নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ
সিদ্ধিরগগঞ্জে মোসলেহ উদ্দিন নামে মসজিদের এক ইমামসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে বোনের কাবিননামা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে ভুক্তভোগী ভগ্নিপতি মো. ফয়সাল আহমেদ মামলা দায়ের করেছেন। সম্প্রতি এ মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে সুদের কারবারের অভিযোগ নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। এমনকি এ নিয়ে মসজিদ কমিটি একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেন। তদন্তে এর সত্যতা মিলেছে বলে সূত্র জানায়।
পরে ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পুনরায় তদন্তের জন্য আরেকটি কমিটিও গঠন করা হয়। চলতি সপ্তাহের যেকোনো দিন তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসির নিকট। অভিযুক্ত মোসলেহ উদ্দিন সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী বাসষ্ট্যান্ড জামে মসজিদের বর্তমান ইমাম।
এদিকে এ ঘটনার পর একাধিক ভুক্তভোগী মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে নারী ক্যালেঙ্কারী সহ একাধিক অভিযোগ তুলে ধরছেন। অপরদিকে তার এসব অপকর্মে ক্ষিপ্ত হয়ে ফুসে উঠছে মুসুল্লিরা। অনেকেই মসজিদে তার পিছনে নামাজ পড়া ছেড়ে দিয়েছেন। মোসলেহ উদ্দিনকে দ্রুত পরিবর্তন করে নতুন ও সৎ ইমাম নিয়োগ দেওয়ার দাবি সাধারণ মুসুল্লিদের।
জানা গেছে, আপন ভগ্নিপতির সাথে কাবিননামার অর্থ নিয়ে মোসলেহ উদ্দিন জালিয়াতি করেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মো. ফয়সাল আহমেদ মোসলেহ উদ্দিন ও তার বোনসহ পাঁচ জনের নামে বিজ্ঞ আদালতে মামলা (নং-৩৫১/২২) দায়ের করেন। মামলায় অন্য অভিযুক্তরা হলো- কাবিনের স্বাক্ষী আজিজুল গাফফার, মজিবর খান ও কাজী মো. মাছিহুর রহমান।
জানা যায়, ২০২০ সালে ভোলা জেলার লাল মোহন এলাকায় মোসলেহ উদ্দিনের বোন মোসা. আকলিমা আক্তারের সাথে পাচ লক্ষ টাকার মোহরানায় ভুক্তভোগী মো. ফয়সাল আহমেদের বিয়ে হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ২৩ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী সুমিলপাড়া কাজী অফিসে সাজানো ব্যক্তিদের স্বাক্ষী বানিয়ে কাজী অফিসকে প্রভাবিত করে এবং সত্য গোপন করে বিবাদীরা যোগসাজসে জালিয়াতিপূর্ণ ও বেআইনীভাবে কাবিননামা তৈরি করেন। যাতে মোহরানার পরিমান উল্লেখ করা হয় চব্বিশ লাখ টাকা। পরবর্তীতে তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনাবনি না হলে ভুক্তভোগী ফয়সাল আহমেদ তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করেন।
ভুক্তভোগী মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, ভোলায় আমি মোসলেহ উদ্দিনের বোন আকলিমাকে বিয়ের জন্য দেখতে যাই। সেখানে তার আত্মীয়-স্বজন জোরাজুরি করে আমাদের দেড় লাখ টাকায় বিয়ে করিয়ে দেন। পরবর্তীতে কাবিনের কাগজ করা হলে জানতে পারি মোহরানা দেওয়া হয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকা। এরমধ্যে দুই লাখ উসুল ধরা হয়েছে। আমি সংসার করবো সেজন্য আমি এটা মেনে নিয়েছি।
এরপর আদমজীতে আমরা তার বাসায় বেড়াতে গেলে মিথ্যা স্বাক্ষী সাজিয়ে জালিয়াতি করে মোসলেহ উদ্দিন আমার কাছ থেকে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে চব্বিশ লক্ষ টাকার কাবিন তৈরি করে। পরে তার বোনের সাথে আমার বনাবনি না হলে আমি তাকে তালাক দেই। এ সুযোগে তারা দ্বিতীয়বার জালিয়াতিপূর্ণ কাবিননামা দিয়ে আমার নামে মামলা দিয়েছে।
এ বিষয়ে উক্ত কাবিনের এক স্বাক্ষী ও মামলার বিবাদী মজিবর খান জানান, মোসলেহ উদ্দিন তার বোন ও বোন জামাইয়ের দ্বিতীয় কাবিন করেন। সেখানে পূর্বের কাবিনের অবশিষ্ট তিন লাখ কাবিনের টাকাকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করার শর্তে স্বাক্ষীদের স্বাক্ষর নেন। কিন্তু তখন তিনি টাকা অংকের স্থানে চার লাখ উল্লেখ করলেও কথায় লিখার স্থান খালি রেখে দেন এবং পরে লিখে নিবেন জানিয়ে আমাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেন। পরে এ বিষয়ে তার বোন জামাই পারিবারিক আদালতে মামলা করলে আমরা বিষয়টি জানতে পারি যে, মোসলেহ উদ্দিন চার লাখকে চব্বিশ লাখ উল্লেখ করেছেন।
