
নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ: পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নেই। ভালো নেই দেশের মানুষ, ভালো নেই ইমাম ও মুয়াজ্জিনরাও। দেশে জীবনযাত্রার মান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দ্রব্যমূল্যের দামও। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা বাড়ছে না। বেতনের পরিমাণও একেবারে নগণ্য। অনেকের ক্ষেত্রে উল্লেখ করার মতোও নয়। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে, বাসাবাড়ির ভাড়া, যাতায়াত খরচ ও চিকিৎসা খরচসহ সবকিছুই ঊর্ধ্বমুখী। ধনী, গরিব, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সময়ে সময়ে বাড়ানো হয়। কিন্তু ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মাসিক সম্মানী ভাতা যুগ-চাহিদার তুলনায় অতি নগণ্য বললেও চলে।
ফজর থেকে এশাÑপাঁচ ওয়াক্ত সময়মতো নামাজ পড়ানোর দায়িত্ব পালন করেন মসজিদের একজন ইমাম। আর এ প্রতিটি নামাজের আগেই সময় মেনে আজান ও ইকামত দেন একজন মুয়াজ্জিন। খুব বেশি শারীরিক অসুস্থতা না থাকলে ঝড়-বৃষ্টি ও প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই এ দুই পদে নিয়োজিত ব্যক্তিরা দায়িত্ব পালন করে চলেন নিয়মিত। যদিও এটি ধর্মীর কাজ এবং পেশা হিসেবেও এই দায়িত্ব পালন করেন তারা।
ইমাম-মুয়াজ্জিনদের এ অভাবের চিত্র শহরের তুলনায় গ্রামে আরও প্রকট। শহরের ইমাম-মুয়াজ্জিনরা টিউশন করে অল্প কিছু টাকা পেলেও সেই টাকায় সংসার চালানো রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। শহরে ইমামদের সম্মানী ৬ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে। আর মুয়াজ্জিনের বেতন সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা। তবে তাদের এ সর্বোচ্চ সম্মানী দেয়া হয় খুব কমসংখ্যক মসজিদেই।
অনেকে হয়তো জানেন শহরের একজন নিরাপত্তারক্ষীর বেতনও ন্যূনতম ৮ হাজার টাকা। কোনো কোনো গ্রামের মসজিদে মৌসুমভিত্তিক ধান তুলে তাদের দেয়া হয়। কোনো কোনো গ্রামের মসজিদে মাসে ২০০ থেকে আড়াইশ টাকা বা বছরে ৪-৫ হাজার টাকা দেয়া দেয়া হয়।
তাদের পাঠ্য-জীবনের শুরু থেকেই মাদরাসা ও মসজিদসংশ্লিষ্ট কাজে সম্পৃক্ত থাকার পরিকল্পনা করেন। এক্ষেত্রে কম বা বেশি বেতন হলেও ‘পরকালীন সাফল্যের’ প্রত্যাশায় সম্মানী নিয়ে উচ্চবাচ্য বা দাবি-দাওয়া থেকে বিরত থাকেন।
এত গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিকে মুসলিম জাতি এবং সমাজ তাকে কীভাবে দেখা হয়? ইমামকে একটি মসজিদে নিয়োগ দেয়া ও তার বেতনের উৎস সুনির্দিষ্ট নেই। প্রতিনিয়ত গ্রামবাসী ও মুসল্লিদের কাছে হাত পাততে হয়, যেটি খুবই অনাকাক্সিক্ষত। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মসজিদও বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রচুর। মসজিদের শ্রেণিভেদে ইমাম নিয়োগ দেয়া হয়। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াতে হয় ইমামকে। সময় অনুযায়ী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াতে দৈনিক ইমাম সাহেবের প্রয়োজন হয় মাত্র আড়াই ঘণ্টা। দৈনিক এ আড়াই ঘণ্টা চাকরি করার জন্য ইমামদের নিয়োগ প্রক্রিয়াটি কীভাবে হয়ে থাকে?
তারাও মানুষ, তাদেরও পরিবার আছে, তারাও অসুস্থ হয়, তাদেরও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে মন চায়। ইমামদের কল্যাণের জন্য, তাদের পরিবারের জন্য বেতন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। দেশের ছোট-বড় সব মসজিদের তালিকা করে শ্রেণিভেদে ইমামদের বেতন কাঠামো তৈরি করা সময়ের দাবি। এতে ইমামদের সম্মান বৃদ্ধি পাবে, তারা চিন্তামুক্ত হবেন। তারা সম্মানিত হবেন। তাদের সংসারে শান্তি আসবে। মুসলিম সমাজ আধুনিক ও উন্নত হবে ইনশাআল্লাহ। বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে সব মসজিদ কমিটি ইমাম-মুয়াজ্জিনদের যৌক্তিক বেতন-ভাতা দেয়ার উদ্যোগ নেবে বলে প্রত্যাশা।
তারেক আল মুনতাছির
শিক্ষার্থী, বিজ্ঞান বিভাগ
ওমরগণি এমইএস কলেজ, চট্টগ্রাম