানি করে চালকদের কাছ থেকে মামলা দেওয়ার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন জেলা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। আমরা এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সময় পরিবহনের চেয়ারম্যান সৈকত হোসেন জানান, গত দুই মাস যাবৎ নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা সাইনবোর্ড, শিমড়াইল, সানারপাড় ও মৌচাক মোড়ে আমাদের পরিবহনগুলো থেকে যেভাবে চাঁদা আদায় করছে এই অবস্থা করছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পরিবহন ব্যবস্থা ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসা করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আব্দুল করিম শেখ জানান, যদি কোন জেলা ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ট্রাফিক রুহুল আমিন সাগর জানান, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাড়ি রিকোজিশন করা হচ্ছে। যেসকল গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশের উৎকোচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ওই সকল সার্জেন্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

গাজিপুর রিজিয়ন এর হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার সীমা রানি সরকার জানান, জেলা ট্রাফিক পুলিশের কাজ হলো আঞ্চলিক সড়কগুলো দেখভাল করার। আর হাইওয়ে পুলিশের কাজ হলো মহাসড়কগুলো দেখাশুনা করবে। তবে হাইওেয় পুলিশ ও জেলা পুলিশ সমন্বয় করে কাজ করলে সুন্দর হয়।

আগের সংবাদ দেখুনসোনারগাঁয়ের রসালো লিচু এখন বাজারে
পরের সংবাদ দেখুন টেন্ডারবাজ হাবিবের হাতে যাচ্ছে রুপগঞ্জ