
নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজঃ টেন্ডারবাজী, জমি দখল, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ, বালু উত্তোলন ও বালু ভরাট থেকে শুরু করে সবকিছুই দেখভাল করতেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু। তিনি নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের পর পর তিন বার সংসদ সদস্য ছিলেন। এসকল কর্মাকান্ডের সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম শরিফ ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও সরকারি সফর আলী কলেজের সাবেক ভিপি আমির হোসেন আমির। এই তিন নেতার কথায় আড়াইহাজারের সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হত বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ আড়াইহাজার পৌরসভার কৃঞ্ষপুরা এলাকার বাসিন্দা। তিনি ্ওই এলাকার মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু কৃঞ্ষপুরা এলাকায় তাদের কাছ থেকে একটি জমি ক্রয় করে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন সাবেক এমপি বাবু। সেই সুবাদেই শফিকুল ইসলাম শরিফের সাথে এমপি বাবুর সখ্যতা গড়ে উঠে। এমপির আশির্বাদে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সরকারি সফর আলী কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন শরিফ। এরপর থেকে আর তার পিছনে তাকাতে হয়নি। কৃঞ্ষপুরা এলাকায় মসজিদ সংলগ্ন এক ব্যক্তির কয়েক কোটি টাকা মূল্যের দশ শতাংশ জমি জোড়পূর্বক দখল করে নেয় ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফ।
বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী আড়াইহাজার উপজেলার নায়েবে আমির এম আউয়াল সাহেবের মালিকানাধিন আট নাম্বার ওয়ার্ডের লোকনাথ মন্দির সংলগ্ন রেলওয়ের জায়গা লিজকৃত মালিকানাধিন জমিতে গড়ে উঠা পুকুরের বিশ লাখ টাকার মাছ লুট ও দশটি দোকান জোড়পূর্বক দখল করে নেয় শরিফ ও তার চাচাতো ভাই শামিম মিয়া। এ বিষয়ে আউয়াল মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম কালের কন্ঠকে জানান, আমাদের দোকানপাট দখল ও পুকুরের মাছ লুট করে নেওয়ার পর আমার বাবা ২০২০ সালের ৬জুন মারা যান। গত ৫ আগষ্টের আগ পর্যন্ত ওরাই আমাদের দোকানের ভাড়া জোড়পূর্বক উত্তোলন করেন। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন রেলওয়ের জায়গায় জোড়পূর্বক দোকানপাট নির্মাণ করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ধুপতারা এলাকার কালিবাড়ি মোল্লাপাড়া এলাকার মুসা মিয়ার ছেলে। ধুপতারা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি বাবুল মিয়াকে পিটিয়ে তার হাত ও পা ভেঙ্গে দেয় সাদ্দাম হোসেন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। এ বিষয়ে ধুপতারা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম রতন বাদি হয়ে সাদ্দাম হোসেন ও শরিফুল ইসলাম শরিফকে আসামী করে আড়াইহাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে কালীবাজার এলাকায় জমি ও দোকানপাট দখল সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজিসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আড়াইহাজার পৌরসভা সংলগ্ন পাঁচ কাঠার তিনটি প্লট যার আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকার সম্পাদকসহ কালীবাড়ির ধুপতারা এলাকায় তার বাবার নামে মুসা মার্কেটসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে তার।
সরকারি সফর আলী কলেজের সাবেক ভিডি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন ছিলেন সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর শক্তিশালী হাতিয়ার। আমির হোসেন আনোয়ার হোসেনের ছেলে। উপজেলার সকল টেন্ডর নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। আমির কনষ্টাকশনের মালিক আমির হোসেন সকল ঠিকাদারির কায্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন। আড়াইহাজার উপজেলার ও দুটি পৌরসভার সকল প্রকার ঠিকাদারি কার্যক্রম দেখভাল করতেন তিনি। তিনি বন্দরের মদনপুর শশুরবাড়ি এলাকায় অনেক জমাজমি ও সম্পদের মালিক রয়েছেন বলে একটি সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
এলাকাবাসীরা জানায়, আড়াইহাজার আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু তার এই তিন হাতিয়ারকে দিয়ে এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ,টেন্ডারবাজি, বালু উত্তোলনসহ সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতেন। প্রভাবশালী সাংসদ বাবুর ছত্রছায়ায় তারা এলাকায় বেপরোয়াভাবে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করলেও প্রশাসন তাদের কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি। যার ফলে তারা রয়ে যায় ধরা ছোড়ার বাহিরে।
আকলিমা আক্তার নামে ধুপতারা ইউনিয়নের এক বাসিন্দা জানান, এই তিনজনের অত্যাচারে দিশেহারা থাকত আড়াইহাজার এলাকা। এরা যাকে পেত তার সাথেই জুলুম অত্যাচার করতো। ক্ষমতার প্রভাবে তারা কাউকেই চিনতো না। এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে পুরো এলাকাটিতে তারা ত্রাসের রাজক্ত কায়েম করেছেন।
করিম মিয়া নামে সরকারি সফল আলী কলেজের এক ছাত্র জানান, কলেজটিতে রাজনীতি না করলেই বিপদ হতো ছাত্রদের জন্য। ভিপি আমির, শরিফ ও সাদ্দামের নেতৃত্বে চলতো সকল সন্ত্রাসী কার্যক্রম। তারা হুন্ডা বাহিনী দিয়ে পুরো এলাকায় মহড়া দিতেন। মানুষের মনে ভয়ের সঞ্চার করতেন। এই বাহিনীর ভয়ে তটস্থ থাকতো আড়াইহাজার উপজেলার সবত্রই।
এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও ভিপি আমির হোসেনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এনায়েত হোসেন জানান, আড়াইহাজার উজেলার ছাত্রলীগের সভপতি শরিফুর ইলসাম শরিফ ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এবং সরকারি সফল আলী কলেজের ভিপি আমির হোসেনের বিরুদ্ধে শফিক মিয়া, বাবুল হোসেন হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের জন্য আমরা বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছি।