
সোনারগাঁ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গ্যাসের পিরোজপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে কয়েক শত গ্রামবাসীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আলাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। তিনি গত কয়েক বছরের এসকল অবৈধ টাকায় বাড়ি, গাড়ি, হাসপাতালসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তভোগীরা। এ বিষয়ে তিতাসগ্যাসের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসীরা।
এলাকাবাসীরা জানান, উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে আলাউদ্দিন মিয়া ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সল পর্যন্ত নয়াগাঁও এলাকার প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের কাছ থেকে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। গেল দশ বছরে এলাকাবাসীর গ্যাস সংযোগ না পেয়ে অসহায় ও হতাশ হয়ে পড়েছেন। তারা জানান, তার নিজের বাড়ি ও ওই এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা বাদল মিয়া গ্যাস সংযোগ বৈধ করেছেন।
নয়াগাও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল রউফ মিয়া জানান, প্রায় দশ বছর আগে আমার বাড়ির গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কথা বলে আলাউদ্দিন মিয়া আমার কাছ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন গ্যাস সংযোগ দিতে পারেন নি তিনি। গ্যাস সংযোগের কথা বললে তিনি তালবাহানা শুরু করেন। গত রমজানের ঈদের আগেও গ্রামবাসীর কাছ থেকে প্রায় বাইশলাখ টাকা নিয়ে নেন প্রতারক আলাউদ্দিন।
সুমন মিয়া জানান, আমাদের কাছ থেকে গ্যাস সংযোগ এর কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তার নিজ বাড়িতে তিন তলা ভবন, মঙ্গলের গাঁও(বটতলা) এলাকয় হাসপাতালসহ দুটি বহুতল ভবন নির্মাণ ও প্রায় পাচবিঘা জমির উপর বিশাল গরুর খামার করেছেন। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট করেছেন তিনি। দূর্নীতি দমন কমিশন তার সম্পদের হিসেব দেখলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
শহিদুল্লাহ মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, আলাউদ্দিন মিয়া এলাকায় একজন খুনী ও ভুমিদস্যু নামে পরিচিত। ওই এলাকায় চিটাগাং বিল্ডার্স নামে একটি শিল্পকারখানার বালুভরাটকে কেন্দ্র করে আলাউদ্দিন ২০২১ সালে ২০ ফেব্রুয়ারী সাইদুল ইসলাম, সমর আলী, আলী আহাম্মদকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করেন। এই তিনটি হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী আলাউদ্দিন মিয়া।
শরিফ হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, নয়াগাঁও জামে মসজিদ ও মাদ্রাসার সভাপতি হয়ে তিনি নামে বেনামে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এতে আমরা মুসল্লিরা তার কাছে হিসেব চাইতে গেলে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি প্রদান করেন। আমরা সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাইনা।
সাদেকুর রহমান নামে এক ব্যক্তি জানান, আমরা কোটি কোটি টাকা দিয়ে গ্যাস লাইন সংযোগ নিতে গিয়েও পেলাম না। সম্প্রতি মহিলা ম্যাজিট্টেডের নেতৃত্বে সোনারগাঁ থানার পুলিশ ও তিতাস গ্যাস এন্ড ট্টান্সমিশনের কর্মকর্তারা এসকল অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে আমাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাগজপত্র ঠিক করার জন্য সময় দিয়ে যায়। এ বিষয়ে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আলাউদ্দিন আমাদের সাথে প্রতারণা করে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। আমরা এর ন্যায় বিচার চাই।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে আলাউদ্দিন মিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল ফোনটি রিসিভ করেন নি।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ান উল ইসলাম জানান, অবৈধ গ্যাস সংযোগের নামে কেউ সাধারন মানুষের সাথে প্রতারণা করে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে উপযুক্ত প্রমাণ পেলে আলাউদ্দিনের নামে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, এলাকাবাসীর সাথে প্রতারণা করে তিতাস গ্যাসের নামে কেউ টাকা উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১১ এর পরিচালনক তানভীর মাহমুদ পাশা জানান, অবৈধ কাজের সাথে জড়িত ব্যক্তি যতই শক্তিশালী হউক না কেন তাকে আইনের আওতায় এনে বিচারের সম্মুখিন করা হবে।
তিতাস গ্যাস এন্ড ট্টান্সমিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদ মোল্লা জানান, অবৈধ গ্যাস সংযোগের নামে কোন ব্যক্তি টাকা হাতিয়ে নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।