A Top Ads

চব্বিশের ৫ আগস্ট। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ঢাকার লং মার্চে অংশগ্রহণ করেন লাখো মানুষ। সেদিন স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে বিজয় উপভোগ করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে গিয়েছিলেন। তাদেরই একজন অটোরিকশা চালক সাব্বির হোসেন মুন্না (২৪)। হাজারো মানুষের রক্তে ভেজা বিজয় এলেও মুন্না ফেরেননি নিজ পরিবারের কাছে। অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হলেও খোঁজ মেলেনি এই যুবকের।

আদৌ কী বেঁচে আছে নাকি শহীদ হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে মুন্নার পরিবার। মুন্নার ফেরার পথ চেয়ে দিন কাটছে তাদের।

নিখোঁজ মুন্না উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের সোনাপুর এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা গার্মেন্টস কর্মী শফিকুল ইসলামের ছেলে। টানাপড়েন সংসারে পিতার একার উপার্জনে খরচ যোগাতে হিমশিম খাওয়ায় পরিবারের হাল ধরতে প্রথমে গার্মেন্টসে চাকরি নিলেও একপর্যায়ে তা ছেড়ে অটোরিকশা চালকের পেশায় যুক্ত হন। চার সদস্যের পরিবারে বাপ-ছেলের উপার্জনে সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি মুন্নার ছোটবোন সুমাইয়ার মাদরাসার লেখাপড়ার খরচও ভালো চলছিল। তবে ৫ আগস্টের ওইদিন ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে অর্থাভাবে একমাত্র বোনেরও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। এক কথায় পুরো পরিবারটি ভেঙে পড়েছে।

সাব্বির হোসেন মুন্না নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে পরিবারের সদস্যরা পাগল প্রায়। রাজধানীর প্রায় সবগুলো হাসপাতাল ও মর্গে খোঁজ করলেও সন্ধান মেলেনি। সবশেষ ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট সোনারগাঁ থানায় একটি জিডি করার পাশাপাশি আড়াইহাজার সেনাবাহিনীর ক্যাম্পেও লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয়। তবে এতেও তার হদিস পাওয়া সম্ভব হয়নি।

একবছরেও সন্তানের খোঁজ না পেয়ে নিখোঁজ মুন্নার বাবা শফিকুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী ছেলের ছবি নিয়ে ঢাকা মেডিকেলসহ ঢাকার সব হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করেছি। বিভিন্ন মর্গে গিয়ে দেখেছি আমার মুন্নার মরদেহ আছে কিনা। আন্দোলন করা ছাত্রদের কাছে ছবিসহ যাবতীয় কাগজপত্র দিয়ে রেখেছিলাম, থানায় জিডি করার পাশাপাশি জিডির কপি নিয়ে আড়াইহাজার সেনাবাহিনীর ক্যাম্পেও গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আমার মুন্নার সন্ধান দিতে পারেনি। সবাই শুধু বলে আমরাও খুঁজি। আপনারাও খোঁজেন।

তিনি বলেন, ছেলে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তা পর্যন্ত জানার ভাগ্য হয়নি। আমার একটা মাত্র ছেলে। নিখোঁজের পর থেকে ওর মা-বোন পাগলের মতো হয়ে আছে।

জেলা প্রশাসনসহ ছাত্র নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অতদূর পর্যন্ত যাওয়ার মাধ্যম পাইনি। কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেনি। এই সরকারের কাছে একটাই দাবি আমার সন্তানের খোঁজটা যেন পাই।

জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সাবেক আহ্বায়ক নিরব রায়হান জাগো নিউজকে বলেন, আন্দোলনে অংশ নেওয়া সোনারগাঁয়ের স্থানীয় ছাত্রদের মাধ্যমে আমরা নিখোঁজ মুন্নার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের নেতৃবৃন্দ তিন-চারবার মুনার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসেছে। আমাদের অবস্থান থেকে বিভিন্নভাবে খোঁজ করে যাচ্ছি। আমি এখনো তার বাসায় যেতে পারিনি তবে খুব শীঘ্রই তাদের বাসায় যাবো।

জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক ও সোনারগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী তুহিন মাহমুদ জানান, নিখোঁজের বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। আমি এই সম্পর্কে অবগত নই। মিডিয়াতেও তেমন প্রচারণা পাইনি। তবে আমি খোঁজ নেবো ও আমার পক্ষ থেকে সহযোগিতা যতটুকু করার প্রয়োজন চেষ্টা করবো।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার জাগো নিউজকে জানান, মুন্না নামক কেউ নিখোঁজ রয়েছে এমন কিছু আমার জানা নেই। আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি।

জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আগের সংবাদ দেখুনঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিন পয়েন্ট মাসে দুই কোটি টাকা চাঁদা উত্তোলন
পরের সংবাদ দেখুনজুলাই ঘোষণাপত্র: মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে মানুষের ঢল