উড়ে এসে জুড়ে বসতে চান দীপ

বিশেষ প্রতিবেদক: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার মনোনয়ণ পেতে কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়াও তারা মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন কর্মসূচী। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেতে ইতিমধ্যেই কয়েকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা।

দলের জন্য ত্যাগী, যোগ্য, নিবেদিত, মাঠ পর্যায়ের রাজপথের লড়াকু নেতারাই মনোনয়ন পাবেন বলে ধারণ করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এই ক্ষেত্রে কতিপয় উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতাকর্মীরা বাদ পড়বেন বলে নিশ্চিত করেছেন আওয়ামীলীগের একঝাঁক কেন্দ্রীয় নেতারা। আন্দোলন সংগ্রাম, মাঠে ঘাটে তাদের অবদান না থাকলেও তারাই এখন মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে পুরো এলাকায় পোষ্টার, ফেষ্টুন ও ব্যানার সাটিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কতিপয় নব্য আওয়ামীলীগ নেতা মনোনয়ণ প্রত্যাশা করে এলাকায় আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় তুলছেন।

আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা জানান, নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, সাবেক সাংসদ ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কায়সার। তিনি ২০০৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করীমকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পূর্বে তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন দেওয়ার জন্য আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কাঁচপুর ও মোগড়াপাড়া এলাকায় হাজার হাজার নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান নেন। সে সময়ে এস আই আবুল বাশার হত্যা মামলার আসামী করে তাকে জেলে পাঠানো হয়।

অন্যদিকে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সদস্য মাহফুজুর রহমান কালামের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি বিএনপি ও জামায়াত জোট সরকারের আমলে সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত রাখার ক্ষেত্রে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছেন। নেতাকর্মীদের সুখে, দু:খে তাদের পাশে ছাড়ায় মতো থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। তিনি ১৯৮৯ সালে সোনারগাঁ ডিগ্রী কলেজের ভিপি ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

পরে ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে ১৯৯২ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

এসআই আবুল বাসার হত্যা মামলা ও পুলিশের রেকার পোড়ানোর প্রধান আসামী ছিলেন তিনি। এছাড়া সে সময়ের দ্রুত বিচার আইন ও মিথ্যা অস্ত্র মামলাসহ ১৭টি মামলার প্রধান আসামী ছিলেন তিনি। সৈরাচার এরশাদ সরকার পতনের আন্দোলনে সোনারগাঁয়ের সকল ছাত্র সংসদকে একত্রিত করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেন তিনি। রাজপথে তার অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করার কথা অকপটে স্বীকার করেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা। দলের জন্য একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে তিনিও মনোনয়ণ প্রত্যাশার তালিকায় রয়েছেন। এছাড়া সোনারগাঁয়ের বড় অংকের ভোটব্যাংক রয়েছে তার।

এছাড়াও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সদস্য এ এইচ এম মাসুদ দুলালের নামও আলোচনায় রয়েছে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সোনারগাঁয়ের রাজনীতির পাশাপাশি আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে অগ্রনী ভুমিকা পালন করে আসছেন। ছাত্র রাজনীতি করার সময় তিনি ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক ভাবে আহত হন।

অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তিনি। সোনারগাঁয়ের আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে একজন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এবারের নির্বাচনে স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামীলীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অধ্যাপক ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বিরুর নামও শোনা যাচ্ছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে।

একজন সৎ, শিক্ষিত প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়নের পাল্লাও বেশ ভারী রয়েছেন। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রলীগে ১৯৮৮ সালে ক্রীড়া সম্পাদক, ১৯৮৯ সালে যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯৪ সালে সহ-সভাপতি। ২০০৩ সালে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরি পরিষদের সদস্য হন।

২০১৫ সালে তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ স্বাচিবের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থপেডিক বিভাগের সহকারী পক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন। ২০১৯ সালে উপজেলা আওয়ামীলীগের ১নং সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। শিক্ষিত, মেধাবী, যোগ্য নেতা হিসেবে এলাকায় তার সুনাম রয়েছে বেশ। এই ক্ষেত্রে তিনিও মনোনয়ের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। তিনি সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। এছাড়া এলাকার সাধারণ গরীব, দু:খী মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন।

অন্যদিকে সোনারগাঁ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মোবারক হোসেনের ছেলে, মোবারক হোসেন স্মৃতি সংসদের চেয়ারম্যান এরফান হোসেন দীপ। মাত্র বৎসর খানের পূর্বে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সোনারগাঁয়ে দেখা যায় তাকে। প্রথমে তিনি মোবারক হোসেন ম্মুতি সংসদ এর ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও রাজনীতির মাঠে তাকে একেবারেই দেখা যায় নি বলে জানান নেতাকর্মীরা।

আওয়ামীলীগের কোন সভা,সমাবেশেও তাকে খুজে পাওয়া যায় নি। কিন্তু আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি পুরো এলাকায় পোষ্টার, ফেষ্টুন ও ব্যানার সাটিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি নিজেকে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রার্থী ঘোষনা করে বেশ আলোচনায় চলে আসেন। তবে ত্যাগী নেতাকর্মীরা মনে করছেন, যাকে কখনো সোনারগাঁয়ের আন্দোলন সংগ্রাম, সভা, সমাবেশ ও কোন কর্মসূচীতে দেখা যায় নি তিনি কিভাবে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাচ্ছেন। এ যেন উড়ে এসে জুড়ে বসার মত এক নতুন গল্প।

আওয়ামীলীগের কয়েকজন ত্যাগী নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে তাহলে এ আসনে আওয়ামীলীগের যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন না দিলে আসনটি হাতছাড়া হতে পারে। এতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে কোনভাবেই ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। তারা বলেন, যারা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং দলের জন্য জেল জুলুম খেটেছেন এলাকায় যার জনপ্রিয়তা রয়েছেন তাকেই মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানান তারা। আর যারা উড়ে এসে জুড়ে বসার চেষ্টা করছেন তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করার ঘোষনা দিয়েছেন তৃনমুল নেতাকর্মীরা।