নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল জল্পনা কল্পনা শেষে জাতীয় পার্টির মনোনয়ণ পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা,আওয়ামীলীগের মনোনয়ণ পেয়েছেন আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে সিনিয়র আইনজীবী এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান। এতে ত্রি-রত্নের খেলা হবে বলে মনে করেন ভোটাররা।
এলাকাবাসীরা জনায়, ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য এলাকায় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। নেতাকর্মীদের সাথে বাড়তে থাকে তার দূরত্ব। এতে তার জনসমর্থন শূন্যের কোঠায় চলে আসে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনে জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা নির্বাচিত হন।
পরবর্তীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে আটজন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছিলেন তাদের মধ্যে মহাজোটের প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে, আজহারুল ইসলাম মান্নান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর আগে মহাজোটের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা, বিএনপির প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাাহ আল কায়সারের মধ্যে লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা দেয়। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার নির্বাচন থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। ওই নির্বাচনে লিয়াকত হোসেন খোকা লাঙ্গল প্রতীকে ভোট পান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৮৫ ভোট। অপর দিকে আজহারুল ইসলাম মান্নান পান ১৮ হাজার ৪৭ ভোট।
স্থানীয়রা বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সোনারগাঁয়ের সাধারণ ভোটাররা ইতিমধ্যেই প্রার্থীদের নিয়ে নানা সমীকরণ শুরু হয়েছে। প্রতিনিয়তই প্রার্থীদের আমলনামা নিয়ে পাড়া মহল্লা, অলিতে গলিতে চায়ের কাপে ঝড় বইছে। সাধারণ ভোটাররা মনে করেন, এবারের নির্বাচনে সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত ও আদর্শবান প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
জানাগেছে, এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ক্লিন ইমেজ, সুশিক্ষিত ও আদর্শবান হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)’র এর মনোনীত প্রার্থী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এডভোকেট এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান।
তিনি ১৯৭৫ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে এল এল বি(অনার্স), ১৯৭৬ সালে একই বিশ^বিদ্যালয় থেকে এল এল এম ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি আইন পেশায় যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সনদ প্রাপ্ত হন এবং জোট সরকারের আমলে তিনি ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হন। তিনি প্রায় ৪৬ বছর আইন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করে দেশজুড়ে সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, তার বড়ভাই মাসুদুর রহমান খাঁন বৈদ্যের বাজার মুক্তিযোদ্ধা থানা কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মহান মুক্তিযোদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করেন।
দেশের আইনজীবী অঙ্গনে তিনি এক উজ্জল নক্ষত্র। দেশের বড় বড় আলোচিত মামলা পরিচালনা করে সুপরিচিতি লাভ করেন। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। জোট সরকারের আমলে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হিসেবে বেশ সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
এদিকে, বর্তমান পরপর দুই বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা জাতীয় পার্টির ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত মহাসচিব ও সেচ্চাসেবক পার্টি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি জাতীয় পার্টির একজন নীতি নির্ধারক হিসেবে পরিচিত।
অপরদিকে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে এলাকা থেকে ঢাকায় অবস্থান করেন। সম্প্রতি আওয়ামীলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বেশ আলোচনায় চলে আসেন। ফলে তাকে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
জামপুর এলাকার বাসিন্দা রহিমন বিবি জানান, আমরা বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলাম। এবারের নির্বাচনে আমরা নতুন প্রার্থীকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চাই। যে প্রার্থীর কোন বদনাম নেই। তাকেই আমরা ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য বানাতে চাই।
মোগড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা সামাদ মুন্সি জানান, আমরা শিক্ষিত, মার্জিত মানুষকে নির্বাচিত করে জাতীয় সংসদে পাঠাতে চাই। কম শিক্ষিত, কম বুঝার প্রার্থীরা সমাজের উন্নয়ণ করতে পারে না। তাই একজন উন্নয়ণ বান্ধব প্রার্থীকেই আমরা বিজয়ী করব।
তিনি বলেন, একজন সংসদ সদস্য আইনপ্রনেতা। আইন সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে সিনিয়র আইনজীবী এবিএম ওয়ালীউর রহমান খাঁনের। তাকে নির্বাচিত করলে আইনের শাসন ও সোনারগাঁয়ে ব্যাপক উন্নয়ণ হবে বলে মনে করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের সাবেক ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এবিএম ওয়ালিউর রহমান অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ। এলাকার জন্য তার মন কাঁদে। তিনি এলাকাকে কিছু দিতে চান। উন্নয়ন করার মনমানুষিকতা রয়েছে তার। তাকেই আমরা আগামী নির্বাচনে বিজয়ী করে এমপি হিসেবে দেখতে চাই।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সিনিয়র আইন এ বি এম ওয়ালিউর রহমান খান জানান, আমি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে আইনপেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেছি।
দীর্ঘদিন ধরে সোনারগাঁয়ের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ণ করতে আমি চেষ্টা চালাচ্ছি। তাই এবারের নির্বাচনে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) থেকে মনোনয়ন পেয়েছি। সাধারণ জনগণ সাবেক ও বর্তমান এমপিকে ভোটে নির্বাচিত করে যে পরিমাণ উন্নয়ণ করার করার কথা ছিলো সে পরিমাণ উন্নয়ণ কেউই করতে পারে নি। তাই আমাকে সোনারগাঁ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচন করলে গণতন্ত্রকে সুসংগত করার জন্য সংসদে সক্রিয় ভুমিকা পালনসহ সোনারগাঁয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ণের রোল মডেল স্থাপন করব ইনশাল্লাহ।
সাব্কে সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার জানান, আমি আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছি। এলাকায় আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে আশা করি ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। আমি যদি নির্বাচিত হই। তাহলে শেখ হাসিনারকে এই আসনটি উপহার দিবো এবং সোনারগাঁকে একটি স্মার্ট সোনারগাঁ হিসেবে গড়ে তুলব।
জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব সোনারগাঁ আসনের জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা জানান, আমি পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকায় স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট, কালভাট,সেতুসহ ব্যাপক উন্নয়ণ করেছি। এবারের নির্বাচনে আমাকে ভোটাররা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে আমি বিশ^াস করি। আগামী সংসদ নির্বাচনে আমি বিজয়ী হলে আমার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করব।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্য্যালয়: ৪র্থ তলা, রুপালী সুপার মার্কেট, চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ।
বার্তা কক্ষ: ইমেইলঃ [email protected] মোবাইলঃ 01711581634, 01921-116126
Powered by Sourav Bhuiyan