বিশেষ প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজঃ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সকল কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন চার সহকারি শিক্ষক। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কোন অবস্থাতেই তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ। তাদের দূর্নীতি অনিয়মের বিষয়ে প্রশাসন ও পরিচালনা পর্ষদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, বিদ্যালয়টির সহকারি শিক্ষক (শরীরচর্চা) শফিকুর রহমান, সহকারি শিক্ষক আলী আজগর, সহকারি শিক্ষক (কৃষি শিক্ষা) একেএম আসাদুজ্জামান ও সহকারি শিক্ষক হেমায়েত উদ্দিন এই চারজন শিক্ষক বিভিন্ন কুটকৌশলে নিয়ন্ত্রণ করছেন বিদ্যালয়টিকে। এতে করে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান দিন দিন ব্যহৃত হচ্ছে। তাদের সেচ্ছাচারিতায় ক্ষুন্ন হচ্ছে ওই প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য ও সুনাম।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (শরীরচর্চা) শফিকুর রহমান। বিদ্যালয়টিতে বিভিন্নভাবে প্রভাব খাঁটাচ্ছেন। অথচ নিজেই সরকারি নিময়নীতি মানছেন না ওই শিক্ষক। সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেই বিদ্যালয়টির পাশে নিউ মডেল পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু তাই নয় বিদ্যালয়ের একজন সামান্য সহকারি শিক্ষক হয়ে অন্যান্য শিক্ষকের সাথে বেশ দাপুটের সাথে দূব্যবহার, শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ করেন। এছাড়াও কোচিং বাণিজ্যসহ তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগও রয়েছে। অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জণ করে সানারপাড় এলাকায় সূর্য দীঘল এপার্টমেন্টে রয়েছে তার একটি বিশাল ফ্ল্যাট। যার আনুমানিক মূল্য অর্ধকোটি টাকা।
আলী আজগর, সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক। সিন্ডিকেট করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রভাব বিস্তার, কোচিং বাণিজ্য করছেন। এছাড়া নিউ মডেল পাবলিক স্কুলের মালিকানা রয়েছে তার। একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে প্রাইভেট স্কুলের মালিকানা নিয়ে বেশ দিব্যি আয়েশেই জীবনযাপন করছেন। তিনি ব্যবহারিকের শিক্ষক হয়েও ক্লাস করান না। তবে প্রভাব খাটিয়ে ক্লাস বাবদ ভাতা উঠিয়ে নেন। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন বেশ সুকৌশলে। একজন শিক্ষক হয়ে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে অসদাচারণ করেন প্রতিনিয়তই। অবৈধভাবে সানারপাড় এলাকায় পাঁচ কাঠা জমির উপর নির্মাণাধীন ভবনে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। যার আনুমানিক মূল্য অর্ধকোটি টাকা।
একেএম আসাদুজ্জামান, সহকারি শিক্ষক সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয় (কৃষি শিক্ষা) বেশ দাপুটের সাথে বিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকেন তিনি। নিউ মডেল পাবলিক স্কুলের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কোচিং বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা হাতিয়ে নিতে পারদর্শী তিনি। তিনি ধলেশ^র এলাকায় শুভদের বাড়িতে একটি ফ্ল্যাট নিয়ে ভাড়া থাকেন। এই ফ্ল্যাটে তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং বাণিজ্য করছেন যা সরকারের নীতিমালা বহির্ভূত। অবৈধভাবে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে সাইনবোর্ড এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন তিনি।
হেমায়েত উদ্দিন। সহকারি শিক্ষক সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের সামনের ফটকে আইটেক সলিউশন নামে একটি কম্পিউটারের দোকান রয়েছে তার। ওই দোকানে বিদ্যালয়ের প্রশ্ন ছাপানোসহ সকল প্রকার গোপন নথিও পাওয়া যায়। চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার টেষ্ট পরীক্ষার সকল প্রশ্ন ছাপানো হয়েছে হেমায়েত উদ্দিনের কম্পিউটারের দোকান থেকে। ফলে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরাই আগে থেকে প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন মনের মতন। প্রশ্নপত্র ছাপানোসহ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার গাইডবই, নোট মাসিকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা প্রশ্ন আগে থেকেই ফাঁস হয়ে যায় এই আইটেক সলিউশন নামে দোকান থেকে। হেমায়েত উদ্দিন সহকারি শিক্ষক তাই বেশ দাপুটের সাথেই বিদ্যালয়ে তার পদচারণা। তাইতো নির্বিকায় হয়ে পড়েছেন এই প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবকসহ সচেতন শিক্ষার্থীরা। ডেমরার পশ্চিমবক্স নগর এলাকায় এগার কাঠা জমির উপর দশতলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। যার মালিকানা তিনি নিজেই।
এমপিও নীতিমালা ২০২১ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী একজন শিক্ষক যদি অন্য প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক, কোচিং সেন্টার চালক বা শিক্ষক হিসেবে যুক্ত থাকেন, সেটি “অসদাচরণ ও স্বার্থের সংঘাত” হিসেবে গণ্য হবে। এটি তার মূল চাকরির দায়িত্ব পালনে অবহেলা হিসেবেও বিবেচিত হবে। অন্য প্রতিষ্ঠানের মালিকানা বা ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ বৈধ নয়। সরকারি নিময়নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুুলি দেখিয়ে সানারপাড় নিউ মডেল স্কুল পরিচালনা করা যাচ্ছেন সানারপার শেখ মোর্তোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, আলী আজগর ও এ,কে,এম আসাদুজ্জামান।
লিখিত অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে এই চার শিক্ষক ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি বাবদ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে এক লাখ ৭৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। যা সরকারি নীতিমালা বহিভূত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানান, এই চার শিক্ষক বিদ্যালয়টিকে নিজেদের পৈত্তিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন। তারা যে যার মত জিম্মি করে বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এলাকাবাসীরা জানান,নারায়ণগঞ্জ চার আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, আওয়ামীলীগ নেতা তোফায়েল হোসেন ও আওয়ামীলীগ নেতা ফারুক হোসেনের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক রেখে আওয়ামীলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। ওই চারজন ওই বিদ্যালয়টিকে নিজের মত করে লুটপাট করে আখের গুছিয়েছেন। আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হওয়ার পরও কিভাবে বহাল তবিয়তে পূর্বের ন্যায় তারা দাপটের সাথে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য উর্ধবতন কর্তপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শফিকুর রহমান নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, আমি কোন অনিয়ম করিনি। একটি এমপিও ভুক্ত বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হয়ে কিভাবে নিউ মডেল পাবলিক স্কুলের দায়িত্ব পালন করছেন এ বিষয়ে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেন নি। সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন অপকর্ম করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উত্তর না দিয়ে ফোনটি কেটে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বশির আহমেদ জানান, গণ অভূত্থানের পর আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সকল শিক্ষকের বলে দিয়েছি আগে যাই হয়েছে ভূলে যান। সকলে মিলেমিশে কাজ করেন। তবে প্রতিষ্ঠানে সার্থে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে আমি বাধ্য হবো।
নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাশফাকুর রহমান নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজকে জানান, সানারপাড় শেখ মোরতোজা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন অনিয়ম, দূর্নীতির অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্য্যালয়: ৪র্থ তলা, রুপালী সুপার মার্কেট, চিটাগাংরোড, সিদ্ধিরগঞ্জ।
বার্তা কক্ষ: ইমেইলঃ [email protected] মোবাইলঃ 01711581634, 01921-116126
Powered by Sourav Bhuiyan