
নারায়নগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম সেন্টু গ্রেফতার এড়াতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলন চলাকালিন সময় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তিনি। তার পালানোর বিষয় নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ণ পরিষদের চেয়ারম্যান না থাকায় তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ইউপি সদস্য আল মামুন মিন্টু ভুইয়া।
আঠাশ জুলাই কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এক কর্মী সভায় আওয়ামীলীগ নেতা জসিম উদ্দিন বলেন, ঊনিশ জুলাই রাতে মনিরুল আলম সেন্টু চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য মিন্টু মিয়া, যুবদল নেতা শাকিলসহ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী ভুইঘরের এক বাড়িতে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করেছেন। জ¦ালাও পোড়াও নাশকতা করতে তিনি বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের পাঁচলাখ টাকা দেন। আওয়ামীলীগের ব্যানারে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ফতুল্লা ও কুতুবপুর বিএনপির সব নেতাকর্মীরা কক্সবাজারে ঘুরতে যান। সেন্টু চেয়ারম্যান পরের দিন কক্সবাজারে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে সভা করেছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে সভার ছবিও তার কাছে রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক আওয়ামীলীগ নেতা জানান, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জ¦ালাও পোড়াও মামলার একাধিক আসামী মনিরুল আলম সেন্টুকে আওয়ামীলীগের সমর্থন দিয়ে চেয়ারম্যান বানানোর ফলে ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের ত্যাগী নির্যাতিত নেতাকর্মীরা নিস্কৃয় হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসীরা জানায়, কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরূল আলম সেন্টু ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৬সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ধানের শীষ প্রতিক ছবি দিয়ে পোষ্টার সাটিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। পরবর্তীতে রাতারাতি ধানের শীষের প্রতিক ফেলে দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। সে নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী গোলাম রসুল শিকদারকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।
দলীয় সূত্রে জানায়ায়, কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটিতে থানা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম টিটু ও সদস্য সচিব আব্দুল বারি ভুইয়া স্বাক্ষরিত কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে বিল্লাল হোসেনকে ও সদস্য সচিব করা হয়েছে আনোয়ার হোসেনকে। ওই আহ্ববায়ক কমিটিতে চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টুর বড় ভাই মাজহারুল আলম মিথুনকে সতের নাম্বার সদস্য ও ছোটভাই মামুন হাবিবকে আঠার নাম্বার সদস্য হিসেবে ফতুল্লা থানা বিএনপির কমিটিতে রাখা হয়েছে।
চেয়ারম্যান সেন্টুর ছোটভাই মামুন হাবিবের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসা, জমিদখল সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রকাশ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের নামে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে থাকেন বলে দাবি করেন স্থানীয় আওমীলীগের নেতাকর্মীরা।
মনিরুল আলম সেন্টুর বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে জামায়াত বিএনপির জ¦ালাও পোড়াও নাশকতার মামলাও রয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা শফিকুর রহমান মেছের হত্যা, পাগলা বাজারে আওয়ামীলীগ মিছিলে প্রকাশ্যে গুলি করে এক যুবলীগ নেতাকে হত্যা করার মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দেলপাড়া বাজার এলাকার বাসিন্দা আলেক মিয়া জানান, নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নয় নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ই¯্রাফিল প্রধান ও কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই দুই পল্টিবাজ নেতা বিএনপি ছেড়ে আওয়ামীলীগের সমর্থনে নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেও তাদের দুইজনের মন কাঁদে সেই পুরনো দল বিএনপির জন্যই। প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগের সাথে সখ্যতা থাকলেও মনে প্রাণে বিএনপিকে ভালবাসেন তারা দুজন। কোটা আন্দলনের ঘটনায় কাউন্সিলর ই¯্রাফিল প্রধান গ্রেফতার হওয়ার পর চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু গ্রেফতার এড়াতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তাকেও গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
কুতুবপর ইউনিয়নের কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা জানান, চেয়ারম্যান সেন্টুর কারণে ফতুল্লা থানার আওয়ামীগের কর্মীরা অবহেলিত। চেয়ারম্যান সেন্টু দিনের বেলা আওয়ামীলীগ আর রাতের বেলায় বিএনপির কর্মীদের সাথে গোপন বৈঠক করেন। বিষয়টি উচ্চ মহলে কয়েকদফা জানালেও কোন প্রতিকার পায়নি স্থানীয় আওয়ামীলীগ কর্মীরা। তারা জানান, গত ঊনিশ ও বিশ জুলাই কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন শহিদুল ইসলাম টিটুসহ সেন্টু চেয়ারম্যানের বহু অনুসারি। ইতিমধ্যে শহিদুলকে ঢাকা মেট্রোপলিন পুলিশ (ডিএমপি)’র গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি) গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় মনিরুল আলম সেন্টুকে গ্রেফতার করতে হন্য হয়ে পুলিশ খুঁজলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
ফতুল্লা আওয়ামীলীগের এক প্রভাবশালী নেতা নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, বিএনপির লোকদের দলে এনে আওয়ামীলীগের কোন লাভ হয় নি বরং ক্ষতি হয়েছে। এখন সময় এসেছে তাদের চিহিৃত করে দলীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে: কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, নাশকতার সাথে জড়িত থাকার ব্যক্তি যতই প্রভাবশালী হউক না কেন তাদের গ্রেফতার করে খুব শিগ্রই আইনের আওতায় আনা হবে।