স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, পূর্বে থেকেই সূদ কারবারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মসজিদের মুসুল্লিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। সেসময় মসজিদের প্রায় ৬৯ জন মুসল্লী গণস্বাক্ষরের মাধ্যমে মসজিদ কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বরাবর অভিযুক্ত ইমাম পরিবর্তনের জন্য লিখিত আবেদন জানান। পরে মোসলেহ উদ্দিন নিজস্ব মনগড়া ফতুয়া দিয়ে ইমাম হিসেবে মসজিদে বহাল থাকেন।
মুসুল্লিরা মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, অত্র মসজিদের ইমাম দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্নভাবে সমালোচিত। এমনকি বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। যার কারণে মুসুল্লিগণ অত্র মসজিদের আওতাভুক্ত হয়েও ঠিকমত নামাজ আদায় করতে পারছেনা। এমতাবস্থায় বর্তমান ইমাম বাদ দিয়ে নতুন ইমাম নিয়োগ দিয়ে অত্র মসজিদের সম্মান রক্ষায় মসজিদ কমিটির হস্তক্ষেপ কামনা করা হয় লিখিত এই আবেদনে।
এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জের চৌধুরীবাড়ি এনায়েতনগর এলাকার মো. জয়নাল নামে এক তুলা ব্যবসায়ী কিছুদিন পূর্বে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে কদমতলী এলাকার জসিম খা নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে জয়নালকে দুই লক্ষ সত্তর হাজার টাকা সূদের বিনিময়ে প্রদান করে মোসলেহ উদ্দিন। এর বিনিময়ে প্রতি লাখে মাসে সূদ হিসেবে চার হাজার টাকা করে দেওয়া হত। পরে ২০২২ সালে জসিম খা’কে বাদ দিয়ে মোসলেহ উদ্দিন আরো ত্রিশ হাজার টাকা জয়নালকে প্রদান করে মোট তিন লক্ষ টাকা কর্জ হিসেবে মোসলেহ উদ্দিন তার স্ত্রীর নামে স্ট্যাম্পে লিখিত দলিল করেন। বিনিময়ে বারো হাজার টাকা করে সূদ নিতো মোসলেহ উদ্দিন। এ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়।
এছাড়া কদমতলী এলাকার মানিক মেডিকেল নামে ফার্মেসীর মালিক মো. মুছা প্রায় ৫-৭ বছর পূর্বে মোসলেহ উদ্দিনের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়েছে। এর বিনিময়ে প্রতি মাসে কখনো বাইশ’শ আবার কখনো পচিশ’শ টাকা নিতো মোসলেহ উদ্দিন। আবুল খায়ের নামে কদমতলী এলাকার আরেক বাসিন্দা চার বছর পূর্বে মোসলেহ উদ্দিনের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা কর্জ হিসেবে নিয়েছিল। মাসে এর বিনিময়ে প্রায় তিন হাজার টাকা করে সূদ প্রদান করতে হয়েছে।
এদিকে কদমতলী এলাকার মুসল্লিরা জানান, আমরা যে ইমামের পিছনে নামায আদায় করি, সে-ই যদি সূদের কারবারি হয়, তাহলে তার পিছনে দাড়িয়ে কীভাবে আমরা নামায আদায় করবো? আমরা জানতে পেরেছি সে বিভিন্ন ব্যক্তিদের টাকা ধার দেওয়ার কথা বলে এর বিনিময়ে সূদ নেয়। কর্জ উল্লেখ করে লিখিত দলিলও করে রাখেন তিনি। কিন্তু দলিলে সূদের বিষয়ে উল্লেখ থাকে না। মসজিদের একজন ইমাম-ই যদি এমন কাজ করেন, তাহলে আমরা কীভাবে তার পিছনে দাড়িয়ে নামায পড়বো? অনেক মুসল্লী ইতিমধ্যে উক্ত মসজিদে না এসে অন্য মসজিদে গিয়ে নামায আদায় করেন।
তবে অভিযুক্ত ইমাম মোসলেহ উদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ধার হিসেবে টাকা দিয়েছি। এর বিনিময়ে আমাকে কোন লভ্যাংশ কিংবা মুনাফা কেউ প্রদান করেনি। আমি কোন জালিয়াতির সাথেও জড়িত না। তবে তিনি বোনের কাবিনের বিষয়টি এড়িয়ে যান।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্য্যালয়: ৪র্থ তলা, রুপালী সুপার মার্কেট, চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ।
বার্তা কক্ষ: ইমেইলঃ [email protected] মোবাইলঃ 01711581634, 01921-116126
Powered by Sourav Bhuiyan