নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজঃ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মৎস্যজীবীদল নেতা জাহাঙ্গীর হোসেনের হত্যা মামলার আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও হত্যকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের গ্রেফতার করতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার। এদিকে আসামীরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়তই হুমকি দিচ্ছে নিহত পরিবারের সদস্যদের। এতে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতা ও আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। নিহত জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ- অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমনের সমর্থক বলে দাবি করেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার মাহমুদ ইউনিয়নের সালামদী বাজারে জাহাঙ্গীর হোসেন মালিকানাধীন তিনটি দোকান ভাড়া নেন বিএনপি নেতা তোতা মেম্বার। দোকান ভাড়া নেওয়ার পর দীর্ঘদিন যাবৎ ভাড়া পরিশোধ না করেই তালবাহানা শুরু করেন তোতা মেম্বার। পরে গেল মাসের ৩০ জুলাই জাহাঙ্গীর হোসেন দশ মাসের বকেয়া ভাড়া দাবি করেন। এসময় ভাড়ার টাকা দিতে অস্বীকার করেন মাহমুদপুর ইউনিয়ণ বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য তোতা প্রধান। এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটির শুরু হয় তাদের মধ্যে। পরে তোতা মেম্বার ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক খোকন প্রদান, ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য রাসেল প্রধান, আলম মিয়া ও সাদ্দাম হেসেনসহ ১০-১২ জনের একটি সন্ত্রাসীদল তাকে অফিস কার্য্যালয়ের ভিতরে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে ফিল্মী স্ট্যাইলে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে জাহাঙ্গীর হোসেন মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সেলিনা বেগম পরদিন আড়াইহাজার থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামী করা হয় আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য তোতা মিয়া প্রধান, তার ছেলে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক খোকন প্রধান, আরেক ছেলে মাহমুদপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য রাসেল প্রধান, তোতা মেম্বারের ভাই বেনু প্রধান, ভাতিজা আলম প্রধান, সাদ্দাম হোসেনসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
অজ্ঞাত আরও ৮ থেকে ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির সকল প্রকার সদস্যপদ থেকে এই পাঁচজনকে বহিস্কার করা হয়। এজহার ভুক্ত আসামী হাসেম মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
নিহতের পরিবার জানান, হত্যা মামলার প্রধান আসামী তোতা মেম্বার তার ভাই ও ভাতিজারা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা ন্যায় বিচার পাবো কিনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছি। হত্যাকান্ডোর এক সাপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মূল আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পারছেন না প্রশাসন। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই আমাদেরকে কয়েকবার হুমকি প্রদান করছে আসামীরা। এতে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ও আতংকে দিন কাটাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন জানান, নিহত জাহাঙ্গীর হোসেন আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। উক্ত কমিটি ২০২৫ সালে চার মার্চ অনুমোদন দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবীদল আড়াইহাজার উপজেলা শাখার সভাপতি শাহজাহান মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আশাবুদ্দিন এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি কাউছার ভূইয়া। তিনি বলেন, নিহত জাহাঙ্গীর হোসেন আমার দলের একজন সক্রিয়কর্মী ছিলেন। দলীয় সকল সভাসমাবেশে তিনি আমার ব্যানারে অংশ গ্রহন করেছেন। অথচ বিভিন্ন মিডিয়াতে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। সাংবাদিক ভাইদের আরো সচেতন হয়ে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ জানান তিনি।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার নাসির উদ্দিন জানান, জাহাঙ্গীর হোসেন হত্যা মামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে হাশেম মিয়া নামে একজন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের জন্য আমরা বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছি।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্য্যালয়: ৪র্থ তলা, রুপালী সুপার মার্কেট, চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ।
বার্তা কক্ষ: ইমেইলঃ [email protected] মোবাইলঃ 01711581634, 01921-116126
Powered by Sourav Bhuiyan