
নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: জমির খাজনা,খারিজ করা,পর্চা উঠানো থেকে সকল কিছুই দেখভাল করেন শফিকুল ইসলাম শফিক। তিনি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার অলিপুরা বাজারের ভুমি কার্যালয়ের কেয়ারটেকার (দারোয়ান) পদে দীর্ঘ একযুগ ধরে চাকরি করছেন। এ পদে চাকরি করে তিনি প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন। উপরের মহলের কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করেই তিনি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। সামান্য কেয়ারটেকার (দারোয়ান) পদে চাকরি করে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। দূর্নীতি দমন কমিশন তার সম্পদের হিসেব দেখা জরুরী বলে করছেন এলাকাবাসী। এ পদে চাকরি করে তিনি রাজার হালে দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান। সরকারি কার্যালয়ে ব্যক্তিগত নিয়োগকৃত শফিক চাকরি করে যেভাবে টাকাকড়ি কামিয়ে চলাফেরা করছেন এ নিয়েও এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ওই কার্যালয়ে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সাথে কথাবলে জানাগেছে,উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের মশুরাকান্দা গ্রামের শফিকুল ইসলাম শফিক দীর্ঘ একযুগ পূর্বে অলিপুরা ভুমি অফিসের ওমেদার পদে কাজ শুরু করেন। পরে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কেয়ারটেকার পদে শফিককে রাখেন। এরপর শফিক ওই কার্যালয়ের সকল ফাইলপত্র দেখাশুনার দেখভাল বুঝে নেন। শুধু তাই নয় কোন লোক যদি জমির খাজনা দিতে ও খারিজ করতে আসেন তাহলে ওই শফিকের সাথেই কথা বলে চুড়ান্ত করতে হয়। গত দেড় বছর পূর্বে তার শ্যালক মামুন মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে ওই অফিসের ওমেদার হিসেবে বসান তিনি। এখন আর কাজ করতে কোন সমস্যাই হয় না। শালা দুলাভাই মিলে সুন্দর ভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন তারা।
দড়িকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আব্দুল বাসেদ মিয়া নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, আমার দুই বিঘা জমি খারিজ করতে গেলে শফিক দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। পরে পঁচাত্তর হাজার টাকা রফাদফা করে আমার খারিজটি করে দেন তিনি। টাকা ছাড়া কিছুই বুঝেন না ওমেদার শফিক।
মাঝেরচর এলাকার বাসিন্দা মুজিবুর রহমান নামে এক ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, আমি খারিজ করতে গেলে জমির কাগজপত্র ঠিক নাই বলে আমার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন শফিক। পরে তার সাথে রফাদফা করে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমির খারিজ করতে হয়েছে আমাকে। পুরো ভুমি অফিসটি একজন দারোয়ানের কথায় চলে। বিষয়টি ভাবা যায়?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, কারো জমি খারিজ করতে হলে জমির পরিমাণ ও তার ভোগ দখলে আছে কিনা এ বিষয়ে তদন্ত করে খারিজের প্রস্তাব দিতে হয়। তদন্তে নায়েব সাহেব যাওয়ার নিয়ম থাকলেও শফিক নিজেই তদন্ত অফিসার সেজে সবকিছুর কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অনেক সময় তদন্তে না গিয়ে মোটা অংকের টাকা দফাদফা করে খারিজের প্রস্তাব পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তারা।
এতে সবাধারণ জনগণ তাদের জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। মিস কেইসসহ মামলা পরিচালনা করে বছরের পর বছর ভুক্ততে হয়। শুধু তাই নয় কোন জমিতে যদি মামলা বা মামলার রায় থাকে তাহলে মোটা অংকের টাকা দিয়ে তাদের ম্যানেজ করতে হয়। মোটা অংকের উৎকোচ পেলে কেয়ারটেকার শফিক জমিতে যতবড় সমস্যই থাকুক না কেন সমাধাণ করে দেন।
মশুরাকান্দা গ্রামের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, একজন প্রথম শ্রেনীর সরকারি কর্মকর্তাও এভাবে চলাফেরা করে না শফিক যেভাবে চলাফেরা করে। ভিআইপি বাজার, ভিআপি ড্রেস, আর দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান শফিক।
তার গ্রামে দশ শতাংশ জমির উপর আলিশান বাড়ি, নামে বেনামে প্রচুর জমাজমিসহ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন মাত্র কয়েক বছরে। একজন দারোয়ান পদে চাকরি করে কিভাবে এত অল্প সময়ে এত টাকার মালিক বনে যান তা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিনা আমরা।
আমেনা আক্তার নামে ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানান, একজন ভুমি অফিসের দারোয়ান হিসেবে কাজ করে এলাকায় সাবের মত চলাফেরা করেন শফিক। কদিন পর পর দেশের বাইরে যান। দেশের বিভিন্নস্থানে ঘুরে বেড়ান। ভাবতে পারছিনা এত অল্প সময়ে কিভাবে কোটিপতি হওয়া হল সে।
ওই এলাকায় গিয়ে আবুল কাসেম নামে এক পথচারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গায়ে মানে না আপনে মোড়ল। একজন দারোয়ান হয়ে এলাকার প্রভাবশালীদের সাথে উঠাবসা করেন শফিকুল ইসলাম। শুনছি কোটি টাকার মালিক হইছে সে। তাই এখন আর নজর মাটিতে পারে না। ভুমি অফিসের কেয়ারটেকারের চাকরি করে এলাকায় অফিসারের ভাব দেখায়।
বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অলিপুরা ভুমি অফিসের কেয়ারটেকার শফিকুল ইসলাম শফিকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেন নি।
অলিপুরা ইউনিয়ন ভুমি উপ-সহকারি কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, শফিকুল ইসলাম শফিক এক সময় এই কার্যালয়ে ওমেদার হিসেবে চাকরি করলেও স্যারদের সাথে আলাপ করে তাকে এখন কেয়ারটেকার পদে বসানো হয়েছে। তিনি ওই এলাকার স্থানীয় হওয়ায় এবং ভালো কাজ করায় সকল মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ায় তার সাথেই বেশিরভাগ লোকের ভাল সম্পর্ক রয়েছে। তবে অফিসের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, শফিককে দিয়ে আমরা সকল কার্যক্রম পরিচালনা করাইনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ সহকারি কমিশনার (ভুমি) মো: ইব্রাহিম নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, শফিকুল ইসলাম শফিক নামে আমাদের অলিপুরা ভুমি অফিসে সরকারি পদে কোন ব্যক্তি চাকরি করেন না। তিনি বলেন, ওমেদার ও দারোয়ান পদে কেউ যদি চাকরি করে থাকে সেটা আমাদের অফিসের নিয়মের বাইরে। তবে শফিকুল ইসলাম শফিকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ কোন ভুক্তভোগী বা ব্যক্তি সরাসরি আমার কাছে অভিযোগ করেন তাহলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।