
নারায়ণগঞ্জ ক্রাইম নিউজ
আড়াইহাজারে সরকারি নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কয়েকটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এতে পরিবেশ বিপন্ন হলেও দেখার যেন কেউ নেই। মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও আইন মানছেন না অবৈধ মালিকরা। উপজেলা প্রশাসনের তালিকায় ইটভাটাগুলো বন্ধ থাকলেও বাস্তবে দেদারছে চলছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে হুমকির মুখে রয়েছে ওই এলাকার পরিবশ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোমবার নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কের মারুয়াদীতে অবস্থিত জিএন ব্রিক ফিল্ড নামে একটি ইটভাটা রয়েছে। একই সড়কের শিলমান্দী এলাকায় রয়েছে এএম ব্রিক ফিল্ড। মেঘনা বেষ্টিত কালাপাহাড়িয়ায় রয়েছে এএমবি এবং এসকেবি নামে আরো দুটি ইট ভাটা। এসব ইটভাটাগুলো কোন প্রকার পরিবেশের ছাড়পত্র নবায়ন না করেই তাদের মনগড়াভাবে চালাচ্ছে।
ইটভাটাগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের দিয়ে ইটা আনা নেওয়ার কাজ করানো হচ্ছে। পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফসলি জমি নষ্ট না করার ঘোষনার পরেও এসকল ভাটার মালিকরা ফসলি জমির মাটি কেটে তাদের ইটভাটায় ব্যবহার করছে। এতে করে পরিবেশ ক্রমেই ধ্বংশের দিকে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, নরসিংদী-মদনগঞ্জ সড়কে যেসকল ইটভাটা রয়েছে এগুলোর কোনটিরই সরকারী ভাবে অনুমোদন নেই। পরিবেশের কাগজপত্র নেই। তারপরও এরা আমাদের পরিবেশটাকে ধ্বংশ করছে। এদের জন্য আমাদের বাসাবাড়িতে বসবাস করাও দায় হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া ইটভাটাগুলোতে মাটি আনা নেয়ার কাজে ব্যবহৃত মাটি ভর্তি ট্টাক ও মাহেন্দ্র ট্রাক গুলো যাতায়াত করার ফলে ফসলী জমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
আব্দুল করিম নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, এখানকার ইট ভাটাগুলো প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠার কারণে ওরা নীরিহ কৃষকদের পাত্তাই দেয়না। কৃষকের ফসলি জমির মাটি কেটে দিব্যি নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। কেউ কিছু বললেই তার উপর নেমে আসে হামলা, মামলা আর বিভিন্ন প্রকারের হুমকি। এসকল ইটভাটার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও কোন ফল পাইনি আমরা।
করিমন্নেছা নামে এক নারী অভিযোগ করে বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন এই এলাকায় কোন ইটভাটা ছিলনা। বিভিন্ন গাছের ফল আমরা মনের আনন্দে খেতে পারতাম। এখন ইটভাটার কালো ধোয়ায় কোন আম গাছে আম ধরেনা। শুধু আমই নয় ভাটার কালো ধোয়ার আশেপাশে এলাকায় কোন প্রকার ফসল ও ফল হয় না।
শরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যাক্তি জানান, ইটভাটার কালো ধোয়ায় বেশীর ভাগ সময়ে আশপাশের এলাকার লোকেরা বিভিন্ন রোগ শোকে আক্রান্ত হয়। বেশীরভাগে ক্ষেত্রেই শিশুদের শ^াসকষ্ট ও বৃদ্ধরা নানামূখী সমস্যার সম্মুখিন হন। আমরা খুব শিগ্রই এসকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আড়াইহাজার উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে ইটভাটা গুলোকে বেশ কয়েকবার জারিমানা করা সহ সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। কিন্তু শান্তি প্রদানের কয়েকদিন পরই আবার অদৃশ্য হাতের ইশারায় ওই ভাটাগুলো চালু করে নেন অবৈধ ইটভাটা ব্যবসায়ীরা।
মারুয়াদীতে অবস্থিত জিএন ব্রিক ফিল্ডের মালিক জহিরুল ইসলাম জানান, আমার ব্রিক ফিল্ডের পরিবেশ ছাড়পত্রসহ সকল প্রকার বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। তবে তিনি প্রকৃত পক্ষে কোন কাগজপত্রই প্রদর্শণ করতে পারেননি। এএম ব্রিক ফিল্ড এর মালিক মাকসুদুর রহমান, এএমবি ব্রিক ফিল্ড এবং এসকেবি ব্রিক ফিল্ডের মালিক মনির হোসেন তাদের কোনটিরই সরকার অনুমোদিত কোন কাগজপত্র নেই বলে জানান।
কিভাবে অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু বাস্তবে গিয়ে দেখা যায় ওই ভাটায় দেদারছে ইট তৈরীর কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদ জানান, অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে একাধিকবার মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনসহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দুই একটি ইটভাটা বৈধ থাকলেও নিয়মনীতি মানছেন না তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় প্রতিদিনই আমরা অবৈধ ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকি। আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।