
সোনারগাঁ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ “খ” সার্কেলের নাম ভাঙ্গিয়ে সোনারগাঁয়ের পাড়া মহল্লা দাবরিয়ে বেড়াচ্ছেন এক যুবক। নিজেকে পুলিশের অন্যতম সহযোগী ও কোন কোন সময় তিনি নিজেই প্রশাসনের লোক সেজে যার তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। নিজেকে থানা এলাকার একজন প্রশাসনের বড় কর্তা পরিচয় দিয়ে পুরো সোনারগাঁ এলাকা চড়ে বেড়াচ্ছেন এই যুবক।
এতে করে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচেছ প্রশাসনের আর ক্রমেই প্রশাসনের প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ওসি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পরিচয় দেওয়া যুবকের নাম শিকদার মিয়া তিনি উপজেলার হারিয়া এলাকার জামান মিয়ার ছেলে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানাগেছে, উপজেলার হারিয়া এলাকার জামান মিয়ার ছেলে শিকদার মিয়া সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান প্রিয় ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ “খ” সার্কেল বিল্লাল হোসেনের নাম ব্যবহার করে মাদক ব্যবসা, আবাসিক হোটেল ব্যবসা, এলাকার চিহিৃত চাঁদাবাজের কাছ থেকে উৎকোচ নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হারিয়া এলাকার এক বাসিন্দা জানান, জামানের ছেলে শিকদার মিয়া এখন পুলিশের সাথে চলে। সে মাঝে মাঝে পুলিশের নাম বলে বিভিন্ন লোকদের কাছ থেকে টাকা নেয়। এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ এবং সন্ত্রাসীরা থানায় ধরা পড়লে তাদের ছাড়াতে যায় শিকদার মিয়া। সে কোন কোন সময় নিজেকে পুলিশও দাবি করেন। তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছি।
আব্দুর রহমান নামে মোগড়া পাড়া চৌরাস্তা এলাকার এক বাসিন্দা জানান, পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করেন শিকদার মিয়া। কিছুদিন আগেও এই ছেলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতো এখন সে পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে যার তার সাথে খারাপ আচরণ করেন। কেউ তার সাথে কিছু করলেই তাকে থানায় ধরে নিয়ে যাবে বলেও হুশিয়ারী দেন এই ছেলে।
আমেনা খাতুন(ছদ্মনাম) পিরোজপুর এলাকার এক মাদক ব্যবসায়ী জানান, থানা পুলিশ ও সহকারি পুলিশ সুপারের নাম ভাঙ্গিয়ে কয়েকদিন পরপরই শিকদার মিয়া আমার কাছ থেকে টাকা নেয়। দিতে অস্বীকার করলে থানায় নিয়ে যাবে বলে ভয় দেখায়। সে বলে সেই নাকি পুলিশ। তাকে টাকা না দিলে ব্যবসাও করতে দিবে না। সোজা থানায় নিয়ে যাবে। এরই মধ্যে সোনারগাঁ থানার ওসির নামেও আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। মাঝে মাঝে সার্কেল স্যারের কথা বইল্লাও টাকা নেয়।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে শিকদার মিয়ার এক সহযোগী জানান, সে আবাসিক হোটেল বসানোর কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নেয়। এলাকায় অনেক বাসায় সে মেয়ে দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। তাকে কেউ কিছু বললেই সে প্রশাসনের লোক পরিচয় দেয়। আবাসিক হোটেল ও বাসাবাড়িতে উঠতি বয়সি মেয়ে দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এই শিকদার।
হারিয়া গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, শিকদার দিন দিন পুলিশের নামে যেভাবে এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে দ্রুত তাকে না থামানো গেলে সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে সে নানামূখী অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে আনলেই প্রশাসনের নামে যেসকল অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন সব খুলে বলতে বাধ্য হবে সে।
শিকদারকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান হারিয়া গ্রামসহ সোনারগাঁয়ের সর্বস্তরের বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিকদার মিয়া জানান, আমি পুলিশের সোর্সের কাজ করি। তাছাড়া অন্যকিছু করি না। কাউকে থানায় ধরে নিয়ে গেলে আমি ছাড়াতে যাই।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান প্রিয় জানান, আমার নাম ভাঙ্গিয়ে যদি কেউ কারো কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহন করেন তাকে কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। শিকদার নামে আমি কোন ব্যক্তিকে চিনি না। এধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে খুব শিগ্রই আইনের আওতায় আনা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ “খ” সার্কেল শেখ বিল্লাহ হোসেন বলেন, কেউ যদি পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন উৎকোচ বাণিজ্যে মেতে উঠে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি অপরাধ করে, অপরাধীদের সাথে সম্পর্ক তৈরী করে তাদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।