
স্থানীরা জানান, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষা একটা জাতিকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করে তোলে। এ শিক্ষা যিনি প্রদান করেন তাকে শিক্ষক বলে। শিক্ষকের কাজ হলো শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করে সুনাগরিক করে গড়ে তোলা। তখন জাতি পাবে সঠিক মানুষ, দেশ পাবে সুনাগরিক। আর দেশ ও জাতি হবে উন্নত। আর সে শিক্ষক যদি হয় কোন দল বা ব্যক্তির হাতিয়ার। আর তিনি যদি ব্যহৃত হন কোন ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য, নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের আশায় চাটুকারিতা করেন। তখন তিনি আর শিক্ষক থাকেন না। হয়ে যান বাণিজ্যিক যন্ত্র। তার কাছ থেকে জাতি আর কিছু আশা করতে পারেন না। এমনই বহু দলকানা, চাটুকার, দালাল, স্বার্থবাদী, লোভী, ভন্ড এবং পেশাগত দায়ীত্ব পালন না করে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারনা করে শিক্ষা না দিয়েই তিনি দিনের পর দিন জনগনের টেক্সে বেতন ভক্ষণ করে নিজেকে আদর্শ শিক্ষক দাবি করেন।
গত ১৫ বছর এমন হাজারো চাটুকার শিক্ষকদের কারণে আজ শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের ধার প্রান্তে। বহু দিন ধরে এ অবস্থা চলছে সারা দেশে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের তার পদ থেকে জোড় করে সরানো হচ্ছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, অভিভাবক এ সচেতনমহল। সোনারগাঁ এলাকায়ও এমন কয়েকজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের তাদের পদ থেকে সড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আরো কয়েকজনকে সরানোর জন্য শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে হানা দিচ্ছে। তবে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা গা ঢাকা দিয়েছেন। অনেকে আবার বিভিন্ন দলীয় নেতা কর্মিদের পুরাতন কায়দায় তৈল মৈথন করছেন।
সোনারগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফজ্জামান অপু, তার স্ত্রী একই কলেজের অধ্যাপক খন্দকার দীল আফরোজ। তাদের বিরোদ্ধে অভিযোগ তারা নামে বেনামে কেরানী জাহাঙ্গীর আর জুয়েলের মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। খন্দকার দীল আফরোজ স্বামী অধ্যক্ষ হওয়ায় তিনি শ্রেনিতে পাঠদান না করে শুধু মাতাববরিতে ব্যস্ত ছিলেন। অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরন ও ছড়ি ঘুড়িয়েছেন।
সোনারগাঁ জিআর ইনস্টিটউশনের অধ্যক্ষ সুলতান মিয়া। যার অধ্যক্ষ হওয়ার কোন যোগ্যতা নাই। শিক্ষা জীবনের সব কটা সনদ তৃতীয় শ্রেণি। কথিত ভাগিনা এমপি কায়সার হাসনাতকে হাত করে কৌশলে অধ্যক্ষের পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন। প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি টাকা নিজের পকেটে নিয়েছেন। পদ বাচাতে সুচতুর সুলতান মিয়া বর্তমানে ছুটিতে আছেন।
বৈদ্যেরবাজার পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন। তিনি ওই বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর থেকে একের পর এক বির্তকের জন্ম দিয়ে আসছেন। তার অপকর্মের কাহিনী বিভিন্ন মিডিয়ায় আসছে অবিরত। ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, এলাকাবাসীর সাথে তার আচরন ভাল না। তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করেন। কাউকে তিনি কুছপরোয়া করেন না। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিডিয়ায় কৃতকর্মের ফলাফল প্রকাশ পাচ্ছে। বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, নথি গায়েব করার জন্য আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন কৌশলে। পরে তিনি মায়া কান্না করে পরিদর্শন করতে এলে জনরোষানলে পরে উত্তম মধ্যম পেয়ে স্থান ত্যাগ করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি এখন স্কুলে আসেন না। চাকরি হারাবার ভয়ে।
বারদী স্কুল এন্ড কলেজের গোলাম মোস্তফা সাবেক সভাপতিকে ম্যানেজ করে টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সোনারগাঁ বালিকা গার্লস পাইলটের মতিউর রহমান তিনি কমিটির সভাপতিকে ছাড়া কাউকে পাত্তাই না। তার বিরুদ্ধে বহু আগে থেকেই নানা অভিযোগ।
হাজী মতিউর রহমান সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের তাজবির হোসেন। তিনি পৈত্রিক সূত্রে প্রধান শিক্ষক। বাবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা বলে অটো প্রধান শিক্ষক হয়ে তিনি পাচ বছর ধরে স্বপরিবারে বিদেশ থেকেও বেতন পাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকের, তার বড় ভাই ছাপাখানার ব্যবসায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান। মাসে একবার আসেন। তার স্ত্রীও শিক্ষক।
প্রাথমিক বিদ্যালয়র শিক্ষক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম। লাধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হয়ে তিনি ১৫ বছর শিক্ষকতা ফাঁকিবাজীসহ ধান্দাবাজী করে কোটি পতি বনে গেছেন। তিনি একাধিক হত্যা মামলার আসামীও বটে। দলীয় পদ পদবী ব্যবহার করে, দলীয় নেতাদের চাটুকারিতা করে বীরদর্পে বাবুসেজে নাকে ষরিশার তেল দিয়ে ঘুরেছেন। আর বদলী বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিআর বিলকিস, নিজেকে উপজেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা মনে করতেন। তার পছন্দের একই পরিবারের তিনজনকে ১৫ বছর সভাপতি বানিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির নেতা আবু নাইম ইকবালকে দুইবার,তার স্ত্রী একবার, ইকবালের ছোট ভাই বিপ্লবকে একবার একবার সভাপতি হন।
সোনারগাঁয়ের কয়েকজন শিক্ষানুরাগী নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ দলীয় নাম ব্যবহার করে যেভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে লুটপাটের রাজ্য বানিয়েছেন তা কোনভাবেই আমরা মেনে নেই নি। সরকার পতনের পর পরই ওই সকল শিক্ষকরা গা ঢাকা দেওয়ায় লেখাপড়ার মান মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সঠিক নিয়মে পরিচালনা করার জোড় দাবি জানান।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, উপজেলার যেসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষগণ পদত্যাগ করছেন সেগুলো আমরা সাথে সাথে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ে জানাচিছ। শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।